—প্রতীকী ছবি।
রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মাইকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন পাড়ার নেতা। প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে আর উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে তুলোধোনা করছেন বিরোধীদের। পাড়ার মোড় থেকে নেতার সেই চিৎকার ছড়িয়ে পড়ছে মাইকে ঘেরা গোটা এলাকায়। দর্শকাসনে বসা দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা মাঝেমধ্যে হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন। সন্ধ্যার পরে বাজারের ভিড় যত বাড়ল, ততই বাড়ল পথসভা থেকে বক্তার চিৎকার। মাইকের আওয়াজে তখন পরিস্থিতি এমনই যে, কয়েক মিনিটও কান পাতা দায়!
রবিবার বেহালায় একটি রাজনৈতিক দলের পথসভার জেরে শব্দের তাণ্ডবে এ ভাবেই কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড় হয়েছিল এলাকার বাসিন্দাদের। মাইকের তীব্র আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও ঝামেলা এড়াতে কেউই থানা-পুলিশের চক্করে পড়তে চাননি। শুধু বেহালার এই ঘটনাই নয়, কলকাতায় ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, প্রচারের নামে ততই বাড়ছে সকাল-বিকেল শব্দের এই অসহনীয় তাণ্ডব। অভিযোগ, কখনও পথসভার নামে গোটা এলাকা মাইক দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। কখনও আবার প্রার্থীর সঙ্গে থাকা বাদ্যযন্ত্রে কান ফাটার উপক্রম হচ্ছে বাসিন্দাদের। শব্দের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বাসিন্দাদের অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘তিন সপ্তাহ আগেই এই অবস্থা হলে ভোটের কয়েক দিন আগে কী হবে?’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের দিন ঘোষণার পরে এই ধরনের প্রচার কর্মসূচির জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয় রাজনৈতিক দলগুলিকে। সভার দিন এবং জায়গার উল্লেখ করে অনুমতির জন্য অ্যাপে আবেদন করতে হয়। কতগুলি মাইক বা বক্স ব্যবহার করা হবে, তারও উল্লেখ থাকে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘নির্দিষ্ট দিনে সেই জায়গায় অন্য কোনও সভা না থাকলে সাধারণত এই ধরনের পথসভার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়। তবে, অনুমোদিত সংখ্যা মেনে মাইক ও বক্স ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা সব সময়ে দেখা সম্ভব হয় না।’’ সেই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির একাংশ ‘দাপট’ দেখাতে মাইক বা বক্সের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
দিন দুই আগে ফুলবাগান, বাঁশদ্রোণী, হরিদেবপুর ও যোধপুর পার্কেও রাজনৈতিক দলের পথসভা ঘিরে শব্দের দাপটের অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া পথসভা রাত পর্যন্ত চলার অভিযোগও উঠেছে। ব্রহ্মপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আগের দিন বিকেলে একটি দল সভা করল। পরদিন দেখলাম, পাড়ার মোড় থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে আর একটি দল মাইক বেঁধে চিৎকার করছে। বাড়িতে বয়স্ক মা ও দিদিমা রয়েছেন। তাঁদের অসুবিধার কথা রাজনৈতিক দলগুলিকে বোঝাব কী করে?’’ শুধু পথসভা নয়, টোটো বা অটোর উপরে মাইক বেঁধে সকাল-বিকেল অলিগলিতে ঢুকে শব্দের তাণ্ডব চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এমনকি, হাসপাতালের মতো ‘নো হর্ন’ জ়োনেও বিধি মানা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, ‘‘শব্দের দূষণ কী মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ও তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা কর্মীরা সে সবের ধার ধারেন বলে মনে হয় না। ভোট এলেই বার বার সেটা আরও বেশি করে মনে করিয়ে দেওয়া হয়।’’ এ বিষয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও ভূমিকাও চোখে পড়েনি বলেই অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের। এক পুলিশকর্তা যদিও নজরদারি রয়েছে বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচনের আগে এই ধরনের সভাগুলি সাধারণত অনুমতি নিয়ে হয়। অনুমতি থাকা সভা পুলিশ গিয়ে বন্ধ করতে পারে না। তবে, শব্দ-বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা অবশ্যই দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy