ব্রিগেডের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
প্রবীণে ভরসা আছে। ভরসা নবীনের ‘অভিষেক’ও। জনজাতিভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব মজুত। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং বহু দিনের ‘প্রথা’ থেকে সরে আসার চেষ্টাও এ বার চোখে পড়ার মতো। রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ থেকে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দলের উত্তরবঙ্গের প্রার্থিতালিকা দেখে এমনই অভিমত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
উত্তরবঙ্গের আট জেলার আট আসনে গত লোকসভায় তৃণমূল খাতা খুলতে পারেনি। বিজেপি জেতে সাত আসনে, কংগ্রেস একটিতে। বিজেপির পুরো প্রার্থী তালিকা সামনে না আসায় কার্যত এক ধাপ এগিয়ে এ দিন থেকে মাঠে নেমে পড়ল তৃণমূল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, উত্তর মালদহ থেকে রায়গঞ্জ, কোচবিহার বা জলপাইগুড়ি— প্রতি জেলায় শাসক দলের অন্দরে টিকিট নিয়ে ‘দ্বন্দ্ব’ শুরু হয়েছিল। মালদহ উত্তর আসনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে গনি খান চৌধুরীর পরিবারের মৌসম নুর এবং দলের বর্তমান জেলা সভাপতি তথা মালতিপুরের বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সীও ছিলেন। এ বার গনি খানের বাড়ি তথা কোতোয়ালির উপরে রাজনৈতিক নির্ভরশীলতার জায়গা থেকে সরে এসেছে তৃণমূল। দক্ষিণ মালদহে তাদের প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হান ইতিহাস নিয়ে বর্তমানে অক্সফোর্ডে গবেষণা করছেন। মালদহ উত্তরে তৃণমূলের প্রার্থী সদ্য স্বেচ্ছা অবসর নেওয়া পুলিশ অফিসার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।
চা-বলয় প্রধান আলিপুরদুয়ারে বাগান শ্রমিকদের ভোট বড় ভূমিকা নেয়। কার্যত সেই ভোটে ভর করে গত বার প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে জেতেন বিজেপির জন বার্লা। এ বার বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেনি। সেখানে মনোজ টিগ্গাকে প্রার্থী করতেই ‘বেসুরো’ হয়েছিলেন বর্তমান সাংসদ বার্লা। যদিও শনিবার শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় বার্লাকে মঞ্চে দেখা যায়। এর পরে দেরি না করে ছ’মাস আগে রাজ্যসভায় পাঠানো প্রকাশ চিক বরাইককে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। চা বলয়ে পরিচিত মুখ প্রকাশ দলের জেলা সভাপতিও।
রাজবংশী নেতা তথা সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া কোচবিহারে দলের প্রার্থী। জগদীশের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। তিনি দু’বারের বিধায়ক, এক বার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তার আগে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। তাঁর আর এক ‘প্লাস পয়েন্ট’, কোচবিহারে দলের অন্দরে কোনও শিবিরের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ নেই। জলপাইগুড়ির প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় ধূপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে সদ্য হারিয়েছেন বিজেপিকে। কলেজ শিক্ষক নির্মল ‘রাজবংশী তাত্ত্বিক’ বলে পরিচিত। তিনিও দলের কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত নন।
উত্তর দিনাজপুরে দলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের সঙ্গে প্রবীণ নেতা আব্দুল করিম চৌধুরীর গোষ্ঠীর ‘দ্বন্দ্ব’ নিয়মিত খবরের শিরোনামে থেকেছে। সেখানে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীকে প্রার্থী করেছে রাজ্যের শাসক দল। গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন কৃষ্ণ। পরে, শাসক দলে চলে যান। কয়েক মাস আগে, রায়গঞ্জে কৃষ্ণের বাড়ি ও অফিসে আয়কর দফতরের তল্লাশি হয়। সূত্রের দাবি, তার আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কৃষ্ণকে তৃণমূল প্রার্থী করার পরে রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচন হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের শাসক দলের ‘গোষ্ঠীকোন্দলের’ জন্য আগে বহিরাগতদের নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে ফল ভাল হয়নি। এ বার ভূমিপুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রকে বাছাই করা হয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে লোকসভায় লড়ার জন্য।
দার্জিলিঙের দাবি ছিল, গোর্খা ভূমিপুত্র। সেখানে প্রাক্তন আমলা গোপাল লামাকে টিকিট দেওয়া হল। তিনি মহকুমাশাসক (শিলিগুড়ি), দার্জিলিঙের অতিরিক্ত জেলাশাসক ছাড়াও, পর্যটন দফতর এবং ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-তে উচ্চ পদে কাজ করার সুবাদে জেলায় যথেষ্ট পরিচিত নাম।
উত্তরে দলের ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। বললেন, “রাজবংশী থেকে গোর্খা ভূমিপুত্র, অবাঙালি থেকে প্রাক্তন পুলিশকর্তা—সকলকেই প্রার্থী করা হয়েছে। বিরোধীদের ধরাশায়ী করে উত্তরে এ বার তৃণমূলের বিজয় পতাকা উড়বে।” যদিও বিরোধীদের পাল্টা দাবি, কে প্রার্থী হচ্ছেন, সেটা বড় কথা নয়, তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধেই ভোট দেবেন সাধারণ মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy