প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত।
মোদী বলেন, ‘‘কার্তিককে ভোট দিয়ে আমাকে সাহায্যের জন্য দিল্লি পাঠান। আপনারা প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে বলুন, মোদীজি আপনাদের প্রণাম জানিয়েছেন।’’ এর পর ‘বন্দে মাতরম’ বলে বক্তৃতা শেষ করেন মোদী।
মোদী বলেন, ‘‘বাংলায় দুর্নীতি, অপরাধ এখন ফুলটাইম ব্যবসা। এখানে কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর প্রকাশ্যে হামলা হয়। এখানে রাজনৈতিক হত্যা হয়। বাংলার সব মানুষ বলছে, তৃণমূল মানে বিশ্বাসঘাতকতা, অত্যাচার, দুর্নীতি, পরিবারবাদ। ’’
মোদী আবারও বাংলায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তিনি বলেন, ‘‘মমতাদিদির সরকারের আমলে বাংলায় মা-বোনেরা সুরক্ষিত নয়। দেবীর পুজো করে যে বাংলা, তাকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে তৃণমূল? সন্দেশখালির গুন্ডারা মহিলাদের উপর অত্যাচার করেছে। সেই অত্যাচারের অনুমতি কে দিয়েছিল? অন্য মহিলারা যখন নির্যাতিতাদের চোখের জল মুছতে গিয়েছিল, তখন তৃণমূল সরকার অনুমতি দেয়নি। এই তৃণমূলকে সাজা দেবেন তো? এদের সাজা দেবেন তো?’’ মোদীর মুখে উঠে এসেছে সুকুমার রায়ের ছড়া লাইনও। তিনি বলেন, ‘‘আরে ছি ছি রাম রাম! বোলো না বোলো না, চলছে যা জুয়াচুরি, নেই তার তুলনা। ’’
মোদী সিএএ নিয়েও কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলকে। রায়গঞ্জে তিনি বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব দেয় যে সিএএ, তার বিরোধিতা করছে। মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। মিথ্যা প্রচার করছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গাদের বাংলার ডেমোগ্রাফি এবং আইন ভাঙার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধির জন্য বাংলার ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘এখানে রামনবমীর জন্য কোর্টে যেতে হয়। তৃণমূল অনুমতি দেয় না। অথচ রামনবমী, দুর্গাপুজোর শোভাযাত্রায় পাথর ছোড়ার অনুমতি দেয় তৃণমূল। তৃণমূল ভোটারদের নিজেদের মতো ভোট দেওয়ারও অনুমতি দেয়নি। বিভাজনের শিকার বাংলার ভাইবোনেরা।’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মোদী আগে বাংলায় এমস চালু করতে চেয়েছিল। বাংলার সরকার বলুক, আমাদের অনুমতি কেন নেওয়া হয়নি। ওরা উন্নয়ন করতে দিচ্ছে না। পিএম আবাস যোজনায় গরিবদের বদলে ঘর ভুল লোকদের দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা দিয়েছিল। তৃণমূল সেই টাকাও খেয়ে নিচ্ছে। এই তৃণমূলকে কি ক্ষমা করা উচিত? বাংলার উন্নয়ন নিয়ে ওদের চিন্তা নেই। ওরা ইচ্ছা করে বাংলাকে গরিব বানিয়ে রাখতে চায়, যাতে ওদের কারবার ফুলেফেঁপে ওঠে। কে সুবিধা পাবে, সেটা আইন ঠিক করে না, এখানে তোলাবাজ, গুন্ডারা সব সিদ্ধান্ত নেয়।’’
মোদী বলেন, ‘‘অতীতে কংগ্রেস বিরোধী রাজ্যকে টাকা দিত না। টাকার জন্য দিল্লিতে ঘুরতে হত। তখন আমি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। কংগ্রেস দেখত, কোথায় ওদের সরকার, কোথায় বিরোধীরা। আজ ছবিটা অন্য রকম। আমি সব জেলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পাঠাই। বাংলাতেও পাঠাই। তৃণমূল চায়, মোদীর প্রকল্প যাতে সাধারণের কাছে না পৌঁছয়। হয় তারা কেন্দ্রের যোজনা বন্ধ করে দেয়, নয়তো নিজেদের স্টিকার লাগিয়ে দেয়। সারা দেশে কোটি কোটি মানুষ আয়ুষ্মান যোজনায় ফ্রি চিকিৎসা পাচ্ছেন। বাংলায় তৃণমূল সরকার সেই সুবিধা দিতে দিচ্ছে না।’’
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উঠে এল মোদীর ভাষণে। তিনি জানান, শ্যামাপ্রসাদ কাশ্মীরের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তিনিই তাঁর প্রেরণা। বাংলার বিকাশে কোনও কসুর করা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মোদী বলেন, ‘‘১০ বছরে যা হল, তা ট্রেলার ছিল। এখনও দেশ এবং বাংলাকে অনেক আগে নিয়ে যেতে হবে। এই কাজ শুধু বিজেপিই পারবে। এত বছর বাংলায় যারা সরকারে ছিল, তারা বাংলাকে পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বিকাশ হতে দেয়নি।’’ তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বাংলার বিকাশ কে করতে পারে? আপনাদের স্বপ্ন কে পূরণ করবে? আপনাদের জন্য রাত-দিন কে দৌড়তে পারবে?’’
মোদী বলেন, ‘‘পিএম আবাস যোজনায় ৫০ লাখের বেশি ঘর মঞ্জুর করা হয়েছে বাংলায়। জল-জীবন যোজনায় ৮০ লক্ষ ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছে বিজেপি। এই লাখ লাখ পরিবার জলসঙ্কটে ভুগছিল। উজ্জ্বলা যোজনায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ পরিবার রান্নার গ্যাস পেয়েছে। বাংলার ৬ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে, যাতে গরিবের ঘরে উনুন বন্ধ না হয়। কোনও বাচ্চা যেন অভুক্ত না থাকে। পিএম গ্রাম সড়ক যোজনায় বাংলায় ২০ হাজার কিলোমিটারের বেশি জাতীয় সড়ক হয়েছে। তালিকা এতই দীর্ঘ যে, গোনা যাবে না।’’
মোদীর আশ্বাস, পূর্ব ভারতেও বুলেট ট্রেন চলবে। দেশের মেয়েদের আত্মনির্ভর করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিনামূল্যে বিদ্যুতের জন্য কোটি মানুষকে সোলার প্যানেল দেওয়া হবে। ‘মুদ্রা যোজনা’য় বাংলার যুবকেরা ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। এ সবই ‘মোদীর গ্যারান্টি’ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বালুরঘাটের মতো রায়গঞ্জেও মোদীর মুখে শোনা যায় সেই স্লোগান, ‘৪ জুন ৪০০ পার’, ‘আবার এক বার, মোদী সরকার’। মোদী জানালেন, বাংলায় স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গোটা দেশকে পথ দেখিয়েছেন। সেই বাংলায় তিনি তাঁর ‘গ্যারান্টি’ ঘোষণা করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপির ইস্তাহারই মোদীর ‘গ্যারান্টি কার্ড’। মোদীর গ্যারান্টি হল, গ্যারান্টি পূর্ণ হওয়ার গ্যারান্টি। আগামী পাঁচ বছরে মোদী আবাস যোজনায় ৩ কোটি মানুষের ঘর করে দেওয়া। বন্দে ভারত, অমৃত ভারত ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি। সকল মানুষ পাবেন ‘মুক্ত চিকিৎসা’। এখন আর কাউকে অসুখ লুকিয়ে রাখতে হবে না। খরচের চিন্তা নেই। আপনার ছেলে দিল্লিতে রয়েছেন, তিনি চিকিৎসা করাবেন।’’
‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে ভাষণ শুরু করেন মোদী। বাংলার মানুষকে জানালেন, নববর্ষের প্রীতি, শুভেচ্ছা। তিনি জানালেন, অষ্টমীর দিনে দুর্গাপুজোর ভূমিতে ভৈরবী কালী, বোল্লা কালীর আশীর্বাদ নিতে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দিন আগে বাংলায় নববর্ষ পালন হয়েছে। আগামী কাল রামনবমী পালন হবে রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে এত মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, বাংলার নতুন বছর নতুন আশা নিয়ে আসছে।’’
বালুরঘাটের পর প্রধানমন্ত্রীর রায়গঞ্জের জনসভাতেও ভিড়। বিজেপি মহিলা কর্মীরা ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁকে দেখে চিৎকার করতে শুরু করেন দর্শকাসনে বসে থাকা লোকজন।
মঙ্গলবার দুপুরে বালুরঘাটে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হয়ে প্রচার করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে একের পর এক তোপ দাগেন। প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, তৃণমূল ইচ্ছা করেই জনজাতিদের উন্নয়নে বাধা দিয়েছে। কিন্তু জনজাতি তৃণমূলের ‘দাস’ হয়ে থাকবে না, দাবি মোদীর। বালুরঘাটের সভা সেরে রায়গঞ্জে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy