অনুনয়: তাঁকে চড় মারা হয়েছে, বিজেপি প্রার্থীর কাছে হাতজোড় করে সেই অভিযোগ জানাচ্ছেন লিলুয়ার একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
নির্দিষ্ট সময়ের পরেও কেন ভোট শুরু হয়নি? জানতে গিয়ে বচসায় জড়িয়ে কার্যত ঘণ্টাখানেক বুথ আগলে থাকলেন পদ্ম-প্রার্থী। তার মধ্যেই শাসকদলের সঙ্গে চলল ধাক্কাধাক্কি। সোমবার সকালে হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের লিলুয়ার সেই ঘটনার রেশ যখন সবে থিতিয়ে এসেছে, তখনই দুপুরে উনসানিতে বড় সংঘর্ষ হল। ভোটের শুরুতে উত্তপ্ত বাক্যবাণ চললেও, দুপুরের সংঘর্ষ রক্ত ঝরাল। আক্রান্ত হলেন মহিলারা। চার জনকে ভর্তি করা হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে।
ঘড়িতে তখন দুপুর তিনটে। দলীয় কর্মীদের থেকে পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়া, ভোটদাতাদের বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে উনসানির গরফা এফ সি স্কুলে আসেন বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, বাসিন্দাদের বড় অংশ পদ্ম চিহ্নে ভোট দিচ্ছেন বুঝেই তাঁদের বাধা দিতে শুরু করেন দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা এলাকার শাসকদলের কর্মীরা। প্রতিবাদ করলে বিজেপির ক্যাম্প অফিস তছনছ করা হয়। রথীনের অভিযোগ, লাঠি-রড দিয়ে বিজেপি কর্মীদের মেরে মাথা-মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি যখন কথা বলছিলেন, সেই সময়ে তাঁর সামনেই বিজেপি কর্মীদের উপরে তৃণমূলের বিশাল বাহিনী চড়াও হয়।
শেষে রথীন ঘটনাস্থল ছাড়লেও অশান্তি থামেনি। তৃণমূল সমর্থকেরা ভোট কেন্দ্রের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন। ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে তাঁরা দাবি করেন, যত ক্ষণ না ভোট দিতে পারছেন, তত ক্ষণ অবরোধ চলবে। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ নিয়ে আসেন তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘বুথের ভিতরে বিজেপি লোক ঢুকিয়ে ভোট নষ্ট করছে। কর্মীদের মারধর করেছে। নির্বাচন কমিশন, জেলাশাসককে জানিয়েছি। কেউ আসেননি।’’ প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে গোলমাল, অবরোধ চলার পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন পুলিশকর্তারা।
অন্য দিকে, এ দিন সকাল ৯টা বেজে গেলেও বালি বিধানসভার লিলুয়া ভারতীয়া হাইস্কুলের একটি বুথে ভোট শুরু হয়নি। এমনকি, সেখানে মহড়া ভোটও (মক পোল) হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে পুলিশ পর্যবেক্ষক এসে পরিস্থিতি দেখে চলে যাওয়ার পরেই সেখানে আসেন রথীন। ১৭৬ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থী ঢুকতেই হাত জোড় করে প্রিসাইডিং অফিসার গৌতম মান্না দাবি করেন, সকাল ৬টা নাগাদ দু’জন মহিলা এজেন্ট পরিচয়ে সেখানে আসেন। গৌতমের অভিযোগ, তিনি নির্দিষ্ট ফর্মে ওই দুই মহিলাকে সই করতে বলার পরেই তাঁকে কয়েকটি থাপ্পড় মারা হয়। পরে রথীন মহড়া ভোট শুরু করান। সেই সময়েই তৃণমূলের এজেন্টরা বিক্ষোভ দেখানোর সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, সশস্ত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিজেপি প্রার্থী কেন বুথে ঢুকেছেন? রথীন বেরিয়ে এলে তাঁকে ঘিরে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। রথীনও পাল্টা তেড়ে যান। ভোট শুরু করিয়ে তবেই ফিরবেন, এই জেদ ধরে প্রায় ঘণ্টাখানেক ভোট কেন্দ্রের মাঠে গাড়িতে বসে থাকেন তিনি। গোলমাল চলাকালীন গিরিশ ঘোষ রোডে ঘুসুড়ি সরকারি আবাসনের কাছে ছোট কৌটোবোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে শাসক শিবির।
লিলুয়ার ওই স্কুলে গোলমালের খবর পেয়ে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী, নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা। গৌতমকে সরিয়ে নতুন প্রিসাইডিং অফিসার দিয়ে ১০টা নাগাদ ভোট শুরু হয়। বেরোনোর সময়ে স্কুলশিক্ষক গৌতম বলেন, ‘‘আমাকে মারধর করলেন এক মহিলা, উল্টে তিনি আমার বিরুদ্ধেই যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলেন। তবে ওঁরা কোন দলের, তা জানি না।’’
এই দু’টি বড় ঘটনা ছাড়া, সকাল থেকে হাওড়া সদরের ভোট কার্যত নির্বিঘ্নেই কেটেছে। দুপুরে পাঁচলা বিধানসভা কেন্দ্রের রাজখোলা ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে এক ভুয়ো ভোটারকে ধরেন সিপিএম প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। বালির শান্তিরাম স্কুলে বুথের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান ভোটারদের ছবি তুলছেন বলে অভিযোগ তোলেন জোড়া ফুলের এজেন্ট। বিজেপিকে ভোট দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের প্রভাবিত করছে, এমন অভিযোগে বিক্ষোভ হয়। খবর পেয়ে বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায়, জেলা সম্পাদক ভাস্করগোপাল চট্টোপাধ্যায়, প্রবীর রায়চৌধুরীরা গেলে তাঁদের সঙ্গে বচসা বাধে কর্তব্যরত জওয়ান ও পুলিশের একাংশের।
সাঁকরাইল বিধানসভার কলোড়া-১ পঞ্চায়েতের নতিবপুর শেখপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭১ নম্বর বুথে ভোট দিতে আসা সিপিএমের কর্মী-সমর্থক, সাধারণ ভোটারদেরও বুথ স্লিপ ছেঁড়া হয় বলে অভিযোগ। বহুতল থেকে ইট মারার অভিযোগ করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নন্দলাল মুখোপাধ্যায়। সবটাই সিপিএমের ‘নাটক’ বলে দাবি সাঁকরাইলের তৃণমূল সভাপতি অমৃত বসুর। ভোট শেষে সিপিএম প্রার্থী বলেন, ‘‘যে যেখানে পেরেছেন, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে ভোট দিয়েছেন। একটাই লক্ষ্য ছিল, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy