দুর্গাপুরে সিপিএমের মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
রাজনীতির জাঁতাকলে আটকে গিয়েছে গ্রামের পানীয় জলের সংযোগের প্রকল্প। ফলে, এ বার গরমেও প্রবল জলসঙ্কটের আশঙ্কায় আসানসোলের নাকরাসোতা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের আর্জি, রাজনীতি ভুলে জল সংযোগের ব্যবস্থা করা হোক। ভোটের পরেই জলের ব্যবস্থা করতে ফের উঠেপড়ে নামার আশ্বাস দিয়েছেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল।
আসানসোল পুরসভার ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডে এই নাকরাসোতা ও সারমারা গ্রাম। ইস্কো কারখানা লাগোয়া এই দুই গ্রামে সামাজিক দায়িত্ব পালন প্রকল্পে ইস্কো কর্তৃপক্ষ পানীয় জলের একটি প্রকল্প হাতে নেন। গত বছর নভেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরুর মুখে রাজনৈতিক টানাপড়েনে তা থমকে যায়। ১১ নভেম্বর প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার পথে তৃণমূলের লোকজন এলাকার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে বাধা দেন বলে অভিযোগ। প্রকল্প এলাকায় ঢুকতে না পেরে তিনি ফিরে যান। শিলান্যাস না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ থমকে যায়।
এই পরিস্থিতিতে দু’টি গ্রামে এই গরমেও জলের সঙ্কট রয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, বাসিন্দারা দূর থেকে জল আনছেন। প্রত্যেকের গলায় আক্ষেপের সুর, সমাধান হাতের মুঠোয় পেয়েও তা হাতছাড়া হয়ে গেল! স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বিচ্ছু বাউরির কথায়, ‘‘রাজনীতি ভুলে জলের সঙ্কট মেটানোই নেতাদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত। সেটা না করে তাদের লড়াইয়ে আমরা কষ্ট ভোগ করছি।’’ আর এক বাসিন্দা শুক্লা মাজি বলেন, ‘‘গত বছর শিলান্যাস ঘিরে ঝামেলা হল। তখনই বুঝেছিলাম, আমাদের ভাগ্যে আর শিকে ছিঁড়ল না।’’ সন্ধ্যা বাউড়ির প্রশ্ন, ‘‘রাজনীতির লড়াইয়ে উন্নয়ন কেন থমকে যাবে? কৃতিত্ব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলেই তো হয়।’’ দেবজিৎ মাজি নামে এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘ইস্কো কর্তৃপক্ষের উচিত কারও কথা না শুনে স্থানীয়দের স্বার্থে প্রকল্প তৈরি করা।’’ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, পরিবার পিছু প্রত্যেকের বাড়িতে প্রতিদিন ২০-২২ বালতি জল প্রয়োজন হয়। কিন্তু মেরেকেটে তাঁরা ৫-৬ বালতি জোগাড় করতে পারেন। ভরা গরমে তা আরও কমে যায়।
আসানসোল পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুই গ্রামে কুইলাপুর জলাধার থেকে জল সরবরাহ করা হয়। গ্রামে প্রায় ১৭টি কল বসানো রয়েছে। সকাল ৭টা থেকে এক ঘণ্টা জল পড়ে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলের চাপ এত কম যে পাইপলাইনের কাছে ফুট তিনেকের গর্ত খুঁড়ে জল তুলতে হয়। তা-ও পর্যাপ্ত জল মেলে না। সে জন্য ইস্কোর তরফে জলপ্রকল্পটি তৈরির উদ্যোগ হয়েছিল। ইস্কো সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্প তৈরিতে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। দেড় হাজার পরিবারের কম-বেশি সাড়ে সাত হাজার বাসিন্দা উপকৃত হবেন। প্রকল্পটির অনুমোদন আসে গত বছরের ১৮ অগস্ট। সংস্থার আধিকারিকেরা জানান, লোকসভা ভোট চলে আসায় প্রকল্পের কাজ এখন শুরু হচ্ছে না।
এলাকার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রার অভিযোগ, ‘‘প্রকল্পটি ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্কীর্ণ রাজনীতি তা হতে দিল না। আমি স্থানীয়দের সমস্যা বুঝে প্রকল্পটি তৈরির তদ্বির করি। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি যোগ না দিয়ে আমাকে যেতে বাধা দেন।’’ তাঁর দাবি, ভোটের পরেই ফের উঠেপড়ে নামবেন প্রকল্পটি নিয়ে। স্থানীয় তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি অনুপ মাজির পাল্টা দাবি, গ্রামবাসীর দাবি মতো আমি তাঁদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে এই প্রকল্প অনুমোদন করিয়েছি। কিন্তু নিজের কৃতিত্ব দাবি করে বিধায়ক প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy