(বাঁ দিক থেকে) রাহুল গান্ধী এবং কমল নাথ। —ফাইল চিত্র।
কমল নাথ তাঁর পুত্রকে নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেও তাঁর সঙ্গে যাতে বিধায়করাও দলে দলে পদ্ম শিবিরে না যান, তার চেষ্টায় মাঠে নামলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা আজ টেলিফোনে বা মুখোমুখি বসে কমল নাথের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও আজ কমল নাথের সরাসরি কথা হয়েছে। ওই প্রবীণ নেতা প্রত্যেককেই জানিয়েছেন, তিনি কংগ্রেস ছাড়ছেন না। কংগ্রেস সূত্রের খবর, কমল নাথের অসন্তোষের মূল কারণ তিনি সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যসভার টিকিট চেয়েছিলেন। কিন্তু রাহুলের আপত্তির কারণেই তা সম্ভব হয়নি।
কংগ্রেসের ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, রাহুলের তরফে আজ কমল নাথকে সরাসরি বলে দেওয়া হয়েছে, তিনি (কমল নাথ) কংগ্রেসে থেকে যাবেন আর তাঁর ছেলে তথা ছিন্দওয়াড়ার সাংসদ নকুল নাথ অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন, তা চলবে না। কংগ্রেসে থাকলে পুরো পরিবার নিয়েই থাকতে হবে। আর কমল নাথ যদি বিজেপিতে যোগ দিতে চান, তা হলে কংগ্রেস তাঁকে ধরে রাখতে তেমন ভাবে উদ্যোগী হবে না।
মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় কমল নাথের অনুগামী অন্তত আধ ডজন বিধায়ক দিল্লিতে পৌঁছেছেন। কমল ও নকুল দলবদল করলে ওই বিধায়কেরাও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে চলে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা। ভাঙন ঠেকাতেই কংগ্রেসের নেতারা আজ কমল নাথের পাশাপাশি, তাঁর অনুগামী বিধায়কদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন।
মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের ঘনিষ্ঠ নেতা সজ্জন সিংহ বর্মা আজ দিল্লিতে জানিয়েছেন, রাহুলের সঙ্গেও কমল নাথের কথা হয়েছে। কারণ রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' উত্তরপ্রদেশের পরে মধ্যপ্রদেশে ঢুকবে। গোয়ালিয়র-সহ দু'জায়গায় রাহুলের জনসভা হবে। বর্মা বলেন, “কমল নাথের সঙ্গে দেখা করেছি। উনি জানিয়েছেন, বিজেপিতে যাওয়া বা দল ছাড়া নিয়ে কিছুই ভাবছেন না। এ সব সংবাদমাধ্যমের প্রচার। উনি তো লোকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা নিয়ে ভাবনাচিন্তায় ব্যস্ত।” এআইসিসি- তে মধ্যপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত জিতেন্দ্র সিংহ থেকে মধ্যপ্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতু পাটোয়ারিও জানিয়েছেন, তাঁরা কমল নাথের সঙ্গে কথা বলেছেন। কমল তাঁদের বলেছেন, তিনি কংগ্রেসেই থাকবেন। মধ্যপ্রদেশের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলছেন, “আমরা তো রাজীব গান্ধী, সঞ্জয় গান্ধীর পরে কমল নাথকে ইন্দিরা গান্ধীর তৃতীয় পুত্র বলতাম। মনে হয় না উনি কংগ্রেস ছাড়বেন।”
তিনি যে বিজেপিতে যাচ্ছে না এমন কথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ নিজে অবশ্য বলেননি। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, দিল্লিতে চুরাশির শিখ দাঙ্গার তদন্তে গঠিত এসআইটি-র কাছে কমল নাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে দিল্লি হাই কোর্ট রিপোর্ট চেয়েছে। এপ্রিলের মধ্যে তা দিতে বলা হয়েছে। কমল নাথের ভাগ্নে রাতুল পুরী-সহ বেশ কয়েকজন আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-র ব্যাঙ্ক প্রতারণা ও আর্থিক নয়ছয়ের মামলা চলছে। তা নিয়েই কমল ও তাঁর ছেলে ছিন্দওয়াড়ার সাংসদ নকুলের উপরে চাপ রয়েছে।
রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন বিজেপি কমল নাথকে চুরাশির শিখ দাঙ্গার জন্য দায়ী করে এসেছে। কিছু দিন আগেই বিজেপি মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসকে হারিয়েছে। তার আগে বিজেপি জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে দিয়ে কমল নাথের সরকার ফেলে দিয়েছিল। এখন আবার সেই কমলকে বিজেপি কেন দলে নিতে চাইছে?
বিজেপি নেতারা বলছেন, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্রাণের পরে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠতম নেতা বলে পরিচিত কমল নাথ বিজেপিতে যোগ দিলে বার্তা যাবে, কংগ্রেস ভেঙে পড়ছে। কমল নাথের শিল্পপতিদের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে তিনি দলের জন্য অর্থ জোগাড় করতে পারবেন। কংগ্রেস অসুবিধায় পড়বে। মধ্যপ্রদেশে চম্বল এলাকার নেতাদের নিয়ে সিন্ধিয়া আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এর পরে কমল নাথ এলে ছিন্দওয়াড়া ও জব্বলপুরের কংগ্রেস নেতারাও বিজেপিতে চলে আসবেন। বিজেপির রাজ্যে তথা জাতীয় স্তরে একচ্ছত্র আধিপত্যের বার্তা যাবে।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, রাহুলের অবস্থান হল, তিনি কমল নাথের পরে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনতে চান। কমলের সঙ্গে যাতে বিধায়ক, নেতারা বিজেপিতে না যান, মধ্যপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত নেতাদের তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy