আমি কলকাতার যেখানে জন্মেছি, আমার জন্মানোর সময় সে জায়গাটিকে কেউ বলতেন উপকণ্ঠ, কেউ বা শহরতলি। আমি জানি না আসলে সেই জায়গাটি কী ছিল। শুধু জানি কলকাতার ডাক সেখানে এসে পৌঁছত, যে ভাবে হয়তো শ্রীরাধিকার কাছে শ্যামের বাঁশি এসে পৌঁছত। কলকাতা আমার কাছে একই সঙ্গে জাদু এবং বাস্তব।
আমাদের ছো়টবেলায় মফস্সল থেকে অনেক আত্মীয় আমাদের বাড়িতে আসতেন, থাকতেন। তাঁদের কাছে কলকাতা ছিল কালীক্ষেত্র। একান্ন সতীপীঠের একটি। আবার আমার অনেক বিদেশি বন্ধুর কাছে কলকাতা শুধুই পার্ক স্ট্রিট।
আমি পড়তাম সাউথ পয়েন্টে। স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বন্ধুরা মিলে এক এক দিন এক একটা রাস্তা ধরে হুল্লোড় করতে করতে ফিরতাম। সবচেয়ে বেশি ফেরা হত যে গলিটা দিয়ে, তার নাম জামির লেন। আর সেখানেই জাদুকর পি.সি সরকার জুনিয়রের বাড়ি ‘ইন্দ্রজাল’। সেই ইন্দ্রজাল বাড়ির বাইরে থেকে ভিতরটা দেখার চেষ্টা করতাম। দেখতে পেতামও। কলকাতা শহরও যেন সে রকম একটা ম্যাজিক। যার বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরটা দেখা যায়। উত্তর কলকাতার অলি-গলিতে, দক্ষিণের চওড়া রাস্তায়, উল্টোডাঙার ফুট ব্রিজে, পার্ক সার্কাস কিংবা হাজরার হোটেলে কলকাতার সেই বৈচিত্র আমাকে এক বার, বার বার টেনেছে। আমি যে কোনও প্রেমের ভিতরে টের পেয়েছি কলকাতার স্পর্শ। যে কোনও নিঃসঙ্গতায় কলকাতা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।