—প্রতীকী চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে নির্দল হিসেবে কুড়মিরা ভোটে লড়ার কথা আগে ঘোষণা করলেও, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কেও তারা প্রার্থী করতে চলেছে। পুরুলিয়া কেন্দ্রে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো নিজে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু তফসিলি জনজাতি সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম আসনটিতে মাহাতো পদবির দুই আদিবাসী মুখকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। আবার অসংরক্ষিত বাঁকুড়া কেন্দ্রের জন্য বাউরি সমাজ থেকে প্রার্থী নির্বাচনের কথা ভাবা হচ্ছে। শুক্রবার খাতড়ায় বৈঠকে বসে আদিবাসী কুড়মি সমাজ ও বঙ্গীয় দলিত অধিকার রক্ষা মঞ্চ এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৈঠক শেষে আদিবাসী কুড়মি সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় মাহাতো ও বঙ্গীয় দলিত অধিকার রক্ষা মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি দীপককুমার দুলে বলেন, “আমরা যৌথ ভাবে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই করব। নির্দল প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে এখানে বাউরি সমাজ থেকে কাউকে প্রার্থী চয়ন করা হবে।” আজ, শনিবার বাঁকুড়ায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার কথা জানানো হয়েছে।
রাজ্যে বাউরি কালচারাল বোর্ড গড়া হয়েছে অনেক আগেই। তারপরেও কেন কুড়মিদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভোট ময়দানে আসতে চলেছে বঙ্গীয় দলিত অধিকার রক্ষা মঞ্চ?
এর জবাবে ওই সংগঠনের জেলা সভাপতি দীপক কুমার দাবি করেন, “এই জেলায় বাউরি ভোট রয়েছে অনেকখানি। কিন্তু প্রকৃত সাংবিধানিক অধিকার আমরা পাইনি। কারণ আমাদের থেকে কোনও জনপ্রতিনিধি নেই। আমাদের অভাব অভিযোগের কথা তুলে ধরতেই ভোটে নামছি আমরা।” তাঁর সংযোজন, “কুড়মি সমাজ নিজেদের জাতিগতসত্তার অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের জাতিগত আন্দোলনের অনেকটাই মিল রয়েছে।”
ঘটনা হল, জনজাতি তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবিতে কুড়মিদের আন্দোলনের আঁচ গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে পড়েছিল বাঁকুড়াতেও। ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচিতে জেলায় এসে কুড়মিদের আন্দোলনে ঘেরাও হন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের সিমলাপাল, রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা ও খাতড়া ব্লকে নির্দল প্রার্থী দিয়ে লড়াই করেন কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজন। সঞ্জয়ের দাবি, অধিকাংশ আসনেই তাঁদের প্রার্থীরা জয়ী হন।
তাহলে লোকসভা নির্বাচনে কেন তাঁদের কুড়মির বদলে বাউরি সমাজ থেকে প্রার্থী করতে হচ্ছে? কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতোর যুক্তি, ‘‘কুড়মিদের জাতিসত্তার অধিকারের পাশাপাশি অন্যান্য মূলবাসীরও অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আমাদের লড়াই। ফলে কুড়মিদেরই শুধু প্রার্থী করা হবে, এমনটা নয়।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দক্ষিণ বাঁকুড়ায় আজ যাঁরা কুড়মি সম্প্রদায়ের আন্দোলনে শামিল হয়েছেন, একসময় তাঁদের অনেকেই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কুড়মি ও দলিত শ্রেণির মানুষজন পৃথক ভাবে নির্বাচনে নামলে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলেরই ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। আবার রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, রাজ্যের শাসক-বিরোধী ভোট একমুখী হয়ে বিজেপিতে গিয়েছিল গত লোকসভা নির্বাচনে। সেই ভোটেরও কিছুটা অংশ কুড়মি ও দলিত নির্দল প্রার্থীর ঝুলিতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ বার লাভ হতে পারে তৃণমূলের।
রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী তথা রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি বলেন, “নির্দল হিসেবে কে লড়াই করছেন, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থীর উপরেই ভরসা রাখবেন।’’ বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, “ওঁরা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমরা কী বলব? দেশকে শক্তিশালী করতে সর্বস্তরের মানুষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরেই ভরসা রাখবেন, বলে দিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy