Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

Binayak Bandyopadhyay: জোড়াসাঁকোতে যত বার কবিতা পড়তে গিয়েছি, মনে হয়েছে গোটা বাড়িটা যেন ‘রবিনসন ক্রুসো’!

উত্তর কলকাতার অলি-গলিতে, দক্ষিণের চওড়া রাস্তায়, উল্টোডাঙার ফুট ব্রিজ বা হাজরার হোটেলে কলকাতার সেই বৈচিত্র আমাকে বার বার টেনেছে।

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:০৯

আমি যেকোনও প্রেমের ভিতরে টের পেয়েছি কলকাতার স্পর্শ।

আমি কলকাতার যেখানে জন্মেছি, আমার জন্মানোর সময় সে জায়গাটিকে কেউ বলতেন উপকণ্ঠ, কেউ বা শহরতলি। আমি জানি না আসলে সেই জায়গাটি কী ছিল। শুধু জানি কলকাতার ডাক সেখানে এসে পৌঁছত, যে ভাবে হয়তো শ্রীরাধিকার কাছে শ্যামের বাঁশি এসে পৌঁছত। কলকাতা আমার কাছে একই সঙ্গে জাদু এবং বাস্তব।

আমাদের ছো়টবেলায় মফস্‌সল থেকে অনেক আত্মীয় আমাদের বাড়িতে আসতেন, থাকতেন। তাঁদের কাছে কলকাতা ছিল কালীক্ষেত্র। একান্ন সতীপীঠের একটি। আবার আমার অনেক বিদেশি বন্ধুর কাছে কলকাতা শুধুই পার্ক স্ট্রিট।

আমি পড়তাম সাউথ পয়েন্টে। স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বন্ধুরা মিলে এক এক দিন এক একটা রাস্তা ধরে হুল্লোড় করতে করতে ফিরতাম। সবচেয়ে বেশি ফেরা হত যে গলিটা দিয়ে, তার নাম জামির লেন। আর সেখানেই জাদুকর পি.সি সরকার জুনিয়রের বাড়ি ‘ইন্দ্রজাল’। সেই ইন্দ্রজাল বাড়ির বাইরে থেকে ভিতরটা দেখার চেষ্টা করতাম। দেখতে পেতামও। কলকাতা শহরও যেন সে রকম একটা ম্যাজিক। যার বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরটা দেখা যায়। উত্তর কলকাতার অলি-গলিতে, দক্ষিণের চওড়া রাস্তায়, উল্টোডাঙার ফুট ব্রিজে, পার্ক সার্কাস কিংবা হাজরার হোটেলে কলকাতার সেই বৈচিত্র আমাকে এক বার, বার বার টেনেছে। আমি যে কোনও প্রেমের ভিতরে টের পেয়েছি কলকাতার স্পর্শ। যে কোনও নিঃসঙ্গতায় কলকাতা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement
 আমি সেই বাংলাকে খুঁজে পেয়েছি ময়দানের ঘাসে।

আমি সেই বাংলাকে খুঁজে পেয়েছি ময়দানের ঘাসে।
ছবি: সংগৃহীত


জোড়াসাঁকোতে যত বারই কবিতা পড়তে গিয়েছি, আশেপাশের আবহাওয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছে গোটা বাড়িটাই যেন ‘রবিনসন ক্রুসো’। যে গোটা একটি সমুদ্রের সঙ্গে একা লড়ে নিতে পারে।

কলকাতার দুর্গাপুজোর ঢলের ভিতরে ৩০০ মিটার হেঁটে এগোতে এগোতে আমার মনে হয়েছে পুজোর মজা আলোকসজ্জা কিংবা প্যান্ডেলে ততটা নয়,যতটা জনস্রোতে। আর সে জনস্রোত কেবল কলকাতার ভিতর থেকেই কলকাতায় আছড়ে পড়ে না। সে জনস্রোত সারা বাংলা থেকে কলকাতায় আসে। কলকাতা আমার কাছে কোথাও একটা সারা বাংলার মুখপাত্র। কলকাতার ভিতর দিয়ে কথা বলে ওঠে গোটা বাংলা। আমি সেই বাংলাকে খুঁজে পেয়েছি ময়দানের ঘাসে। আমি সেই বাংলাকে খুঁজে পেয়েছি পাড়ার চৌমাথার বট-অশ্বত্থ গাছে। আমি সেই বাংলাকে খুঁজে পেয়েছি সাধারণ কোনও পাইস হোটেলে যেখানে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পাশাপাশি বসে খেতে পারে।

নিউ ইয়র্ক থেকে সানফ্রান্সিসকো, দিল্লি থেকে মুম্বই— অনেক শহরের অনেক রূপ আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু ভালবাসা থাকলে যেমন রূপটানের প্রয়োজন হয় না। কলকাতারও তেমনই রূপটানের দরকার পড়ে না।

কলকাতার আসলে নির্দিষ্ট কোনও ঠিকানা নেই। কলকাতা আমার কাছে এই ডার্মাটক্সিক, নিউরোটক্সিক, কার্ডিয়োটক্সিক আবহাওয়ার ভিতরে সেই স্বতঃসারিত ভালবাসা। সেই চোখের জল। যাকে পৃথিবীর কোনও মালিন্য স্পর্শ করতে পারে না। কলকাতা অট্টালিকার স্পর্ধা নিয়ে নয়। কলকাতা আমার অন্তরে জেগে থাকে সেই শব্দের মতো যা যে কোনও শূ্ন্যস্থান ভরিয়ে দেওয়ার সাহস রাখে।

Advertisement