Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

সংখ্যালঘু মন কোথায়, ফল বিচারে বাড়ছে ধন্দ

৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল তৈরি করেছিলেন। এর পরপরই কেশপুরে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘর্ষ শুরু হয়। সিপিএম- তৃণমূলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। দু’দলের বহু মানুষ হতাহত হয়েছিলেন।

—প্রতীকী চিত্র।

বরুণ দে
কেশপুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ০৬:৩৫
Share: Save:

সাতসকালেই চড়া রোদ। কেশপুর বাজারে দোকানটার সামনে জনা কয়েকের জটলা। ‘এ বার ভোটে কী হবে চাচা?’ মুগের জিলিপি আর মুড়ি দিয়ে প্রাতরাশে খানিক বিরতি পড়ল! ঠোঙা হাতে ‘চাচা’র সবিস্ময় প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ বার আর তৃণমূলকে ভোট দেব কি না ভাবছি!’’ কেন গো? জবাব এল, ‘‘আমাদের মতো গরিব মানুষদের বাড়ি দেয়নি। অথচ, যাদের দু’তলা আছে, তাদের বাড়ি দিয়েছে। তাদের তিনতলা হচ্ছে!’’

দিন কয়েক আগেই তৃণমূল ‘প্রভাবিত’ ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের একটি সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে কেশপুরে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ‘ঘরের ছেলে’, ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী ওরফে দেব। কী বললেন? দেব শোনালেন, ‘‘ওঁদের বললাম, দোয়া চাইবেন ঈশ্বরের কাছে, কেশপুরে যেন শান্তি থাকে।’’ জুড়লেন, ‘‘কেশপুরের ইতিহাসে আজ অবধি দাঙ্গা হয়নি। সংখ্যাগুরু- সংখ্যালঘু বলে আলাদা কিছু নেই এখানে। বিজেপি প্রার্থীই অশান্তি করার চেষ্টা করছেন!’’

বিজেপি ‘ভীতি’ সিংহভাগ সংখ্যালঘুর মনে স্পষ্ট। কেশপুরে এটাও স্পষ্ট, বিজেপি যত সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসাবে, ‘ঘরের ছেলে’ দেবের লড়াই তত কঠিন হবে। দুর্নীতির অভিযোগ, না কি লক্ষ্মীর ভান্ডারের খয়রাতি, কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ভোটারেরা, তার উপরেও তৃণমূলের ভোটভাগ্য অনেকটা নির্ভর করছে এখানে। অনেক খুনোখুনি, রক্তপাতের সাক্ষী এই কেশপুর। সে বাম- আমল হোক কিংবা তৃণমূল- আমল। এ বার এখনও রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি। ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেবকে দলের নেতাকর্মীরা তাঁকে বলতে শুনেছেন, ‘‘ঘাটাল মানেই কেশপুর। কেশপুরের উপর কিন্তু সবারই চোখ আছে। ঘাটাল জিততে গেলে কেশপুর চাই।’’ ২০১৪, এমনকি ২০১৯ এও ঘাটাল লোকসভা জিততে এত পরিশ্রম করতে হয়নি তৃণমূলকে। কারণ, ‘পাশে’ ছিল কেশপুর। ২০১৪- তে কেশপুর থেকে তৃণমূলের ‘লিড’ ছিল এক লাখের উপর। ২০১৯- এ তাদের ‘লিড’ ছিল এক লাখের সামান্য কম, তবে নব্বই হাজারের বেশিই। তা হলে চিন্তা কীসের? তৃণমূলের চিন্তা বাড়িয়েছে একুশের বিধানসভা ভোটের ফলই। যে ভোটে এখানে তৃণমূলের ‘লিড’ কমে হয়েছে একুশ হাজারের কাছাকাছি। তাতে কী! গত পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে এখানে ‘লিড’ প্রায় ১ লক্ষ ৬৯ হাজার!

৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল তৈরি করেছিলেন। এর পরপরই কেশপুরে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘর্ষ শুরু হয়। সিপিএম- তৃণমূলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। দু’দলের বহু মানুষ হতাহত হয়েছিলেন। ১৯৯৮- ২০০০ সালে কেশপুরে তৃণমূলের ‘রবিনহুড’ ছিলেন মহম্মদ রফিক। এখন তিনি জেলা পরিষদ সদস্য। এ বার ‘লিড’ কত হতে পারে? রফিক শোনাচ্ছেন, ‘‘এ বারে আমাদের লক্ষ্য, এক লক্ষ পার!’’ কেশপুর বাজারে দেখা শেখ নাসিরুদ্দিন, শেখ আজহারদের সঙ্গে। নাসিরুদ্দিন বলছিলেন, ‘‘লুঠপাট, মারপিট আর ভাল লাগে না। অনেক তো হয়েছে ও সব!’’

কেশপুরে ঘনঘন প্রচারে আসছেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। প্রচারে এসে তিনি গ্রামবাসীকে শোনাচ্ছেন, ‘‘দেখব কত বড় গুন্ডা আছে। মানুষ ভোট দিতে পারলে ৫০ হাজার ভোটে কেশপুর থেকে হারবেন উনি (দেব)।’’

ভোটের মরসুমে জামশেদ আলি ভবনে যথারীতি লাল ঝান্ডা উড়ছে। হারানো জমি কী ফিরছে? ঘাটালের বাম প্রার্থী তপন গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মানুষ নীরবে ভোট দেবে। আমাদের সমর্থন করবে।’’ প্রচারে এসে তৃণমূল প্রার্থী শুনিয়েছেন, ‘‘আমি আশাবাদী, ভাল লিডই পাব।’’ ‘ডায়লগে নয়, ভরসায় টপ’। কেশপুরে ঢোকার আগে আগে এক সংস্থার বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং ছিল। রাস্তার পাশে। ওই ক্যাচলাইনে। দেবের ছবিও ছিল সেখানে। এক দমকা হাওয়ায় সেই হোর্ডিং খুলে পড়ে গিয়েছে। বেশ কয়েক মাস আগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 TMC minority vote Keshpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE