—প্রতীকী চিত্র।
পুরভোটে পুরুলিয়া পুরসভায় তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে কেন ফল উল্টো হচ্ছে? এই রহস্যে উদ্বেগ কাটছে না শাসকদলের। সম্প্রতি শহরে কর্মিসভাতেও এ নিয়ে সতর্ক করেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
২০১১ সালে জেলায় সব চেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে (২৫ হাজারেরও বেশি) পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল। তারপরের ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে ওই কেন্দ্র কংগ্রেসের কাছে হারায় তৃণমূল। ২০২১ সালের ভোটে পুরুলিয়া কেন্দ্রে জয়ী হয় বিজেপি।
অথচ ২০১৫ সালের পুরভোটে পুরুলিয়া শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডেই জয়ী হয় তৃণমূল। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের আরও তিন পুরপ্রতিনিধি তৃণমূলে যোগ দেন।অথচ ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই শহরে কংগ্রেস এগিয়ে যায় ১২টি ওয়ার্ডে, তৃণমূল এগিয়ে থাকে ১১টি ওয়ার্ডে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের কাছে ধরাশায়ী হতে হয়েছিল তৃণমূলকে। সে বার শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে যায় বিজেপি। ৩টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকে তৃণমূল। শহরে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৪৫ হাজারের বেশি, তৃণমূল পেয়েছিল ২১ হাজারের কিছু বেশি ভোট।
একুশের বিধানসভা ভোটে ছবিটা সামান্য রদবদল হলেও বিস্তর কিছু ফারাক হয়নি। কিছুটা কমে বিজেপির ভোট দাঁড়ায় ৩৭,২৮২ এবং তৃণমূল পায় ২৯,২০১টি। বাম-কংগ্রেস জোটের কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ৯,০৪৬টি ভোট। সে বার ২৩টি মধ্যে ১৮টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি, ৫টিতে তৃণমূল। এই বিধানসভার গ্রামীণ এলাকায় (পুরুলিয়া ২ ও ১ ব্লক) তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও শহরের ভোটেই বাজিমাত করে বিজেপি। ভোটের পর দলীয় অন্তর্তদন্তে নাশকতার তত্ত্ব উঠে এসেছিল।
অথচ বছর ঘুরতেই ছবিটা বদলে যায় ২০২২ সালের পুরভোটে। ২৩টি আসনের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় তৃণমূল। দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, ২০১০ সাল থেকে পুরুলিয়া পুরসভায় টানা ক্ষমতায় থাকলেও পুরভোট ও লোকসভা, বিধানসভার ভোটে ফলের তারতম্য ঘটছে কী ভাবে? তাহলে পুরভোটে নিজেদের ভোটব্যাক্স ভরাতে প্রার্থী ও কর্মীরা যে ভাবে সক্রিয় হন, অন্য বড় ভোটে ততটা হন না?
১৬ মার্চ পুরুলিয়ায় এক কর্মিসভায় পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি সরাসরি অভিযোগ করেন, ‘‘দিনে তৃণমূল আর রাতে পদ্মফুল— এটা চলবে না।’’ গত পুরভোটে নিজের ওয়ার্ডে ভোটে লড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি দলের একাংশের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগে সরব হন।
সূত্রের দাবি, সম্প্রতি শহরে দলীয় কর্মিসভাতেও বিষয়টি ওঠে। তাতে পরিবেশ কিছুটা তেতে ওঠে। সভা চলার মধ্যেই কেউ কেউ বেরিয়ে যান। বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে দলের একটি সূত্রের দাবি। তৃণমূলের পুরুলিয়া লোকসভার নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
তবে সম্প্রতি শহর তৃণমূলের একাংশকে প্রচারে দেখা যাচ্ছে। অনেকে নিজেদের উদ্যোগে দেওয়াল লিখে দলের সমাজ মাধ্যমের গ্রুপেও সে ছবি পোস্ট করছেন।
দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া স্পষ্ট করে দেন, ‘‘বিভিন্ন ভোটের ফল পর্যালোচনায় এটা উঠে এসেছে যে গত দু’টি পুরভোটে দল শহরে যে সাফল্য পেয়েছে, সেই তুলনায় লোকসভা বা বিধানসভায় সাফল্য আসেনি। সাংগঠনিক ভাবেই বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে গত পুরভোটের ফল অনুযায়ী বিজেপির চেয়ে আমরা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছি। এ বারে আমরা পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে লিড পাব। লোকসভাও জিতব।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা অবশ্য বলছেন, ‘‘শুধু পুরুলিয়া শহর নয়, গ্রামীণ এলাকা নিয়েও এই বিধানসভা কেন্দ্র। গত পঞ্চায়েত ভোটে কী ভাবে কারচুপি হয়েছে, মানুষ তা জানেন। ভোটারদের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন ঘটেনি। মানুষ এই ভোটে তার জবাব দেবেন।’’ আর কংগ্রেসের বক্তব্য, বিজেপির শাসনে দেশের সংবিধান বিপন্ন এবং রাজ্যে তৃণমূলের দুর্নীতি দেখে মানুষ তৃতীয় বিকল্প চাইছেন। যা কংগ্রেসই দেশকে দিতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy