প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
এক হাতে আবেগ। অন্য হাতে তথ্য। ভোট-ব্যাঙ্কে মহিলা মন জয়ে চেষ্টার কসুর করছেন না নরেন্দ্র মোদী! বিশেষত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায়।
বিরোধী নেত্রী থাকার সময় থেকেই মহিলাদের সমর্থন ভোট-যুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর অন্যতম বড় অস্ত্র। এখন সরকারে থেকে ‘কন্যাশ্রী’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র সহায়তার দৌলতে সেই বন্ধন আরও জোরালো হয়েছে। শাসক দলের সেই মহিলা ভোট-ব্যাঙ্কেই এ বার ভাঙন ধরাতে চাইছে বিজেপি। সন্দেশখালি-কাণ্ডের পাশাপাশি তারা কাজে লাগাতে চাইছে নারী কল্যাণে মোদী সরকারের নানা প্রকল্পের সুবিধাকে। বারাসতে বুধবার ‘নারী শক্তি সম্মান সমাবেশে’ এসে সেই লক্ষ্যেই বিজেপিকে এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।
সন্দেখশালির ঘটনা বা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পরিসংখ্যানে যাওয়ার আগে মোদী এ দিন শুনিয়েছেন তাঁর জীবনের পুরনো গল্প। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণত বলি না। কিন্তু এখানে এত মা-বোনেদের দেখে বলতে ইচ্ছা করছে।’’ বিরোধী জোটের নেতারা (মূলত আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব) মোদীকে আক্রমণ করে বলেছেন, তাঁর নিজের পরিবার বলে কিছু নেই। তাই তিনি পরিবারতন্ত্র নিয়ে এত কথা বলেন। বিজেপি তার পাল্টা ‘মোদী কা পরিবার’ নামে প্রচার শুরু করেছে। সেই সূত্রেই মোদী এ দিন বলেছেন, ‘‘কেউ কেউ ভাবছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ‘দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা আমার পরিবার নিয়ে আক্রমণ করেছেন বলেই আমি আপনাদের সকলকে আমার পরিবার বলছি। আসলে তা নয়। এর পিছনে পুরনো কাহিনী আছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর বয়ানে, ‘‘কম বয়সে ঝোলা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। পকেটে একটা পয়সা ছিল না। তখন কেউ আমাকে চেনে না, জানে না। পকেটে কিছু নেই, ঝোলা নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু এক দিনও অভুক্ত থাকিনি। মা-বোনেদের কেউ না কেউ জিজ্ঞেস করতেন, কিছু খাওয়া হয়েছে?’’ মোদীর দাবি, ‘‘এই মা-বোনেরা, এই আপনারাই তো আমার পরিবার। দেশের ১৪০ কোটি মানুষ আমার পরিবার!’’
তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল পাল্টা খোঁচা দিয়েছে, অপরাধী, ধর্ষক বা ধান্দাবাজ ব্যবসায়ীরাই মোদীর ‘নিজস্ব পরিবারের সদস্য’! মোদী অবশ্য সে সবে না দমে তাঁর সরকারের কাজের দিকে নজর টানার চেষ্টা করেছেন। লোকসভা ও বিধানসভায় আসন সংরক্ষণের নীতির কথা বলে আম মহিলাদের বা তিন তালাক তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গ এনে মুসলিম মহিলাদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন। সেই সঙ্গেই উল্লেখ করেছেন, ‘জনধন’ প্রকল্পে কোটি কোটি মহিলা খাতা খুলেছেন। তার মধ্যে তিন কোটি মহিলা বাংলার। স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে ১০ কোটি মহিলার মধ্যে বাংলা থেকে রয়েছেন এক কোটি ২৫ লক্ষের বেশি। মোদী সরকারের ১০ বছরে মহিলাদের স্ব-রোজগারের জন্য ৮ লক্ষ কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে। আর বাংলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দেওয়া হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। দেশের তিন কোটি মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, ইতিমধ্যে ‘লাখপতি দিদি’ হয়েছেন এক কোটি। তার মধ্যে বাংলার ‘লাখপতি দিদি’ ১৬ লক্ষের বেশি। ‘মুদ্রা যোজনা’র বিনা গ্যারান্টি ঋণে এক লক্ষ ২৫ হাজার কোটির বেশি টাকা পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা পেয়েছেন। এই পরিসংখ্যান পেশ করার পাশাপাশিই মোদীর অভিযোগ, বাংলায় তৃণমূল নামক ‘গ্রহণ’ রয়েছে বলেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আরও বেশি সুবিধা থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।
তৃণমূলের তরফে সুস্মিতা দেব, শশী পাঁজারা মোদীর ‘নারী শক্তি বন্দনা’কে অবশ্য ‘দ্বিচারিতা’ বলে উ়়ড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও বারাসতের সমাবেশে বিজেপির মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় সভানেত্রী বনতী শ্রীনিবাসন, সাধারণ সম্পাদক বিজয়া রাহাতকর, রাজ্য সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালেরা মোদীকেই ‘ভরসার কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। আর মোদীর তোপ, ‘‘কেন্দ্রে এনডিএ-র জয় নিশ্চিত দেখে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। পুরো দমে তাঁরা মোদীকে গালি দিচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ লোকজন আমার পরিবার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই বাংলার, এই দেশের কোনায় কোনায় সব মা-বোন— এটাই আমার পরিবার!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy