রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
‘ইন্ডিয়া’য় ফের জট। এক দিকে কংগ্রেস, অন্য দিকে তৃণমূল এবং সিপিএম। বিষয় বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র ‘অভিন্ন কর্মসূচি’। এই জটের জেরে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দু’দফার ভোটগ্রহণ হয়ে যাওয়ার পরে বিরোধী মঞ্চ ‘অভিন্ন কর্মসূচি’ প্রকাশের ভাবনাচিন্তা করছে। নয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনি (সিএএ) নিয়েও কংগ্রেসের মনোভাবে অসন্তুষ্ট তৃণমূল এবং সিপিএম।
লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী মঞ্চ ক্ষমতায় এলে কাজের রূপরেখা কী হবে, সেই বার্তা দিতে কংগ্রেস ‘ইন্ডিয়া’র ‘অভিন্ন কর্মসূচি’ প্রকাশ করতে চায়। কিন্তু কেরলের ভোটের আগে সিপিএম জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে এখনই মঞ্চ ভাগ করতে নারাজ। কারণ, কেরলে সরাসরি কংগ্রেস বনাম বামপন্থীদের লড়াই। ওই দক্ষিণী রাজ্যের ওয়েনাড় আসন থেকে আবার লড়ছেন রাহুল গান্ধী। তাই আজ রাঁচীতে ‘ইন্ডিয়া’-র জনসভায়ও যাননি সীতারাম ইয়েচুরি। কারণ, সেখানে রাহুল, মল্লিকার্জুন খড়্গের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। খড়্গে গেলেও শেষ পর্যন্ত শারীরিক অসুস্থতার জন্য যাননি ওয়েনাড়ের কংগ্রেস প্রার্থী।
অন্য দিকে, ‘ইন্ডিয়া’-র অভিন্ন কর্মসূচিতে জাতগণনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তৃণমূলের আপত্তি রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র মুম্বই বৈঠকেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, বিজেপি জাতগণনার সুযোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মেরুকরণের চেষ্টা করছে। অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণের সব সুবিধা মুসলিমরা পেয়ে গিয়েছে বলে প্রচার করছে।
এই পরিস্থিতিতে ঠিক হয়েছে, ২৬ এপ্রিল কেরলের ভোটগ্রহণ মিটে গেলে ‘অভিন্ন কর্মসূচি’ প্রকাশ করা হবে। নাম হতে পারে ‘ইন্ডিয়ার গ্যারান্টি’। মূলত সাত দফা প্রতিশ্রুতিকে ভিত্তি করে এই কর্মসূচি ঠিক হবে। এর মধ্যে রুটিরুজির প্রতিশ্রুতি, সামাজিক সুরক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ক্ষমতায় রাশ টানা, কৃষকদের জন্য ফসলের দামের আইনি গ্যারান্টির মতো প্রতিশ্রুতি থাকবে।
এরই মধ্যে, সিএএ নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল এবং সিপিএম। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও সিপিএমের একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে। কিন্তু উভয়েই প্রশ্ন তুলেছে, কংগ্রেসের ইস্তাহারে সিএএ খারিজের প্রতিশ্রুতি নেই কেন? এ নিয়ে প্রকাশ্যে সরব কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি বলেছেন, কংগ্রেস কেরলে সিএএ-র বিরুদ্ধে যৌথ বিরোধিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। এখন ইস্তাহারেও সিএএ নিয়ে নীরব। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, তাদের ইস্তাহার ‘দিদির শপথ’-এ সিএএ খারিজের কথা বলা হয়েছে। এনআরসি এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি রূপায়ণ বন্ধেরও শপথ রয়েছে । অথচ কংগ্রেস এ নিয়ে ইস্তাহারে নীরবই।
শরিকদের থেকে এই প্রশ্ন ওঠায় কেরল, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোটে ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আজ কংগ্রেসের ইস্তাহার কমিটির চেয়ারম্যান পি চিদম্বরম তিরুঅনন্তপুরমে দাবি করেছেন, “ইন্ডিয়া ক্ষমতায় এলে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সিএএ প্রত্যাহার করা হবে।” তাঁর যুক্তি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-সহ মোদী জমানায় পরিবর্তিত অনেক আইনে সংশোধন করতে চায় কংগ্রেস। দলের ইস্তাহার দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছিল বলে সব আইনের নাম তাতে রাখা হয়নি।
সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি-র মতো ‘ইন্ডিয়া’র দলও বিজেপির হাতে মেরুকরণের অস্ত্র তুলে দিতে ইস্তাহারে সিএএ-র প্রসঙ্গে যায়নি। তারা কংগ্রেসের মতো জাতগণনার পক্ষে। এখন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের অভিন্ন কর্মসূচিতে সিএএ, জাতগণনার প্রসঙ্গ থাকবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষায় ‘ইন্ডিয়া’য় মতভেদ নেই। সরকারি চাকরির শূন্যপদ পূরণ, শহরেও রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্প চালু করার কথা থাকবে। গরিব মহিলাদের জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা অনুদান, বেকারদের মাসিক অর্থ সাহায্য, চাকরিতে মহিলাদের সংরক্ষণ, গরিব পরিবারে নিখরচায় বছরে ছ’টি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার, বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ, পুরনো পেনশন প্রকল্প চালু করা, কৃষকদের এমএসপি-র গ্যারান্টির মতো প্রতিশ্রুতি থাকবে। সিবিআই, ইডি-র ক্ষমতার অপব্যবহার রুখতে মোদী জমানার দানবীয় আইনের সংশোধন হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy