Advertisement
Back to
Suvendu Adhikari

পদ্ম ফোটাতে দৌড়ের মন্ত্রে শাহের ‘সেনাপতি’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সভার পরে সভা করে চলেছেন টানা।

suvendu adhikari

শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

 সন্দীপন চক্রবর্তী
তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ ০৮:৩১
Share: Save:

দৌড়, দৌড় এবং দৌড়! নির্বাচনের ঘণ্টা বাজা ইস্তক তাঁর মন্ত্র একটাই। গাড়ির স্পিডোমিটারের তথ্য বলছে, এত দিনে প্রায় ৪৫ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রান্ত! সভা, রোড-শো মিলিয়ে কর্মসূচির সংখ্যা ১৩৫-এর বেশি। সপ্তম দফার ভোটের প্রচারের একেবারে শেষ লগ্নে কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী তাপস রায়ের সমর্থনে আগামী ৩০ মে মিছিল করে যখন এ বারের নির্বাচনী সফরে তাঁর ইতি টানার কথা, তত দিনে কর্মসূচির ওই সংখ্যা ১৬০ পেরিয়ে যাবে!

কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ শুধু প্রচার করেই এ বার ভূমিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে না শুভেন্দু অধিকারীর। সংগঠনের ভার, বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ধরে গুচ্ছ গুচ্ছ দলীয় প্রার্থীর জয়ের অঙ্ক কষা, প্রতিপক্ষের জন্য সময় মতো ‘দাওয়াই’ বাজারে ছাড়া— নানা গুরুদায়িত্বই তাঁর কাঁধে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলে দিয়েছিলেন, বাংলা থেকে ৩০টি লোকসভা আসন তাঁদের চাই। শাহের ‘সেনাপতি’ হয়ে বাংলার জেলায় জেলায় পদ্ম ফোটাতে তার পর থেকেই ছুটে চলেছেন বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সভার পরে সভা করে চলেছেন টানা। তবে তাঁরা হেলিকপ্টারে সওয়ার। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে কপ্টারে দেখা গেলেও বিরোধী দলনেতা সচেতন ভাবেই মাটি ছেড়ে ওঠেননি!

কখন যে তিনি কোথায়, এ বারের ভোট-যাত্রায় তাঁর নাগাল পাওয়াই কঠিন! তবে যে কোনও ঘটনাস্থলে তাঁকে দৃশ্যত যতটা উত্তেজিত লাগছে, ভিতরে ভিতরে তেমন নয়। কেমন হতে পারে বাংলায় বিজেপির ফল? ঠান্ডা স্বরেই শুভেন্দুর দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটা লক্ষ্যের কথা বলে দিয়েছেন। তার পরে আমার কিছু বলা শোভা পায় না। তবে ভোট যে ভাবে হচ্ছে, তাতে বলতে পারি, রাজ্যে বিজেপির আসন গত বারের (১৮) বাড়বে এবং তৃণমূলের আসন কমবে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার গড়ার জন্য আমরা যথাসম্ভব আসন তাঁর হাতে তুলে দেব। তার পরে রাজ্যে তৃণমূলের সরকারকে বিদায় দেওয়ার, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাক্তন করার চূড়ান্ত লড়াই শুরু হবে!’’

বাংলায় এ বার বিজেপির প্রার্থী-তালিকায় শুভেন্দুর ছায়া লম্বা। তাঁর ‘বিশ্বাসভাজন’একাধিক বিধায়ক লোকসভায় টিকিট পেয়েছেন। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুর ছেড়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে লড়তে যেতে হয়েছে। আবার বিচারপতির পদ ছেড়েই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় চলে এসেছেন তমলুক কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে। যেখানে প্রার্থী পছন্দসই হল না, সেখানে দলের স্থানীয় স্তরে গোলমালের আশঙ্কা থাকেই। বিরোধী দলনেতা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, ‘‘এই রকম কোনও সমস্যা নেই। যেখানে যা করার, আমরা করেছি। এটা মোদীজি’র ভোট। তাঁর নামেই ভোট হবে, আর তৃণমূকে যাঁরা হারাতে চান, সেই সব মানুষ বিজেপিকে সমর্থন করবেন।’’

সংগঠনের খুঁটিনাটি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রে তৃতীয় বার বিজেপির সরকার এলে এক একটা লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের জন্য কী করা দরকার, তার নকশাও ছকে রেখেছেন বিরোধী দলনেতা। নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে তিনি যেমন বলছেন, কুঁকড়াহাটির সঙ্গে ডায়মন্ড হারবারের সংযোগ যাতে তৈরি হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাবেন এবং আদায় করার চেষ্টা করবেন। মনে রাখা যেতে পারে, বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় নন্দীগ্রামের প্রকল্প যখন হাতে নেওয়া হয়েছিল, সেই সময়ে সালিম গোষ্ঠীর মাধ্যমে রায়চক থেকে কুঁকড়াহাটি সেতুর উদ্যোগও ছিল। জমি-আন্দোনের চাপে যা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু সে সব ইতিহাস, ভূগোল বিলক্ষণ জানেন! তাই তিনি বলে রাখছেন, কুঁকড়াহাটি থেকে ডায়মন্ড হারবার পৌঁছনোর রাস্তা করাতে চাইবেন জলপথের উপর দিয়ে। তাঁর যুক্তি, ‘জাতীয় জলপথে’র উপর দিয়ে সেই সেতু যাবে, তাই রাজ্য সরকারের সেখানে কোনও ভূমিকা থাকবে না।

পাঁচ দফায় ভোট যেমন হয়েছে, তাতে আগের মতো ‘লুট’ হয়নি বলেই শুভেন্দুর মত। তাঁর দাবি, বিজেপিও তার লক্ষ্যের দিকে হিসেব মতোই এগোচ্ছে। ষষ্ঠ দফায় জঙ্গলমহল ও রাঢ়বঙ্গের যে অঞ্চলে ভোট, সেই এলাকা রাজনৈতিক ভাবে একেবারে তাঁরই ‘খাস জমি’! তৃণমূলে থাকার সময়ে জঙ্গলমহল ও রাঢ়বঙ্গে ওই এলাকায় দলকে শক্ত জমির উপরে দাঁড় করিয়েছিলেন তিনিই। সেই অভিজ্ঞতার উপরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু দাবি করছেন, ‘‘এই দফার ৮টার মধ্যে ৮টাই আমাদের জন্য ইতিবাচক।’’ বিজেপির অন্দরের খবর, ওই ৮ আসনের ঘাটালকেও ‘ইতিবাচক’ করতে কেশপুরে তৃণমূলের ‘লিড’ কমিয়ে আনা তাদের মূল লক্ষ্য। বস্তুত, তৃণমূলের ‘নজর’ থেকে বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে আগলে রেখে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে তাঁকে জেতানোর জন্য বাড়তি উদ্যোগীও হয়েছেন বিরোধী নেতা।

এমনিতেই গত কয়েক বছরে তৃণমূলের চক্রব্যূহের মধ্যে থেকে রাজনীতি তাঁর। লোকসভা ভোটে এ বার মোদী-শাহেরা তাঁকে যত ভরসা করেছেন, তার পরে ফল মিললে রাজনীতিতে এবং দলে শুভেন্দুর রাস্তা মসৃণ হবে। আর উল্টো হলে? কোথা থেকে কত দাঁত-নখ বেরোবে, কেউ জানে না! আপাতত শুভেন্দু আমল দিচ্ছেন না এ সবে। তিনি এখন শুধুই দৌড়ের মন্ত্রে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy