সন্দেশখালির সেই ভাইরাল ভিডিয়ো। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
সন্দেশখালিতে ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ সাজানো? গোপন ক্যামেরায় তোলা ভিডিয়োতে স্থানীয় এক বিজেপি নেতাকে এমন কথাই বলতে শোনা যাচ্ছে। ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। প্রকাশিত ভিডিয়োয় শোনা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি স্বীকার করে নিচ্ছেন, ধর্ষণ-সহ বিভিন্ন অভিযোগ সাজানো হয়েছে পরিকল্পনা মাফিক। ভিডিয়োতে তাঁকে সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিজেপির ‘মণ্ডল সভাপতি’ গঙ্গাধর কয়াল বলে পরিচিত করানো হয়েছে।
সন্দেশখালিতে গোপন ক্যামেরা অভিযানের মাধ্যমে এই ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভিডিয়োতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, সেই গঙ্গাধরের বাড়ি সন্দেশখালির সিংপাড়া এলাকায়। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তিনি মণ্ডল সভাপতি নন। কেবল তাঁদের দলের সমর্থক। তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন বলেও দাবি করেছেন বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বিবেক রায়। তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও ওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। বছর খানেক আগে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের লোকজনের হাতে মারধরও খায়।’’
রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারি প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োটি নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল সব কিছুতেই সাজানো ঘটনা দেখে। সন্দেশখালির মহিলারা এসে কোর্টে তাঁদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। রেখা পাত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে শিবু সর্দারের বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারা দেওয়া হয়েছে। সন্দেশখালির ঘটনাকে কোনও ভাবেই তৃণমূল আড়াল করতে পারবে না।’’
এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ভিডিয়োটি আমি দেখিনি। কার গলা খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলব।’’
আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে সেই গঙ্গাধরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ রয়েছে। বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁর পিএ ফোন ধরে জানান, তিনি নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। ভাইরাল ভিডিয়োর কথা বললে ‘কিছু বলতে পারব না’ বলে ফোন কেটে দেওয়া হয়। আর ফোন ধরেননি।
‘কী আছে ভাইরাল ভিডিয়োটিতে?
দেখা যাচ্ছে, গঙ্গাধর একটি ঘরে চেয়ারে বসে আছেন। কেউ বা কারা তাঁকে সন্দেশখালির ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন করে চলেছেন। তিনি আড্ডার ছলে প্রশ্নকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন। বার বার উঠে আসছে শুভেন্দুর নাম। গঙ্গাধর বলছেন, ‘‘এই আন্দোলন এত দিন টিকে আছে কেন? তিনটে ছেলে এ দিক-ও দিক যাচ্ছে, গোটা বিষয়টি পরিচালনা করছে। শুভেন্দুর আমাদের উপরে আস্থা আছে। শুভেন্দু এক বার ঘুরে গিয়েছে, তাতেই আন্দোলন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’ ভিডিয়োতে তাঁকে স্বীকার করতে শোনা গিয়েছে, শুভেন্দু টাকা এবং মোবাইল ফোন দিয়ে গিয়েছেন তাঁদের। কারণ, এই ধরনের কাজ খালি হাতে হয় না।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, প্রশ্নকর্তা গঙ্গাধরকে বলছেন, ‘‘দাদা, তোমরা কী লেভেলের কাজ করেছ, বুঝতে পারছ? ধর্ষণ হয় নাই, তাকে ধর্ষণ বলে চালিয়েছ! তোমার বাড়ির বৌকে দিয়ে এই কাজ করাতে পারতে? আমরা তো পারব না।’’ এই প্রশ্ন শুনে সম্মতিসূচক হাসি হেসেছেন গঙ্গাধর।
‘‘কী ভাবে ওদের ‘ব্রেনওয়াশ’ করালেন?’’ উত্তরে গঙ্গাধর বলেন, ‘‘শুভেন্দুদার নির্দেশেই আমরা এই কাজ করেছি। উনি আমাদের সাহায্য করেছেন। শুভেন্দুদা বলেছেন, এটা না করলে, তাবড় তাবড় লোককে গ্রেফতার করানো যাবে না। আমরাও ওখানে দাঁড়াতে পারব না।’’
ভিডিয়োতে গঙ্গাধরকে শুভঙ্কর গিরি নামের এক জনের নাম নিতে শোনা যায়। বলেন, ‘‘শুভঙ্কর ছেলেটা ভাল ছিল। কিন্তু টাকার গোলমালের জন্য ও পরে হঠে গেল।’’ শুভেন্দুর পিএ পীযূষও সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন গঙ্গাধর। জানান, শুভঙ্করই গ্রামবাসীদের ‘ব্রেনওয়াশ’ করেছিলেন।
অসত্য ধর্ষণের অভিযোগ লেখাতে কী ভাবে রাজি হলেন মহিলারা? গঙ্গাধর বলেন, ‘‘আমরা যা বলেছি, ওরা শুনেছে। কেউ না করেনি। ওদের বলেছিলাম, যদি আপনারা অভিযোগ না লেখান, তা হলে আপনাদের এই আন্দোলন সফল হবে না। এখানে আপনাদের টিকতেও দেবে না।’’ রেখা প্রথমে অভিযোগ দায়ের করার পরে তাঁকে দেখে বাকিরাও সাহস পান বলে জানিয়েছেন গঙ্গাধর।
সন্দেশখালির আন্দোলন শুরুর পর সেখানে বিভিন্ন কমিশন গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছিল। তখন আন্দোলনকারী মহিলারা কেউ কেউ ভয় পেয়ে যান বলে জানান গঙ্গাধর। জবা সিংহ নামে এক মহিলার কথা এ ক্ষেত্রে বলেছেন তিনি। জানান, এসটি কমিশনার তাঁর সঙ্গে কী হয়েছে বিশদে জিজ্ঞাসা করলে জবা কোনও কথা বলতে পারেননি। কারণ, তিনি ‘ঘাবড়ে’ গিয়েছিলেন। গঙ্গাধর এ-ও জানান, জবাকে ‘ট্রেনিং’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা নিতে পারেননি। জবা তিন জনের নাম নিয়েছিলেন নিজের অভিযোগে, তাঁরা হলেন শাহজাহান শেখ, উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরা।
ভিডিয়োয় গঙ্গাধর দাবি করেছেন, তিনি এবং শান্তনু নামে এক জন মিলে সন্দেশখালির সম্পূর্ণ আন্দোলন ধরে রেখেছেন। জবার পরে আরও এক মিথ্যা অভিযোগকারিণীর নাম নেন গঙ্গাধর। বলেন, ‘‘বীণা নামের এক জন ছিল। সে-ও অভিযোগ দায়ের করেছিল।’’
ভিডিয়োটি ঘিরে ইতিমধ্যে শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। মাঠে নেমে পড়েছে তৃণমূল। সন্দেশখালিকাণ্ডে লোকসভা ভোটের আগে মুখ পুড়েছিল শাসকদলের। এই ভিডিয়োটি দেখিয়ে একের পর এক পোস্ট করতে শুরু করেছেন তৃণমূলের নেতারা। সন্দেশখালির ঘটনাকে ‘সাজানো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy