তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। —ফাইল চিত্র।
কোনও দিনই সঙ্গে ব্যাগ রাখেন না তিনি। তবে পকেট আছে হাফ হাতা পাঞ্জাবিতে। দলের একাংশের রসিকতা, দু’টি পকেটের একটিতে সুচ আর একটিতে সুতো নিয়ে ঘুরছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী!
সুচ-সুতো হয়তো সত্যিই নেই। তবে এ বারের লোকসভা ভোটে কিছুটা পিছনে সরে থাকা প্রবীণ নেতার এই পরিচিতিই দলে মুখে মুখে ফিরছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় সংগঠনে ছেঁড়া-ফাটা অংশে ‘রিফু’ করে বেড়াচ্ছেন তিনি। কখনও পশ্চিম মেদিনীপুর, কখনও উত্তর ২৪ পরগনা আবার কখনও বর্ধমান, কখনও হুগলি। স্থানীয় স্তরে দলের নেতাদের বিবাদ মিটিয়ে দলের সবাইকে ‘জোড়াফুলে’র পক্ষে রাখার কাজে ঘুরছেন বক্সী।
তৃণমূলের নির্বাচন পরিচালনা এ বার পুরোপুরি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণে। উপদেষ্টা সংস্থা ভাড়া করে ভোটের পরামর্শ কেনার রেওয়াজ তৃণমূলে চালু হওয়ার আগে বক্সী, মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরাই থাকতেন নির্বাচন দেখভালের দায়িত্বে। পার্থ এখন জেলে, অসুস্থ মুকুল ঘরবন্দি। দলের রাজ্য সভাপতি বক্সী রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় কিন্তু দ্বিতীয় আর তৃতীয় দফায় দলের তারকা প্রচারকের তালিকায় তিনিও নেই। নবীন-প্রবীণ টানাপড়েনের ফলেই কি তারকা তালিকায় এই ‘বদল’ এনেছে তৃণমূল? দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বক্সী কোথায়? তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “বক্সীদা বরাবরই প্রচারমাধ্যম থেকে সরে থাকেন। এ বারেও তা-ই। তবে এ বারের ভোটে একটা আলাদা কাজ করতে দেখছি। স্থানীয় স্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতেই বেশি সময় দিচ্ছেন তিনি।”
বিজেপির দখলে থাকা মেদিনীপুর আসনে বক্সী গিয়েছিলেন স্থানীয় বিবাদ মেটাতে। দলের একাধিক গোষ্ঠীকে অন্তত ভোট পর্যন্ত এক জায়গায় রাখার দায়িত্ব তাঁকেই দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। দলের আর এক নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক ভাবে সেই ‘ঐক্য সূত্র’ ঠিক করে বক্সী ফিরে এসেছেন। জেলার এক নেতার কথায়, ‘‘কিছু পুরনো নেতা ভোটের কাজ থেকে সরে ছিলেন। তাঁদের বক্সীদা চেনেন। হেঁকে-ডেকে জুড়ে দিতে চেয়েছেন দলীয় প্রার্থীর প্রচারে।’’
তার পরে গিয়েছেন বনগাঁ আর আরামবাগে। বনগাঁয় এ বার লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী বিজেপি থেকে আসা বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। লোকসভা আসনের ৭টি বিধানসভার মধ্যে একমাত্র স্বরূপনগর ছাড়া ৬টিই বিজেপির দখলে। এখানে দলের পুরনোদের কাছে বসিয়ে ফাঁকফোকর বোজানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। হাতে থাকা আরামবাগেও এ বার বাড়তি চাপে তৃণমূল। প্রার্থী বদলের পাশাপাশি সংগঠনেও নানা রোগ সেখানে। সে সব প্রাথমিক ভাবে সামাল দিয়ে এসেছেন মমতার কথায়।
দখলে থাকা আসানসোল আসনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দুশ্চিন্তা মাস কয়েক আগেই পৌঁছে গিয়েছে দলের শীর্ষে। সেখানেও সেই ‘সুচ’ আর ‘সুতো’ নিয়ে হাজির বক্সী। দলের আর এক নেতা আশিস চক্রবর্তীকে রেখে এসেছেন কালীঘাটের চোখ-কান হিসেবে।
পুরসভা বা উপনির্বাচন বাদ দিলে এই রকম বড় নির্বাচনে বরাবর বক্সীর মতোই সক্রিয় থাকতেন প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দলের মধ্যে ‘কৃশানু-বিকাশ’ হিসেবে পরিচিত সেই জুটিও ভেঙে গিয়েছে বহু দিন। শিক্ষক-নিয়োগ মামলায় ধৃত পার্থ প্রায় দু’বছর জেলে। ভোটের মাঠে তাঁদের জায়গা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তরুণেরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy