প্রতীক জৈন। — নিজস্ব চিত্র।
‘পিকে’র চেয়ারে ‘পিজে’— নামের আদ্যক্ষরে এই সামান্য মিল। তবে হাবভাব, স্বভাবে অমিলই বেশি। বয়সের ফারাক বছর বারোর। পূর্বসূরি শুনতেন কম, নতুন জন বলেন কম। এক জন প্রচারে ছিলেন পুরোদস্তুর আর অন্য জন ক্যামেরা দেখলেই হাসিমুখে পিঠটান দেন যে কোনও ভিড়ে।
ভোটযুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন আর বর্তমান দুই পরামর্শদাতার ফারাক আরও অনেক। তবে প্রশান্ত কিশোরের ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে বসে প্রতীক জৈন যে দলের দায়িত্ব নিয়েছেন, তার সামনে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার তফাতই সব থেকে বেশি। একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ অনেক বেশি জটিল করেছে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়া তৃণমূলকে লড়াইয়ে ফেরানোর থেকে ২০২৪ সালে দলের অবস্থান ধরে রাখাই যে বেশি কঠিন, তা বুঝছেন আইআইটি মুম্বইয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কৃতী প্রতীক। পিকে’র সঙ্গী হিসেবে গুজরাত, পঞ্জাব, বিহারের ভোট সামলে আসা প্রতীক নিজেই এখন তাঁর দলের নেতৃত্বে।
পরামর্শদাতা সংস্থা তৃণমূলের দায়িত্ব নেওয়ার পর বরাবরই সামনে থেকেছেন প্রশান্ত। সংবাদমাধ্যম হোক বা দলের অন্দরে, তিনিই বলছেন ভোটের লড়াইয়ে তৃণমূলের করণীয় কী। তবে তাঁর এই পরামর্শমালা তৈরির নেপথ্যে থেকে গোটা ‘টিম’-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন প্রতীক। এত দিন সামনে প্রশান্ত থাকলেও এই প্রথম এ রাজ্যে বড় নির্বাচনে তৃণমূলের তরী পেরোনোর গোটা দায়িত্ব পিজে’রই। পেশাদার হিসেবে গত পাঁচ বছরে বাংলায় রাজনৈতিক সমীক্ষা আর বিশ্লেষণের কাজে রাঁচির ছেলে প্রতীক এখন অনেকটাই বাঙালি হয়ে উঠেছেন। শুধু তাই নয়, ক্রমে এ রাজ্যের রাজনীতি সম্পর্কে নিজের ধারণার অনেকখানি বদলে ফেলেছেন তিনি। মৃদুভাষী প্রতীকের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সংস্থার একটি শাখার প্রধান বলেন, ‘‘ওঁর মতে, এখানে রাজনীতিতে অনেক রকম উপাদান। এবং তাতে পুরনো ধারার অনেক চেনা কৌশলই বদল করছেন তিনি।’’
আবার সংস্থার এক কর্মীর কথায়, ‘‘পিকে’র কাজের সঙ্গে পিজে’র স্টাইলের ফারাক তো আছেই। দু’জনের দুই রকম ঘরানা। সামাজিক পরিস্থিতি ও সে সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণে প্রতীক অনেক বেশি স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট। পিকে নির্দেশ দিতেন। পিজে আলোচনা করেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রতীক তো জনসংযোগ কর্মসূচিতে রাস্তায় চেয়ারও সরিয়েছেন।’’
ভোটের সময় ১৪-১৬ ঘণ্টা অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে কাটছে প্রতীকের। ভর দুপুরে কালো কফিই লাঞ্চ নিরামিষাশী প্রতীকের। এই পরামর্শদাতা সংস্থার অন্যতম স্থপতি তরুণ সহকর্মীদের বলছেন, আসন বাড়াতে হবে। কিন্তু কোথায়? সংস্থার এক কর্মীর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক দিক থেকে এ রাজ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ দু-তিনটি আসনে তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। নিজেদের আসন রেখে আরও কিছু আসনে ভোট বাড়াতে পারলেই তা ২০২১ সালের সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করা যাবে।’’
২০১৪ সালে প্রশান্তের সঙ্গেই গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর প্রচারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ৩৫ বছরের প্রতীক এখন রাজ্যে মোদী-বিরোধী কৌশল সাজাচ্ছেন তৃণমূলের জন্য। এ বার ঠিক কী পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূলকে? সংস্থার এক পদস্থ কর্মীর কথায়, ‘‘এক জন গোল করবেন, এক জন রক্ষণ সামলাবেন।’’ টিম-পিজে’র পরামর্শ মতো মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় ২০০ সভার কর্মসূচি সে ভাবেই সাজিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু ভোট চলাকালীন শিক্ষক নিয়োগ মামলার নজিরবিহীন রায়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে নিশ্চয় এ বার রাতই জাগতে হবে শাসকের পরামর্শদাতা সংস্থার প্রধানকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy