বাম-কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রচারে এক বাম কর্মীর সঙ্গে গল্প আর এক কংগ্রেস কর্মীর। বেলগাছিয়া অঞ্চলে। ছবি: সুমন বল্লভ।
দলের সম্মেলন-পর্বে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধী ছিলেন তাঁরা। এরিয়া কমিটি থেকে শুরু করে রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত নানা স্তরে তাঁরা কংগ্রেসের হাত ধরার বিপক্ষে সওয়াল করেছিলেন। এ বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে দেখা গেল, সিপিএমের সেই নেতারাই কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে সংগঠন উজাড় করে খাটছেন! হুবহু একই না হলেও ভূমিকা বদল হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে একাংশেরও।
ব্যক্তিগত মত সরিয়ে রেখে দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পক্ষে কী ভাবে ময়দানে নামতে হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এ বার সামনে রেখেছেন সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার। শেষ দফায় কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনার মোট ৯টি আসনে ভোট। কলকাতার দু’টি ও যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের একাংশ পড়ে কলকাতা জেলা সিপিএমের এক্তিয়ারে। তার মধ্যে একমাত্র কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী রয়েছেন। সেই কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে প্রদীপ ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেই ৪৫ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিটে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের পুরনো বাড়িতে এ বারের কংগ্রেস প্রার্থীর কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে সমম্বয় বৈঠক করেছিলেন কল্লোল। তার পরে সরাসরি প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে প্রদীপের পাশে বসে সাংবাদিক সম্মেলনও করছেন! সেখানেই শেষ নয়। কলকাতা উত্তর, দক্ষিণ ও যাদবপুরের অংশে কোথায় দলের কারা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন, ধরে ধরে ঠিক করে দিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক। সূর্যকান্ত নিশ্র দলের রাজ্য সম্পাদক থাকাকালীন রাজ্য সম্মেলনের কক্ষে দাঁড়িয়ে যিনি কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার কৌশলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন!
কল্লোল ও তাঁর সঙ্গীদের ভূমিকায় কংগ্রেসের নেতারা যেমন অভিভূত, বাম শিবিরের অনেকেও চমৎকৃত। আদ্যন্ত বাম পরিবারের সন্তান কল্লোল অবশ্য মনে করেন, কমিউনিস্ট দলে কর্মীদের ভূমিকা এমনই হওয়া উচিত। দলের লাইন ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে তার বাস্তবায়নই কর্মীদের কর্তব্য। কলকাতার জেলা সম্পাদক হয়েও প্রায়শই তাঁকে বাড়ি ফিরতে দেখা যায় বাসে চেপে। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত কল্লোল বলছেন, ‘‘এলাকায় এলাকায় সাধারণ সভা (জিবি) করে নিচু তলা পর্যন্ত আমরা এটা বোঝাতে পেরেছি। বাংলায় বিজেপি-বিরোধিতা সম্ভব নয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা বাদ দিয়ে। সেই জায়গা থেকেই গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের পরিবেশ জোরালো হয়ে। এ বারের সমঝোতা বড় অংশেই আগের তুলনায় মসৃণ।’’
উত্তর কলকাতায় কল্লোলদের ভূমিকাকে কুর্নিশ জানিয়েই সোমেন-পুত্র রোহনের মন্তব্য, ‘‘প্রদীপ ভট্টাচার্যের জন্য বামফ্রন্ট যে নিঃশর্ত ভাবে কাজ করেছে, তাকে সেলাম জানাতে হয়! রাজাবাজার, সিআইটি রোড, এন্টালি, শিয়ালদহ-বড়বাজারের বাইরে কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচার বামফ্রন্টই কাঁধে তুলে নিয়েছে। মানিকতলা, কাশীপুর-বেলগাছিয়া, বেলেঘাটা, শ্যামপুকুরের মতো বিধানসভা এলাকায় পুরোটাই বামফ্রন্টের সহায়তায় চলছে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সুমন রায়চৌধুরীরও মত, উপর তলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমেরা যে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, তার প্রতিফলন নীচের স্তরে পড়েছে।
জোটের প্রশ্নে নানা মত ছিল কংগ্রেসেও। তবে সে সব অতিক্রম করেই দলের বড় অংশ ভোটের ময়দানে নেমেছে বলে মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের কথায়, ‘‘মতান্তর সব দলেই থাকে, ২০১৬ সাল থেকে আমাদের দলেও ছিল। কিন্তু সবাই মিলে সর্বান্তঃকরণে এ বার জোটের পক্ষে ময়দানে নেমেছেন। সেই কারণেই বিজেপির দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং তৃণমূলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণ করছেন আমাদের!’’
পরিশ্রম, ভূমিকা বদল চোখে পড়েছে। তার প্রভাব ভোটে কেমন পড়ে, এখন তার উত্তরের অপেক্ষা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy