—প্রতীকী চিত্র।
গরম পড়তেই অধিকাংশ এলাকায় শুরু হয়েছে পানীয় জলের হাহাকার। নতুন মাসের প্রথমে এখনও বেতন মেলেনি অধিকাংশ অস্থায়ী কর্মীর। একের পর এক প্রকল্পের টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। জল প্রকল্পের ‘মাস্টার প্ল্যান’ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। লোকসভা ভোটের প্রচারে পানিহাটি পুরসভার এ হেন বেআব্রু অবস্থাকেই হাতিয়ার করে পথে নেমেছে বিরোধীরা। ১৫ বছরের তৃণমূল সাংসদ এখনও পর্যন্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারলেন না কেন— সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এ হেন সমস্যায় জর্জরিত পানিহাটিকে নিয়ে অস্বস্তিতে খোদ শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিদের বড় অংশ। পানিহাটির নাগরিক পরিষেবার এই বেহাল অবস্থা নিয়ে মঙ্গলবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে সরব হন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। আগামী দিনে পানিহাটিতে প্রচারে এই দিকগুলি আরও বেশি করে তুলে ধরার কথা বলছেন তিনি। একই রকম অভিযোগ বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তেরও। পানিহাটি পুর এলাকারই বাসিন্দা শীলভদ্রের কথায়, ‘‘বাড়িতে দু’ঘণ্টাও পানীয় জল পাওয়া যায় না। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের এই এক অবস্থা। মেটেনি জঞ্জাল অপসারণের সমস্যাও। পুর প্রধান না কারও ছেলে— কে কাজ করবেন, তা নিয়েই পানিহাটির এই বেহাল অবস্থা। প্রচারে এই দিকগুলো তো তুলে ধরতেই হবে।’’
পানিহাটির বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারা পানীয় জলের সরবরাহ নিয়ে রীতিমতো তিতিবিরক্ত। সমাজমাধ্যমেও সরব হয়েছেন তাঁদের একাংশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূলের সাংসদ, প্রার্থী সৌগত রায় দাবি করেছিলেন, জিতে আসার ৬০ দিনের মধ্যে পানিহাটিতে ২৪ ঘণ্টা পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি। এমনকি, এ বার ভোটের মুখে তীব্র গরমে একের পর এক এলাকায় জলকষ্ট প্রকট হচ্ছে। সূত্রের খবর, বিটি রোডের পূর্ব দিকে ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০ নম্বর এবং পশ্চিম দিকে অর্থাৎ, গঙ্গার পাড়ের দিকে ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দিন পনেরো ধরে জলসঙ্কটে ভুগছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, আগে সকাল, দুপুর, বিকেলে জল সরবরাহ করা হত। গরমকালে রাতেও এক ঘণ্টা জল মিলত। ২০২২-এ নতুন পুর বোর্ড আসার পরে রাতের জল সরবরাহ বন্ধ। শেষ কয়েক দিন ধরে সকালে ঘণ্টা দেড়েকের জন্য জল এলেও একেবারে সরু হয়ে পড়ছে। প্রায়দিনই দুপুরের দিকে জল আসছে না। বিকেলেও সরবরাহ বন্ধ থাকছে বলে অভিযোগ। কিছু জায়গায় জলের গাড়ি পাঠিয়েও সমস্যা মেটানো যাচ্ছে না।
এ দিন সুজন দাবি করেন, বাম আমলে পানিহাটিতে দু’টি জল প্রকল্প হলেও
পরবর্তী সময়ে তৃণমূল তা ধ্বংস করেছে। তবে সৌগত বলেন, ‘‘সিপিএমের আমলে কোনও জল প্রকল্প হয়নি। আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার সময়ে প্রথমে ২৫০ কোটি ও পরে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি জল প্রকল্প করেছি। গরমে জলের চাহিদা বাড়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। অতীতের ভোটে হেরো দুই প্রার্থী বিভিন্ন অবান্তর কথা বলছেন। ওঁরা কিছুই জানেন না।’’
পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জল) তীর্থঙ্কর ঘোষের দাবি, ‘‘জলের ব্যবহার অনেক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করা হবে।’’ পানিহাটিতে প্রচারে বেরিয়ে চার দিকে জঞ্জালের স্তূপের দেখা মিলছে বলেও তোপ দাগছেন সুজন। অন্য দিকে শীলভদ্র প্রশ্ন তুলছেন, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ভাগাড়ের জন্য জমি নেওয়া হলেও কেন তা এখনও বাস্তবায়িত হল না? এ দিন সুজন দাবি করেন, অন্তর্কলহের জেরে স্বাস্থ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ, সমব্যথী প্রকল্পে প্রায় ৮ লক্ষ, মিড-ডে মিলের প্রায় ২৩ লক্ষ এবং দুয়ারে সরকার প্রকল্পে কর্মীদের সাম্মানিক খাতের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ফেরত গিয়েছে।
প্রকাশ্যে কিছু না বললেও পুর কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষুব্ধ কর্মীরাও। তাই সোমবার পানিহাটি পুরসভার ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে কার্যত কেউই যোগ দেননি। অনুপস্থিত ছিলেন সিংহভাগ পুরপ্রতিনিধিও। এ দিনও অবসরপ্রাপ্ত ও অস্থায়ী কর্মী মিলিয়ে প্রায় ১১০০ জনকে বেতন ও পেনশন দিতে পারেনি পুরসভা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy