অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
চলো হে সাত্তার! অনেক দূর যেতে হবে। চুরুট হাতে হাঁক দিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে যেতেন বীরেন রায়। জমিদার বংশের সন্তান এবং নবগ্রামের সিপিএম বিধায়ক। ডাক পেয়ে গাড়িতে সওয়ারি হতেন আব্দুস সাত্তার। তখনও বিরোধী দলনেতা হিসেবে বিধানসভার গাড়ি তিনি পাননি। সিপিএম ও কংগ্রেসের দুই বিধায়ক জগৎ সংসারের নানা গল্পে মশুগুল হয়েই পাড়ি দিতেন কলকাতা। তাঁদের জেলায় তখন সিপিএম, কংগ্রেস কৌরব-পাণ্ডব লড়ছে!
রাজনীতির যুদ্ধে রক্তক্ষয়ের পাশাপাশি এমন ছবিও দেখে এসেছে মুর্শিদাবাদ। কখনও কাটারায় গোষ্ঠী-সংঘর্ষ নিয়্ন্ত্রণে আনতে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু জেলায় এসে আলোচনায় ডেকে নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সাত্তারকে। কখনও সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের সঙ্গে গাড়িতে জরুরি প্রয়োজনে জেলায় ফিরেছেন কংগ্রেস বিধায়ক। সেই মুর্শিদাবাদেরই বহরমপুর কেন্দ্রে প্রচারের শেষ লগ্নে কংগ্রেস সাংসদ ও প্রার্থী অধীর চৌধুরীকে রাস্তায় দেখে তাঁর দিকে রোড-শো থেকে বিজেপি প্রার্থী নির্মল সাহা ফুল ছুড়েছেন বলে বিতর্ক বেধে গিয়েছে! ঘটনার ভিডিয়ো সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করে ‘বিজেপি ও অধীর-কংগ্রেসের আঁতাঁতে’র অভিযোগে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের একের পর এক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ। যা দেখে বিস্মিত জেলার রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও প্রার্থী অধীরের কথায়, ‘‘রাস্তায় পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে অন্য দলের প্রার্থী যদি ফুল ছোড়েন, সৌজন্য বিনিময় করেন, তাতে কী অন্যায় আছে? আমি কি পকেটে পাথর নিয়ে ঘুরব, অন্য দলের কেউ ফুল ছুড়লে পাল্টা পাথর মারব? এটা একটা বিতর্কের বিষয় হল!’’ তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী পরস্পরকে জয়ের শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন।’’ বিজেপি প্রার্থী নির্মল আগেই বলেছেন, ‘‘অধীরবাবু অভিজ্ঞ রাজনীতিক, আমি চিকিৎসক হওয়ায় সেই সূত্রে পরিচয় আছে। আগেও (লোকসভা ভোটের প্রচারের প্রথম দিকে) তাঁর সঙ্গে প্রচারে দেখা হয়ে গিয়েছে, নমস্কার করে সৌজন্য বিনিময় হয়েছে।’’
এমনকি, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সুর মিলছে না দলের মুর্শিদাবাদ-বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারেরও। তিনি বলছেন, ‘‘অধীর চৌধুরীকে সকলেই চেনে। নির্মল সাহাও চিকিৎসক হিসেবে বহরমপুরে পরিচিত। তাঁদের দেখা হয়ে যাওয়ার পরে যেটা হয়েছে, সেটাকে সৌজন্য হিসেবেই দেখা উচিত।’’ প্রসঙ্গত, গত বার লোকসভা ভোটে অধীরের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন অপূর্ব ওরফে ডেভিডই। তাঁদেরও প্রচারে দেখা হয়েছিল। তবে ‘গুরু’কে ছেড়ে এসে ‘শিষ্য’ তাঁর বিরুদ্ধেই লড়তে নামায় সে সাক্ষাতে উষ্ণতা ছিল না। অপূর্বের কথায়, ‘‘দেখা হল, গাড়ি দাঁড়িয়ে গিয়ে রাস্তায় জ্যাম লেগে গেল। পুলিশ রাস্তা পরিষ্কার করেছিল। তবে উনি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন, আমিও মুখ ফিরিয়ে ছিলাম!’’
বস্তত, তিক্ত, তীক্ষ্ণ, অপশব্দ-লাঞ্ছিত এ বারের প্রচার-পর্বে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে বিরতই ছিলেন বহরমপুরের তিন প্রার্থী, কংগ্রেসের অধীর, তৃণমূলের ইউসুফ পাঠান ও বিজেপির নির্মল। আক্রমণ যা করার, করেছেন অন্য নেতারা। অধীর শুধু নাম না করে একটাই তির্যক মন্তব্য করেছেন, ‘‘রাজস্থানে যেমন শোক প্রকাশের জন্য রুদালি পাওয়া যায়, আজকাল ভোটে লড়ার জন্য ভোটালি পাওয়া যায়! তবে যে কোনও রাজ্য থেকেই যে কেউ এসে লোকসভা ভোটে লড়তে পারেন।’’ রাজনৈতিক শিবিরের বর্ষীয়ান পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে বরাবরই বিবদমান পক্ষের মধ্যে সৌজন্য আলাদা জায়গা পেয়েছে। বহরমপুরের ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সেই অর্থে ব্যতিক্রমই।
তৃণমূল যেমন ‘সৌজন্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিজেপি আবার এআইসিসি-র ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীরের একটি মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছে। একটি ইউটিউব চ্যানেলের সাক্ষাৎকারের একটি ক্লিপ দিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় দাবি করেছেন, আদানি-অম্বানীরা তাঁদের টাকা দেয় না, তাই তাঁরা ওই শিল্প-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরব হন— বলেছেন অধীর। তা হলে মহুয়া মৈত্রদের সঙ্গে অধীরদের তফাত কী, খোঁচা দিয়েছেন মালবীয়। অধীর পাল্টা বলছেন, ‘‘ঠাট্টা করে বলেছিলাম, ওরা আপনাদের (সাংবাদিক) টাকা দেয় না, আমাদেরও দেয় না। তাই আমরা প্রশ্ন তুলি। যাদের দেয়, তারা চুপ করে থাকে। তখন সাংবাদিক এবং আমি, দু’জনেই যে হাসছিলাম, সেটা ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে। বিজেপির এখন এমন করুণ হাল, ঠাট্টাও তারা বোঝার অবস্থায় নেই!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সংযোজন, ‘‘আদানিদের নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান রাহুল গান্ধী বহু বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন। নতুন করে আমায় কিছু বলতে হবে না, বিজেপির অপপ্রচারেও বাস্তব বদলাবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy