মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সরাসরি ভোটের সঙ্গে যোগ নেই তাঁদের। তবু না-থেকেও যেন জুড়ে আছেন। লোকসভা ভোটের শেষ পর্যায়ে কলকাতার দুর্গাপুজো কমিটিগুলির তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে কার্যত সমর্থনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে বলে বিরোধী মহলের গুঞ্জন।
দেশের ভোট সপ্তমীতে আগামী ১ জুন কলকাতার উত্তর-দক্ষিণে দু’টি লোকসভা কেন্দ্র, যাদবপুর, দমদম, বারাসতে ভোট রয়েছে। রাজ্যে বিভিন্ন দুর্গাপুজোর সব থেকে বড় মঞ্চ ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর বেশির ভাগ সদস্যই ওই এলাকার পুজোর কর্মকর্তা। এই শেষ দফার ভোটের প্রাক্কালে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মঞ্চটি নিজেদের সদস্যদের জন্য যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, তাতে মমতার উন্নয়নের কাজের পাশে থাকার অঙ্গীকার রয়েছে। ফোরামের দুই কর্তা, সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু এবং সভাপতি কাজল সরকারের সই করা নির্দেশিকাটিতে মমতার নির্দেশে বার্ষিক গ্রীষ্মকালীন রক্তদান শিবিরের প্রস্তুতির কথাও বলা হয়েছে।
এ বার ভোটের জন্য পিছিয়ে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ৩০ জুন। তার প্রস্তুতি পর্বে সবার সহযোগিতা চেয়ে নির্দেশিকাটিতেই বকলমে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্যের স্বাক্ষর। পুজোর আয়োজকদের যে কোনও দরকারে মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য, ইউনেস্কোর দরবারে বাঙালির পুজোকে মেলে ধরায় মুখ্যমন্ত্রীর অবদানের কথা তুলে ধরে পুজোর কর্মকর্তা তথা পুজোপ্রেমীরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিরঋণী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং সম্মিলিত অঙ্গীকার করার ঢঙে সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরাও আমাদের প্রিয় দিদির সকল সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে পাশে থাকার জন্য সচেষ্ট।’
ফোরামের তরফে শাশ্বত বসু বলেন, “আমরা অরাজনৈতিক মঞ্চ। কর্মকর্তাদের মধ্যে সব দলের সমর্থক আছেন। তবে দুর্গাপুজোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় অনুদান, নানা রকম প্রশাসনিক সহায়তা বা বিদ্যুতে ছাড়ের সুবিধার জন্য আমরা সত্যিই ঋণী! এ তো গোপনীয় নয়। কিন্তু ভোট রাজনীতির সঙ্গে আবেদনটি গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।”
এমনিতে পুজোকর্তাদের বেশির ভাগই এখন তৃণমূলের নেতা। কয়েক জন মন্ত্রীও। যাদবপুর বা কলকাতার দু’টি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীদের রোড-শো, মিছিলে অনেক ক্লাবের সদস্যদেরই নতুন পোশাকে সেজে তৃণমূল প্রার্থীদের স্বাগত জানাতে দেখা গিয়েছে। দিন কয়েক আগে দক্ষিণ কলকাতার একটি খুঁটিপুজোর অনুষ্ঠানে রাজ্যের শাসক দলের এক মন্ত্রী নিজে উপস্থিত কর্মকর্তাদের ফোরামের তরফে দলের জন্য ‘কিছু করার’ আর্জি জানান। তার পরেই রক্তদান শিবিরের চিঠির মোড়কে এই পরিকল্পনা।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ীর অভিযোগ, “এ তো স্পষ্ট ধর্মকে ব্যবহার করে ভোট প্রচার হচ্ছে। এটা নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ তো বটেই! সেই সঙ্গে অসাংবিধানিক।” বিজেপি নেতা তথা পুজোকর্তা সজল ঘোষ পুজো কমিটিগুলির সরকারি অনুদানের বিরোধী। তিনি বলছেন, “গত বছর পুজো কমিটিগুলিকে রাজ্য সরকার ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এটা পরিষ্কার, জনগণের টাকায় পুজো কমিটিগুলিকে তুষ্ট করার বিনিময়ে মুখ্যমন্ত্রী সমর্থন কিনছেন।”
নির্বাচন কমিশনের কাছে এখনও পর্যন্ত অবশ্য অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে কমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, “যা শুনেছি, পুজো কমিটিগুলি নিজেদের মধ্যে কিছু বার্তা রেখেছে। ওঁরা জনসাধারণের জন্য প্রকাশ্য বিজ্ঞপ্তি দিলে সেটা বিধিভঙ্গ হত।”
তৃণমূল বিধায়ক তথা বড় পুজোর কর্তা দেবাশিস কুমারের বক্তব্য, “বিরোধীরা সঙ্কীর্ণ চোখে বিষয়টি দেখছে। মুখ্যমন্ত্রীর সামাজিক কাজের সঙ্গে ভোট-রাজনীতিকে টেনে আনা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy