—প্রতীকী চিত্র।
দশ বছর আগে কেন্দ্রে বিজেপির সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গেই আসানসোল আসনে প্রথম বার জয়ী হয় পদ্ম-শিবির। তাতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন শিল্পাঞ্চলবাসী। কিন্তু সে আশা বিফলে গিয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের অনেকেরই। নতুন কোনও কারখানা খোলা দূর, রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় ঝাঁপ পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বিজেপি সরকারের আমলে। ভোটের প্রচারে সেই প্রসঙ্গ তুলেছে বিরোধীরা। তবে শুধু গত দশ বছরে নয়, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে গত দু’দশকেই একের পর এক কারখানায় অচলাবস্থা থেকে ঝাঁপ পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ভোটের আগে সেই তালিকায় শেষ সংযোজন রানিগঞ্জের বল্লভপুরের কাগজকল।
২০১৮ সালে বার্নপুরে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানির বগি তৈরির কারখানা বন্ধ হয়। এই সংস্থার রানিগঞ্জ, অন্ডাল ও দুর্গাপুরে চারটি অন্য ধরনের কারখানা ছিল। ২০০০ সালে সেখানকার শ্রমিকদের স্বেচ্ছাবসর, তার পরে ২০১৮ সালে কাগজে-কলমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সময়ে জেকেনগরে অ্যালুমিনিয়াম কারখানা বিলগ্নিকরণ করা হয়েছে। বেশির ভাগ শ্রমিককে স্বেচ্ছাবসর ও কিছু শ্রমিককে কারখানার অন্য শাখায় বদলি করা হয়েছে। জেকেনগরের কারখানা বন্ধই রয়েছে।
আসানসোলে ১৯৫১ সালে বেসরকারি উদ্যোগে সাইকেল কারখানা চালু হয়েছিল। সেনর্যালে সাইকেল কারাখানায় তৈরি সাইকেলের বিদেশেও চাহিদা ছিল। ১৯৭১ সালে এই কারখানা এক বার বন্ধ হয়ে যায়। ১৩ মাস পরে আবার তা চালু হয়। এর পরে ১৯৮০ সালে কেন্দ্র কারখানাটি অধিগ্রবহণ করে। ২০০২ সালে কারখানায় ঝাঁপ পড়েছে। প্রায় চার দশকের বেশি বন্ধ আসানসোলে বেসরকারি কাচ কারখানা। প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বল্লভপুরের কাগজকল। কাগজকল কর্তৃপক্ষের দাবি, বাজারে তাদের উৎপাদিত সামগ্রীর চাহিদা কমেছে। নতুন প্রযুক্তিতে উন্নত সামগ্রী তৈরির উপরে জোর দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা সম্পূর্ণ হলে কারখানা চালু করা হবে।
এ বারের ভোটে ঘুরেফিরে এসেছে এই সব কারখানার প্রসঙ্গ। সিপিএম প্রার্থী জাহানারা খানের অভিযোগ, ‘‘বিজেপির নীতিগত অবস্থান রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া। ওরা তাই করেছে। ওদের দোসর তৃণমূল। সংসদের দু’টি কক্ষে এর বিরুদ্ধে কোনও আওয়াজ তোলেনি তারা। এমনকি, বাম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোটের শ্রমিক সংগঠনগুলির বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ডাকা ধর্মঘটে শামিলও হয়নি। উল্টে, প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে।’’ তাঁর আরও দাবি, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার রানিগঞ্জের প্রাক্তন কর্মীদের বকেয়া প্রাপ্য না মেটালে সেখানে কারখানার জমিতে বাস করা প্রাক্তন কর্মীদের উচ্ছেদ করতে দেওয়া হবে না। তা প্রচারেও জানানো হয়েছে।
সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় জানান, সাইকেল কারখানার আর কোনও অস্তিত্ব নেই। তাদের প্রচারে এই বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী আবার দাবি করেন, ২০০৯ সালে সাইকেল কারখানার জমি আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরে সেই লক্ষ্যে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি। সমস্ত বন্ধ কারখানার জমিতেই শিল্প চালুর দাবি তুলেছেন তাঁরা।
তৃণমূল অনুমোদিত আইএনটিটিইউসি-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকদলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, তৃণমূলই এ সবের বিরুদ্ধে প্রকৃত লড়াই করছে। বিরোধী জোট কেন্দ্রে সরকার গড়লেই কারখানা চালু বা প্রয়োজনে নতুন কারখানা তৈরিতে জোর দেওয়া হবে। এলাকার বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হাও প্রচারপর্বে বেসরকারিকরণের জনবিরোধী নীতি নিয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন।
বিজেপির তরফে আসানসোল কেন্দ্রে অবশ্য প্রচারে শিল্প নিয়ে বড় আশ্বাস কিছু শোনানো হয়নি। দলের প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া তাঁর জন্মভিটে জেকেনগরে অ্যালুমিনিয়াম কারখানা চালু করা নিয়ে প্রশ্নে স্পষ্ট কোনও জবাব দেননি। তিনি জানিয়েছেন, এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মনোভাব প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন।
‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক শচীন রায়ের কথায়, ‘‘এই জেলায় একের পর ভারী শিল্প বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে রীতিমতো। তাতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বৃদ্ধি কমে গিয়েছে। কারণ, এই ধরনের অনেক সংস্থা ভারী শিল্পের উপরে নানা ভাবে নির্ভরশীল। বেশ কয়েক বছর নতুন শিল্প সংস্থা এই জেলায় চালু হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy