Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

বাংলার পথ কোন দিকে, বোঝাবে লোকসভার ফল, পরীক্ষায় শুভেন্দু-অভিষেকও

যুযুধান দুই শিবিরের দুই সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ইনিংস কোন দিকে এগোবে, তারও ইঙ্গিত মিলতে চলেছে এই লোকসভা ভোটের ফলাফলেই।

Representative Image

লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা আজ। বহরমপুর গার্লস কলেজে চলছে তার প্রস্তুতি। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ০৫:০৮
Share: Save:

প্রবল গরমে প্রায় আড়াই মাস ধরে চলেছে তুলকালাম প্রচার। ভোট হয়েছে সাত দফায়। এই দীর্ঘ পর্ব পেরিয়ে লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নির্ধারিত হতে চলেছে বাংলায় রাজনীতির দিশা। যুযুধান দুই শিবিরের দুই সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ইনিংস কোন দিকে এগোবে, তারও ইঙ্গিত মিলতে চলেছে এই লোকসভা ভোটের ফলাফলেই।

মোদীর গ্যারান্টি বনাম দিদির গ্যারান্টি। দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা বনাম অনুদানের রাজনীতি। এক কথায় এই ছিল রাজ্যে এ বারের লোকসভা নির্বাচনের মূল বিষয়। পাঁচ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট বাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। এ বারও রাজ্যে বৃহত্তম দল হওয়ার প্রশ্নে তৃণমূল শিবির আত্মবিশ্বাসী। বুথ-ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস উড়িয়ে নিজেদের অঙ্ক মিলিয়ে দিতে পারলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করতে পারবেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিকে জয় করে নেওয়ার দক্ষতায় তিনি অবিসংবাদী! দেখাতে পারবেন, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া একাধিক বার ঠেকিয়ে দেওয়া যায়!

তিন বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রাজ্যে সরকার গড়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল বিজেপি। শেষ পর্যন্ত থামতে হয়েছিল তার চেয়ে বহু দূরে! তবে ৭৭টি আসন পেয়ে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছিল তারাই। এ বার এক দিকে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ফের স্থিতিশীল সরকার গড়ার ডাক এবং অন্য দিকে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মনোভাব, এই জোড়া হাতিয়ারে ভর করে এই লোকসভায় বাংলার বৃহত্তম দল হয়ে উঠতে পারলে বাংলায় সরকার গড়ার লক্ষ্যে নতুন উদ্যমে ঝাঁপাবে বিজেপি। রাজ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আশা, তৃণমূলের চেয়ে তাঁদের আসন বেশিই হবে। যেমন দেখানো হয়েছে বেশির ভাগ বুথ-ফেরত সমীক্ষায়। সেই ইঙ্গিত মিলে গেলে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না বলেও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি।

তবে আজ, মঙ্গলবার সকালে ভোট-যন্ত্র খুলে গণনা শুরুর আগে স্নায়ুর লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকছে না বিজেপি বা তৃণমূল কেউই। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে রেখেছেন, ‘‘সাজানো বুথ-ফেরত সমীক্ষা যা দেখিয়েছে, তার দ্বিগুণ আসন আমরা পাব।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক আবার স্পষ্ট করে সংখ্যা উল্লেখ করে দাবি করেছেন, ৩১টি আসন তাঁরা পাবেন। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বেরও অভ্যন্তরীণ হিসেব, অন্তত ২৫টি আসন তাঁদের হবে। গত বার যা ছিল ২২। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ভোট-গণনার আগে কোনও সংখ্যার দাবিতে যাচ্ছেন না। তবে বলছেন, ‘‘মোদীজি’র সরকার গড়ার ডাক আছে। রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতাও প্রবল। আমরা তৃণমূলের চেয়ে বেশি আসন পাব।’’ বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠ মহল বিজেপির জন্য ২১ বা তার চেয়ে বেশি আসনের হিসেব ধরছে। আর বিজেপিরই একটি অংশের মতে, খারাপ হলে দল ১৫ থেকে ১৮টি আসন পেতে পারে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিশেষ আস্থাভাজন শুভেন্দুই এ বার রাজ্যে বিজেপির মূল কাণ্ডারী। প্রার্থী বাছাই, সংগঠন থেকে শুরু করে প্রচার, সব পর্বেই তাঁর ভূমিকা প্রধান। বিজেপি রাজ্যে বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এলে শুভেন্দুর রাজনৈতিক উত্থানের পথ আরও প্রশস্ত হবে বলেই দলীয় সূত্রের বক্তব্য। আর ফল আশানুরূপ না হলে দাঁড়াতে হবে তোপের মুখে। একই ভাবে তৃণমূলের ভোট-লড়াইয়ে প্রধান ভূমিকায় এ বার অভিষেক। দল এখনই প্রায় তাঁর নিয়ন্ত্রণে। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে একাধিক নেতা-মন্ত্রী জেলে, এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তৃণমূল সাফল্য পেলে অভিষেকের গুরুত্ব আরও বাড়বে। ভবিষ্যতে তাঁর ভূমিকা নিয়েও শুরু হবে নতুন চর্চা।

একই সঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষেরই নজর থাকছে বাম ও কংগ্রেস জোটের দিকে। লোকসভা ও বিধানসভায় রাজ্যে বামেরা এখন শূন্য। কংগ্রেসের হাতে ছিল দু’টি লোকসভা আসন। তবে ক্রমাগত রক্তক্ষরণের প্রবণতা আটকে গত পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট বাড়াতে পেরেছিল বামেরা। তার প্রেক্ষিতেই এ বার তৃতীয় শক্তি হিসেবে আলোচনায় জায়গায় উঠে আসার আশা করছেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূলের অঙ্ক, বামেরা তাদের হারানো ভোট ফিরে পেলে বিজেপির ক্ষতি এবং তাতে তৃণমূলের লাভ! আবার বিজেপির ধারণা, গত বিধানসভায় তৃণমূলের পাওয়া একচেটিয়া সংখ্যালঘু ভোটের কিছুটা বাম-কংগ্রেস টেনে নিলে তাতে শাসক দলেরই ক্ষতি! অর্থাৎ ভোট কাটাকুটির অঙ্ক কষছে দুই শিবিরই।

কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের আলোচনার মধ্যে দাঁড়িয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলে রেখেছেন, ‘পুনরুত্থান’ই তাঁদের মূল লক্ষ্য। নির্বাচনে তাঁর সহযোদ্ধা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘‘ভোটের শুরুতে দ্বিমুখী লড়াইয়ের কথা হচ্ছিল। পরে সেটা যে ত্রিমুখী হয়ে গিয়েছে, বিজেপি ও তৃণমূলের বক্তব্যেই স্পষ্ট। সেখানে আমরা সাফল্য পেয়েই গিয়েছি! বাম ও কংগ্রেসের ফল ভাল হবে, ভোট বাড়বে। উদীয়মান শক্তি হিসেবে আমাদের নতুন লড়াই শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE