Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

‘ভোট করানোর’ অস্ত্র মোবাইলও, পুলিশ অবাক নাকা তল্লাশিতে

গত কয়েক মাসে শহর এবং শহর সংলগ্ন একাধিক জায়গায় গাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময়ে এমন প্রচুর পরিমাণে মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৪ ০৭:৪৭
Share: Save:

‘পার্টির কাজে যাচ্ছে!’— ভোটের আগে উত্তর কলকাতায় নাকা তল্লাশি চলাকালীন একটি গাড়ির ভিতর থেকে বস্তা বস্তা কি-প্যাড মোবাইল ফোন উদ্ধার হওয়ার পরে গাড়িতে থাকা লোকজনের থেকে এমনই উত্তর পেয়েছিলেন সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। পার্টির কাজে মানে? এর পরে এই প্রশ্নের উত্তরে আরও অবাক হতে হয় তাঁদের। ধাপে ধাপে ফোন ব্যবহারের রূপরেখা জানিয়ে বলা হয়, ‘‘ভোট করাতেই এই ফোন লাগবে!‘‘ কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ফোনগুলি জমা রেখে দেয় পুলিশ। আটকও করা হয় তিন জনকে।

এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক মাসে শহর এবং শহর সংলগ্ন একাধিক জায়গায় গাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময়ে এমন প্রচুর পরিমাণে মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিছু ক্ষেত্রে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মেলেনি। যা নিয়ে পুলিশের বড় কর্তাদের কাছে রিপোর্ট দিয়ে থানা থেকে জানানো হয়েছে, মূলত কলকাতা থেকেই কয়েক হাজার মোবাইল ফোন গিয়েছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। এই ফোনগুলির মধ্যে সব চেয়ে বেশি দর কি-প্যাড ফোনের। পাশাপাশি, বেশ কিছু স্মার্টফোনও এই ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন? পুলিশেরই একটি সূত্রের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, মূলত বুথ স্তরের কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য হাতে হাতে কম দামের কি-প্যাড ফোন তুলে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য রাতারাতি কয়েক হাজার সিম কার্ডও চালু করা হয়েছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। যার বেশির ভাগই ভুয়ো নথির ভিত্তিতে হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা।

এক তদন্তকারীর দাবি, বন্দর এলাকার একটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে এমন কয়েক হাজার মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার পথে আটক করায় এক যুবক জানিয়েছেন, তাঁদের দলের শীর্ষস্তর থেকেই নাকি এমন ফোন কিনে আনতে বলা হয়েছে। টাকা দেবে দলই। ওই তদন্তকারীর কথায়, ‘‘এক দলকে মোবাইল ফোন আনার, আর এক দলকে সিম কার্ডের বন্দোবস্ত করতে বলা হয়েছে। এর পরে অঞ্চলের প্রতিটি বুথ ধরে ধরে দল তৈরি করে প্রত্যেকের হাতে একটি করে মোবাইল ফোন ও একটি করে সিম কার্ড দেওয়া হয়েছে। ভোট এবং দলের কাজ সংক্রান্ত যে কোনও কথাবার্তা নতুন ফোনটির মাধ্যমে করতে বলা হয়েছে। এমনকি, এই সব ফোনই ভোটের দিন চমক-ধমক, হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে ভোট দিতে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কাজেও ব্যবহার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।’’ পুলিশের দাবি, এমন হুমকির প্রমাণ থেকে যাওয়ার ভয়েই আরও বেশি করে এমন ‘বোকা ফোন’ ব্যবহার করা হয়েছে।

লালবাজারের সাইবার শাখার এক গোয়েন্দা জানাচ্ছেন, স্মার্টফোনে ধরা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি যতটা, তথাকথিত ‘বোকা ফোন’ বা কি-প্যাড ফোনে তার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘যে কোনও ধরনের ফোনে সিম কার্ড ভরলেই সেটিকে চিহ্নিত করে খোঁজ করা যায়। সিম কার্ডটির নম্বর ধরে যে টেলিকম সংস্থার সঙ্গে সেটি যুক্ত, তাদের কাছে টাওয়ার লোকেশন চেয়ে পাঠায় পুলিশ। প্রথমে একটি বৃহৎ অঞ্চলের লোকেশন দেওয়া হয়। তার পরে ধাপে ধাপে সেই বৃত্ত আরও কমিয়ে এনে একটি নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে দেয় টেলিকম সংস্থা।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের দিকে অনেক সময়েই নির্দিষ্ট ভাবে লোকেশন পাওয়া যায় না। তখন নির্ভর করতে হয় কল ডিটেল রেকর্ড-এর (সিডিআর) উপরে। এ ক্ষেত্রে যিনি ফোনটি ব্যবহার করছেন তাঁকে ‘এ’ ধরা হয়। ‘এ’ যাঁকে ফোন করছেন তিনি ‘বি’। ‘বি’-এর সঙ্গে যিনি কথা বলছেন, তাঁকে ‘সি’ ধরা হয়। ‘এ’ যাতে সন্দেহ না করেন, তাই প্রথমে ‘সি’-র কাছে পৌঁছনো হয়। ‘সি’ থেকে 'বি' হয়ে 'এ'-কে চিহ্নিত করা হয়।

কিন্তু ভোটের কাজে ফোন নিয়ে এত গোপনীয়তার কারণ কী? ভোটে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ঘাটালের কেশপুরেই দেখা গেল, দলের এক কর্মীকে নেতা ধমক দিয়ে বলছেন, ‘‘সব শুনছে। সব রেকর্ড হচ্ছে। যা বলার ওই ফোন থেকে বলবি। প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপ কল করবি।’’ পুলিশ জানাচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ হোক বা কথোপকথন, তা ‘এনক্রিপটেড’ থাকায় তার গোপনীয়তা রক্ষা করা সহজ হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE