মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। ছবি: পিটিআই।
সম্প্রতি কলকাতায় এসে সব ক’টি দলের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তখনই রাজ্যের বিভিন্ন নির্বাচনে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে একাধিক দফায় ভোট চেয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। বিপরীতে, রাজ্য জুড়ে এক দফায় ভোট চায় শাসক দল তৃণমূল। শনিবার কমিশন ভোট ঘোষণা করার পরে দেখা গেল, ভোট-হিংসা সংক্রান্ত অভিযোগগুলিকে মাথায় রেখেই সাত দফায় ভোট করার কথা ঘোষণা করা হল পশ্চিমবঙ্গে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে এতগুলি দফায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে আর শুধু যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ এবং নীতীশ কুমারের বিহারে। তবে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গে সাত দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছিল। সে দিক থেকে দেখতে গেলে এ বারের ঘোষণা নতুন কিছু নয়। যদিও, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় কিছু প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।
দিল্লিতে শনিবারের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, তাঁদের চারটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে এ বারে। পেশিশক্তি, অর্থশক্তি, আচরণবিধি ভঙ্গের প্রবণতা এবং ভুয়ো তথ্যের প্রচার। রাজীব কুমার মন্তব্য করেন, কিছু রাজ্যে অর্থশক্তি কাজ করে, কিছু রাজ্যে পেশিশক্তি।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনের ব্যাখ্যা, ভোট-পর্ব ভাগের সময়ে রাজনৈতিক হিংসার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। যে তিন রাজ্যে সাত দফায় ভোট হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক হিংসার অতীত অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এমন অভিযোগ যথেষ্ট। তাই ঝুঁকি না নিয়ে সাত দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজীব কুমার স্পষ্ট জানান, ‘‘নির্বাচন চলাকালীন রাজনৈতিক সংঘর্ষকে কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’’
তবে এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীরা অন্য প্রশ্নও তুলেছেন। তাঁদের এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোট-হিংসাই যদি দফা-ভাগের মূল উদ্দেশ্য হয়, তা হলে উত্তরবঙ্গের আট আসনে কেন তিন দফায় ভোট হচ্ছে? আর উল্টো দিকে, সন্দেশখালি, ভাঙড় ও ক্যানিংয়ের ভোট কী ভাবে এক দিনে হচ্ছে? সাম্প্রতিক অতীতের কথা তুলে তাঁরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে কোচবিহারের একটি নির্দিষ্ট এলাকা বাদ দিলে বাকি গোটা উত্তরবঙ্গে সে ভাবে হিংসার অভিযোগ খুবই কম। অথচ সম্প্রতি সন্দেশখালি তোলপাড় হচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে। তেমনই এক বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটে রক্তাক্ত হয়েছিল ভাঙড়, ক্যানিংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। অথচ সন্দেশখালি (বসিরহাট কেন্দ্র), ভাঙড় (যাদবপুর কেন্দ্র), ক্যানিং (জয়নগর কেন্দ্র) তো বটেই, এমনকি ‘নজরকাড়া’ আসন ডায়মন্ড হারবারেও ওই একই দিনে (১ জুন) ভোট। একই ভাবে কাঁথি, তমলুকের মতো ওজনদার কেন্দ্রেও এক দিনে (২৫ মে) ভোটগ্রহণ করা হবে অন্য আরও সাতটি কেন্দ্রের সঙ্গে। দুই আসনেই একাধিক এলাকা আছে, যেগুলি পঞ্চায়েত ভোটের সময় উত্তপ্ত হয়েছিল।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন কিন্তু মনে করছে, ভোটের সাতটি দফার জন্য আসনের বিন্যাস, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট সম্পন্ন করায় বাধা হবে না। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ় আফতাব বলেন, ‘‘কমিশন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ঝুঁকির মাত্রা জরিপ বা ‘ভালনারেবিলিটি ম্যাপিং’ করছে। নানা মাপকাঠিতে ক্রিটিক্যাল বা জটিল পরিস্থিতির ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়। যেমন, কোথায় অতীতে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে বা কোথায় মাত্র ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে, কোন ভোটকেন্দ্রের ৭৫ শতাংশ ভোটই এক জন প্রার্থীর ঝুলিতে গিয়েছে, বা কোথায় পুনর্নির্বাচন করাতে হয়েছে— সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
সেই হিসেব অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনীরও ভাগাভাগি হবে, জানালেন আফতাব। তিনি বলেন, ‘‘সব কিছু দেখেই ঠিক হচ্ছে, কোথায় কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। যা বোঝা যাচ্ছে, প্রতি কেন্দ্রেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।’’
গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই সব থেকে বেশি, ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই ১৫০ কোম্পানি অতি শক্তিশালী বাহিনী চলে এসেছে। টহলও শুরু হয়েছে। লোকসভা ভোটের প্রথম পর্যায়েই ২৫০ কোম্পানি বাহিনী থাকার কথা। এ বার প্রধানত সিআরপিএফ জওয়ানদের মোতায়েন করা হবে। তাতে সতর্কতা আরও আঁটোসাঁটো হবে বলে কমিশন মনে করছে।
এর মধ্যেই বেআইনি টাকা উদ্ধার, তল্লাশি অভিযান ও অন্য সামগ্রী বাজেয়াপ্তের কাজ শুরু হয়েছে। সিইও বলেন, ‘‘১ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে ৬৭.৮ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ভোটপ্রচারের খরচ দেখা হচ্ছে।’’ গত আড়াই মাসে রাজ্যে লক্ষাধিক জামিন অযোগ্য পরোয়ানার সংখ্যা ২৯ হাজারে নামিয়ে আনা জন্যও কমিশনের সিইও সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে এ দিনই রাজ্যে নির্বাচনী বিধি কার্যকর করা এবং বজায় রাখার জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশন স্ক্রিনিং কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ২২ মার্চের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গড়া হবে। নির্বাচনী বিধি নিয়ে কাল, সোমবার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কমিশনও বৈঠকে বসবে। একই সঙ্গে সিইও জানিয়েছেন, রাজ্যে তিন বছর ধরে কোনও এক পদে থাকা আধিকারিকদের নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী সরানো হতে পারে। নির্দিষ্ট অভিযোগ অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy