প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।
নিজস্ব ভোটার নয়, ‘ফ্লোটিং ভোটার’ বা ভাসমান ভোটারের হাতেই চারশো আসন পাওয়ার চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যে ভোটারদের হাত ধরে পাঁচ বছর আগের ভোটে তিনশো আসনের গণ্ডি পেরিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এবার যে ভাবে ছ’টি দফাতেই (কিছুটা ব্যতিক্রম চতুর্থ দফা) ভোট কম পড়েছে, তাতে চারশো আসন ছোঁয়া ক্রমশ দুসাধ্য বলেই ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজেপি নেতারা।
পরিসংখ্যান বলছে, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র ৭% ভোট যদি এনডিএ শিবির কেড়ে নিতে সক্ষম হয়, একমাত্র তাহলেই চারশোর লক্ষণরেখা পার হওয়া সম্ভব। নচেৎ নয়। কিন্তু এবার ভোট পড়েছে কম। যা নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ হল, কম ভোট পড়লেও তার বড় অংশ পদ্ম প্রতীকেই গিয়েছে। কারণ, দলের যাঁরা একনিষ্ঠ কর্মী তাঁরাই ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন। দল স্বীকার করে নিচ্ছে, গত দু’বারে মোদী ঝড়ে ভাসমান ভোটারেরা যে বিপুল ভাবে গেরুয়া শিবিরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, এ বারে মোদী ঝড় না থাকায় সেই ভাসমান ভোট অনেকাংশেই টানতে ব্যর্থ হয়েছে দল। ভাসমান ভোটারদের সমর্থন সে ভাবে না থাকায় চারশোর লক্ষ্যমাত্রা আদৌও ছোঁয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। এমনকি প্রশ্ন উঠেছে, গতবারের আসন সংখ্যা ছোঁয়া যাবে কি না, তা নিয়েও! ভোট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাসমান ভোটারেরা হলেন সেই ভোটার— যাঁদের কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় নেই। যখন যেমন ঢেউ আসে, তখন সেই দলের পক্ষে তাঁরা ভোট দিয়ে থাকেন।
প্রতিটি দলের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সেই ভোটব্যাঙ্ক নিজের দলের প্রতিই আস্থা রেখে থাকে। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির এক সময়ের ভোট কুশলী রবি কুমারের বিশ্লেষণ, দু’দশকের পরিসংখ্যান বলছে, লোকসভা ভোটে বিজেপি সবচেয়ে কম সংখ্যক ভোট পেয়েছিল ২০০৯ সালে। ভোট প্রাপ্তির হার ১৮.৮%। আর কংগ্রেসের ক্ষেত্রে ২০১৪ ও ২০১৯। দু’বারই কংগ্রেসের ভোট পেয়েছিল সাড়ে উনিশ শতাংশের কাছাকাছি। এর থেকে ধরে নেওয়া যায়, গোটা দেশে দুই প্রধান জাতীয় দলের কুড়ি শতাংশ ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে, যারা দলের চরম দুর্দিনেও নিজেদের দলীয় প্রতীককে বেছে নিয়েছিলেন। পাঁচ বছর আগে ১৯.৪৬% ভোট প্রাপ্তির নিরিখে কংগ্রেস ৫২টি আসন জিতেছিল। সেখানে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে (৩৭.৩৬%) বিজেপি একাই ৩০৩টি আসন জিততে সক্ষম হয়। রবির মতে, নিজস্ব ভোটের সঙ্গে ১৫-১৭% বাড়তি ভোট যোগ হওয়ায় কংগ্রেসের থেকে আড়াইশোর বেশি আসন কব্জা করে নেয় বিজেপি। ওই ১৫-১৭% ভোটারের অধিকাংশ হলেন ভাসমান ভোটার। যাঁরা বিজেপির তিনশোর গণ্ডি পার হওয়ার পিছনে মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন।
কংগ্রেসের দাবি, এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। মোদী ঝড় তো নেই, উল্টে বিজেপির দশ বছরের শাসনে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বইছে দেশের সর্বত্র। ভোট বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ যদি এনডিএ-র থেকে পাঁচ শতাংশ ভোট কেড়ে নিতে সক্ষম হয়, সে ক্ষেত্রে এনডিএ-র আসন ২৭০-এর নীচে নেমে আসার সম্ভাবনা। তখন ইন্ডিয়া-র আসন গিয়ে দাঁড়াবে ১৯০-২০০ কাছাকাছি। ২০০৪ সালের মতো এবারও যদি সরকার-বিরোধী চোরাস্রোত প্রবল হয়,বিরোধীরা যদি শাসক এনডিএ-র ১০ শতাংশ ভোট টেনে নিতে সক্ষম হয়, তাহলে আসন প্রাপ্তির নিরিখে ২৩০-এর কাছাকাছি থাকবে দুই জোট। তখন দু’জোটের শরিক নয়— এমন দলগুলির সাহায্য নিয়ে সরকার গড়ার সুযোগ তৈরি হবে দু’দলের সামনেই। তবে ভোট কুশলীদের বিধিবদ্ধ সতর্কতা— ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার সেই দল বা জোটের প্রতি মানুষের জনসমর্থনকে বোঝালেও, তা সবসময়ে আসন জিতিয়ে দেয় এমনটি নয়। যেমন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর দল ১৯.৪৩% শতাংশ ভোট পেয়ে দশটি আসন পেয়েছিল। প্রায় একই অঙ্কের ভোট পায় অখিলেশ যাদবের দল সমাজবাদী পার্টি (১৮.১১%)। কিন্তু এসপি কেবল পাঁচটি আসন জিতেছিল। একই ভাবে ২০১৪ সালে এসপি ও বিএসপি যথাক্রমে ভোট পায় ২২% ও ১৯%। কিন্তু সেবার এসপি পাঁচটি আসন জিতলেও, প্রায় কাছাকাছি ভোট পেয়েও বিএসপি খাতা খুলতে পারেনিউত্তরপ্রদেশে।
ভাসমান ভোটারদের আপাত নিস্পৃহতা চিন্তায় রেখেছে বিজেপিকে। উল্টো দিকে কংগ্রেস মুখপাত্রজয়রাম রমেশের মন্তব্য, ‘‘ষষ্ঠ দফা ভোটেই ২৭২-এর ম্যাজিক সংখ্যা পেরিয়ে গিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। যে ভাবে ‘ইন্ডিয়া’ ঝড় রয়েছে, তাতে জোট ৩৫০ আসন পেতে চলেছে।’’ জয়রামমূলত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করার জন্য সাড়ে তিনশো আসন পাওয়ার দাবি করছেন বলেই মনে করছেন রাজনীতির অনেকে। কারণ, ছ’দফা ভোটের পরে ইন্ডিয়া-র শরিকদের সঙ্গে আসন জেতার সম্ভাবনা নিয়ে যে বিশ্লেষণ হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস খুব ভাল করলেও একক ভাবে ১২০-১৩০টি আসন পেতে পারে। তাই যদি হয়, তাহলে জোট সঙ্গীদের হাত ধরে ২৮০ আসনের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। সে ক্ষেত্রে সরকার গড়ার দাবি জানানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশায় বুক বাঁধছেন ইন্ডিয়া-র নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy