দীপক অধিকারী ওরফে দেব। —ফাইল চিত্র।
ঘাটালে ফের ভাইরাল অডিয়ো। একটি নয় দু’টি। তা-ও আবার একইদিনে।
সোমবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দু’টি অডিয়ো (কোনওটিরই সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। প্রথমটিতে এক মহিলার সঙ্গে কথা হচ্ছে জনৈক রামের। দ্বিতীয়টিতে কথাবার্তার প্রসঙ্গ শুনে অনেকেই অনুমান করেছেন, সেটিতে ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের ভাইরাল অডিয়ো সম্পর্কে কথা হচ্ছে দু’জনের। ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবের সাংসদ প্রতিনিধি হলেন রামপদ মান্না। প্রথম ভাইরাল অডিয়োতে কখনওই রামপদ মান্নার নামটি উচ্চারিত হয়নি। কিন্তু ঘটনা পরম্পরা এবং কণ্ঠস্বর শুনে অনেকেই মনে করছেন ভাইরাল অডিয়োর একটি কণ্ঠ সাংসদ প্রতিনিধি রামেরই। যদিও রামের দাবি, ‘‘ওই গলা আমার নয়। সময়েই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’
ঘাটালে প্রথমে ভাইরাল হয়েছিল শঙ্করের অডিয়ো। সেখানে সাংসদের বিরুদ্ধে উন্নয়নের জন্য কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন শঙ্কর। সে সময় শঙ্কর ভাইরাল অডিয়োর কণ্ঠস্বর তাঁর বলে মানতে অস্বীকার করেছিলেন। এরপর ঘাটালের ব্লক সভাপতি দিলীপ মাজির অডিয়ো ভাইরাল হয়। তিনি জানান, ভাইরাল অডিয়োয় তাঁর কণ্ঠস্বর নেই। প্রয়োজন দল বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক। ঘাটালের রাজনীতিতে দেবের ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে অবস্থান শঙ্করের। দিলীপ আবার ইদানীং দেব ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। দেবের অনুপস্থিতিতে তাঁর হয়ে অনেকটাই কাজ করেন রামপদ। তাই ভোটের আগে ক্রমান্বয়ে অডিয়ো ভাইরাল হওয়াকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মানছেন রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। সেই সূত্রেই ওই অডিয়োর কণ্ঠস্বরের একটি রামপদের হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।
প্রথম অডিয়োয় কথা হচ্ছে জনৈক রামের সঙ্গে এক মহিলার। তিনি রামের কাছে কারও চাকরির বিষয়ে জানতে চাইছেন। রাম তাঁকে আশ্বস্ত করছেন। ব্যাঙ্কে নাকি বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদে কোথায় চাকরির ব্যবস্থা করা হবে তা নিয়েও আলোচনা চলেছে কিছুক্ষণ। রাম জানিয়েছেন, বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদে এখনও কোনও নিয়োগ করা হয়নি। প্রসঙ্গত, শঙ্করের অডিয়ো ভাইরাল হওয়ার আগে পুলিশ ও তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে দেব ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তারপরই দেব তদন্তের স্বার্থে একই সঙ্গে তিনটি পদ ছেড়েছিলেন। এরপর জল গড়িয়েছে অনেক। দেবের সঙ্গে একইদিনে বৈঠক হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের অনেক আগেই মমতা কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ঘাটালে ফের প্রার্থী হচ্ছেন দেবই। এখানেই শেষ নয়। তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় শঙ্করকে।
ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় অডিয়োতে শোনা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি বলছেন, ‘‘আমাকে ফোন করে বলছে, দাদা ওই রেকর্ডিংটা তো তোমারই। এটা কে ভাইরাল করেছে।’’ এরপর অপর প্রান্ত থেকে আসে হাসির শব্দ। এরপর ওই ব্যক্তি বলছেন, ‘‘তুমি কেন করলে এটা, তুমি তো রুখতে পারতে।’’ উল্টোদিকের ব্যক্তি তখন বলছেন, ‘‘ধুর, ওটা রোখা যায়। থামো না। খেলটা খেলে দেব।’’ ‘‘ভাইরাল করে কী লাভ হল। শঙ্করটা গেল। তোমার সাপে বর হল হ্যাঁ। দেব খুশি! হ্যাঁ,’’ উল্টোদিকের জবাব, ‘‘লাভ হয়েছে। একদম একদম। ভাল হয়েছে।’ রাজনীতিকদের অনেকেই বলছেন, শঙ্করের অডিয়ো ভাইরাল সম্পর্কিত কথাবার্তাই হচ্ছিল, এটা একপ্রকার বলাই যায়।
ভোর দোরগোড়ায়। তার মাঝে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ঘাটালে তিন মাথার অডিয়ো ভাইরালের ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন দলের কর্মীদের একাংশ। ক্ষুব্ধ দলের ব্লক ও অঞ্চল স্তরের নেতৃত্বরাও। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতে ঘাটাল তৃণমূলে একটা ছন্নছাড়া ভাব। রাজনীতির রাশ একক ভাবে কারও হাতে নেই। দু’দিন বাদেই দেবের প্রথম কর্মসূচি। পদ্ম প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভাইরাল অডিয়ো নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ফলে একের পর এক ভাইরাল অডিয়োয় কার স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন নিচুতলার কর্মীদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy