সনিয়া গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনী প্রচারে আগাগোড়া মেরুকরণের রাস্তাতেই হেঁটে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার তৃতীয় দফা ভোটের দিনও তাঁর প্রচারের মূল সুরই ছিল মেরুকরণ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এ দিনই ভোটদাতাদের কাছে মোদীর এই মেরুকরণের প্রচেষ্টাকে খারিজের আবেদন জানালেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী। তিনি সরাসরিই বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই এই ঘৃণা-ভাষণ ও মেরুকরণের চেষ্টা।’’ এ দিন মোদীর মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূলনেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘মোদী ম্যাজিক শেষ! আর মোদী আসবেন না!’’
চলতি লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার পর থেকেই উন্নয়ন-বিকশিত ভারতের প্রচার-ফিরিস্তি ছেড়ে সরাসরি মেরুকরণের পথে হাঁটছেন মোদী। মোগল, মুসলিম লিগ, মাংস খাওয়ার মতো বিষয় নিয়ে প্রচার করেও সাড়া না পেয়ে পরের দফার আগে মহারাজ বনাম নবাব, রাজ বনাম বাদশা নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে গিয়েছেন তিনি। এ বার তৃতীয় দফায় মোদী ‘অস্ত্র’ করেছেন ‘ভোট জিহাদ’কে। যেখানে পারছেন, সেখানেই সেই ‘অস্ত্র’ প্রয়োগ করছেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের খরগোনে আজ ভোট প্রচারেও তার অন্যথা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত আজ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভারতে ‘ভোট জিহাদ’ চলবে না কি রাম রাজ্য?’’ মোদী বলেন, ‘‘মোদীর ৪০০ আসন দরকার কারণ, কংগ্রেস অযোধ্যায় রামমন্দিরে বাবরির তালা যাতে লাগিয়ে দিতে না পারে।’’ এখানেই থেমে থাকেননি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধান মুখ। ‘ভোট জিহাদ’-এর জন্য কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস বলছে, মোদীর বিরুদ্ধে ‘ভোট জিহাদ’ করো। অর্থাৎ, মোদীর বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের লোককে এক জোট হয়ে ভোট দিতে বলছে! ভাবুন কংগ্রেস কোন স্তরে নেমেছে! নিরাশা থেকে ওদের ওই অবস্থা।’’
কংগ্রেসকে নিশানা করতে ভারতের ভোটের ময়দানে পাকিস্তানকেও টেনে আনতে ছাড়েননি মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সেনাই সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম করে... পাকিস্তান নির্দোষ। আর এক কংগ্রেস নেতা বলেছিলেন, মুম্বই সন্ত্রাসের পিছনে পাকিস্তানের হাত নেই। বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’র এক নেতা আবার বলছেন, পাকিস্তান চুড়ি পরে বসে নেই।’’
কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা বলছেন, প্রচারে আসলে মোদীর হাতে কোনও ইতিবাচক অস্ত্র নেই। তাই মরিয়া হয়েই তিনি মেরুকরণের পথ বেছে নিয়েছেন। মোদীর এই অস্ত্রকে ভোঁতা করতে কংগ্রেস মূলত তাদের আর্থ-সামাজিক কর্মসূচিকে হাতিয়ার করতে সক্রিয়। দলের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের পরে আজ প্রথম ভোট-বার্তা দিয়েছেন সনিয়া। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা তুলে কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপিকে। এক ভিডিয়ো-বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘‘যুব সম্প্রদায় তীব্র বেকারত্বের মুখোমুখি। মহিলারা নির্যাতিত হচ্ছেন, দলিত-আদিবাসী-পিছিয়ে পড়া অংশ এবং সংখ্যালঘুরা প্রবল বৈষম্যের শিকার। দেশের প্রতিটি কোণে একই চিত্র। দেশের এই অবস্থা হয়েছে মোদী এবং বিজেপির জন্য। দেশের উন্নয়নে তাদের কোনও সদিচ্ছা নেই। যে কোনও মূল্যে ক্ষমতা দখলই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।’’ মোদীর জমানায় সংবিধান এবং সাংবিধানিক কাঠামোগুলি যে বিপন্ন, সেই অভিযোগও তুলেছেন কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন।
মোদী তথা বিজেপির মেরুকরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতাও। পুরুলিয়ায় এক নির্বাচনী সমাবেশে নির্বাচন কমিশনকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে না কি সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ভোট দিতে গিয়েছিল, পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, রোদ্দুরের মধ্যে। এখনই খবর পেলাম। ভাবছেন ইলেকশন কমিশন ব্যবস্থা নেবেন? একেবারে না। ওটা ‘মডেল কোড অব কনডাক্ট’ নয়, ‘মোদী কোড অব কনডাক্ট’! বিজেপির দালালি করে বেড়াচ্ছে কিছু লোক। বাংলায় হাত দিলে হাত গুটিয়ে দেবে মানুষ। পাঁচটা মুসলিমকে ভোট দিতে না দিলে কি নরেন্দ্র মোদী জিতে যাবে! আরে না, আরও পাঁচ লক্ষ, পাঁচ কোটি তোর বিরুদ্ধে ভোট দেবে। অত্যাচার করে ভোট হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy