গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের শুরু— প্রায় দেড় মাস ধরে সাত দফায় ভোট হবে বাংলায়। নির্বাচন কমিশন ভোটের এই নির্ঘণ্ট শনিবার ঘোষণা করার পরেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল। বাংলার শাসকদলের অভিযোগ, প্রতি বারের মতো এ বারও বাংলায় সাত দফায় ভোট ঘোষণা করা হল। যেখানে দেশের অনেক বড় বড় রাজ্যে ভোট হবে এক কিংবা দু’দফায়!
দেশ জুড়ে লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তার আধ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলের তরফে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। সেই বৈঠকেই বাংলার ভোট নির্ঘণ্ট নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা বার বার বলেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই নির্বাচন একটি বা দু’টি দফায় হোক। কিন্তু দেখলাম আগের মতোই ৭ দফায় নির্বাচন ঘোষণা করা হল পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে। যেখানে দেশেরই অনেক বড় বড় রাজ্যে এক বা দু’দফায় ভোট মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, বাংলার থেকে মাত্র তিনটি লোকসভার আসন কম তামিলনাড়ুতে। সেখানে এক দফাতেই ভোট ঘোষণা করেছে কমিশন। আবার ২৫টি আসনের অন্ধ্রপ্রদেশ, ২৬ আসনের গুজরাতেও ভোট হবে এক দফায়। ২৮টি আসনের কর্নাটক এবং ২৫টি লোকসভা আসনের রাজস্থানে দু’দফায় ভোট হবে বলে শনিবার জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আবার ৪৮ আসনের মহারাষ্ট্রেও ভোট হবে পাঁচ দফায়। অথচ ৪২ আসনের বাংলায় সাত দফায় ভোট। শনিবার তৃণমূলের সাংবাদিক বৈঠকে এ প্রসঙ্গেই কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের মন্ত্রী চন্দ্রিমা।
শনিবার তৃণমূলের তরফে চন্দ্রিমাই হাজির হয়েছিলেন ভোট নির্ঘণ্ট নিয়ে শাসকদলের বক্তব্য জানাতে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘২০১৯ সালেও সাত দফায় ভোট হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। ২০২১ সালের বিধানসভায় ভোট হয়েছিল আট দফায়। কিন্তু সে বার বলা হয়েছিল, কোভিডের জন্য দফা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বার তো কোভিড নেই। এ বার তা হলে কী হয়েছে? এ বার কেন সাত দফায় ভোট করানো হল?’’
আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে লোকসভা ভোট শুরু হচ্ছে দেশে। চলবে ১ জুন পর্যন্ত। এই দীর্ঘ দেড় মাস বা আরও বিশদে বললে ৪৪ দিন ধরে সাত দফায় ভোট পর্ব চলবে বাংলায়। তৃণমূলের বক্তব্য এই নির্ঘণ্ট যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর বিরোধী। চন্দ্রিমা কথায়, ‘‘এত দফায় নির্বাচন হলে ভোট কম পড়ে। এর আগেও ২০১৯ সালে সাত দফায় ভোট হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। সে বারও দেখা গিয়েছিল ভোট কমেছে। তারও আগে ২০১৪ সালে ন’দফায় ভোট হয়েছিল বাংলায়।’’ চন্দ্রিমা বলেছেন, ‘‘এতে ভোটারদের অসুবিধা হয় আর সুবিধা পায় অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক দলগুলি।’’
এই ভোট নির্ঘণ্ট অর্থবান দলগুলিকে সুবিধা করে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন চন্দ্রিমা। তাঁর কথায়, ‘‘অর্থবান দলগুলি তাদের টাকা কাজে লাগিয়ে ভোটের ফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাদের পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। অন্য দিকে, অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পিছিয়ে পড়ে।’’ সম্প্রতিই চণ্ডীগড়ের পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি বনাম আপের লড়াইয়ে ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। পরে সুপ্রিম কোর্টে হস্তক্ষেপে আপের হেরে যাওয়া প্রার্থী আবার জয়ী হন। শনিবার সে রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতার অপপ্রয়োগ প্রসঙ্গে সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, ‘‘চণ্ডীগড়ে কী ভাবে ভোট লুট করা হয়েছে দেখেছেন তো! সুপ্রিম কোর্টও মানতে বাধ্য হয়েছে। এ ভাবেই ক্ষমতাকে কাজে লাগানো হয়।’’
শনিবার দেশের নির্বাচন কমিশনারের মনোনয়ন প্রসঙ্গেও কেন্দ্রকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। চন্দ্রিমা বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার যা করছে তাকে যদি ক্রিকেট মাঠের ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় তবে বলতে হয়, ম্যাচ খেলতে নামবে যে ক্রিকেট দল, তাদেরই ক্যাপ্টেন ঠিক করে দিচ্ছেন আম্পায়ার কে হবেন। নির্বাচন কমিশনের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি, একে কি পক্ষপাতহীন নির্বাচন বলা যায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy