প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
গত কালই পঞ্জাবে পা রেখে তাঁর নির্বাচনী বক্তৃতায় চুরাশির শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকে বিঁধতে শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ গুরুদাসপুর ও জালন্ধরের জনসভাতে তাঁকে আরও উগ্র হতে দেখা গেল।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, হরিয়ানার পাশাপাশি পঞ্জাবেও এ বার আদৌ স্বস্তিতে নেই বিজেপি। কংগ্রেস এবং আপ-এর মধ্যে দিল্লিতে যে ভাবে জোট হয়েছে, পঞ্জাবে তা হয়নি ঠিকই। কিন্তু কৃষকদের ক্ষোভ সেখানে এতটাই তীব্র যে, বিজেপি প্রার্থীরা হালে পানি পাচ্ছেন না, এমন রিপোর্টই উঠে আসছে দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায়। তাই দলের কান্ডারি নরেন্দ্র মোদী উগ্র অবতারে আসরে নেমেছেন। এখানে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দু-মুসলিমের তাস খেলেননি, কিন্তু শিখগুরুদের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত শিখদের প্রতি তাঁর ‘কর্তব্য’ এবং কংগ্রেসের পঞ্জাবের প্রতি ‘নির্মম’ মনোভাবকে তিনি বারবার প্রচারে এনেছেন। বিভাজন করতে চেয়েছেন শিখ ও মুসলিমদের মধ্যে। সেই সঙ্গে দাবি করছেন, মনমোহন সিংহ সরকারের তুলনায় তিনি কৃষকদের সমস্যার অনেক বেশি সুরাহা করেছেন।
আজ পঞ্জাবের জনসভায় মোদী বলেন, “ইন্ডিয়া জোটের আসল মুখ পঞ্জাবের তুলনায় ভাল কে জানে? আমাদের পঞ্জাবকে সবচেয়ে ক্ষতবিক্ষত তো তারাই করেছে। স্বাধীনতার পরে দেশভাগের যন্ত্রণা, স্বার্থপর মানসিকতার জন্য পঞ্জাবে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা, এখানকার ভাইদের উপর আক্রমণ— এর মধ্যে কোনটা করতে বাকি রেখেছে কংগ্রেস? এক দিকে তারা এখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উস্কানি দিয়েছে, অন্য দিকে দিল্লিতে শিখদের উপর নির্মম আঘাত এনেছে।” এর পরেই নিজের সরকারের কৃতিত্বকে সামনে এনে মোদীর বক্তব্য, “যত দিন কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারে ছিল, দাঙ্গাকারীরা নির্ভয়ে ঘুরছিল। মোদীই প্রথম অপরাধীদের ফাইল খোলে। মোদীই প্রথম দোষীদের শাস্তি দেয়। কংগ্রেস এবং তার শরিকেরা এর ফলে অস্বস্তিতে। আর সে কারণে দিনরাত তারা মোদীকে গালি দিয়ে যাচ্ছে।”
কংগ্রেসকে আজ ‘পাকিস্তানের বন্ধু’ বলতেও ছাড়েননি মোদী। মণিশঙ্কর আইয়ারের করা পাকিস্তানের বোমা সংক্রান্ত মন্তব্যটিকে প্রায় প্রতিটি জনসভায় দৈনিক এক বার করে কাজে লাগাতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। আজ তাঁর কথায়, “এই ইন্ডিয়া জোট দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে খুবই বিপদ বয়ে আনতে পারে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ফেরানোর কথা বলছে তারা। চায় কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ফিরে আসুক। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে কাশ্মীরকে আবার তুলে দিতে চায়। তারা আবার পাকিস্তানকে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাতে চায়। গোলাপ পাঠাতে চায়। বিনিময়ে পাকিস্তান আমাদের দেশে বিস্ফোরণ চালিয়ে যাবে। কংগ্রেসের নেতা বলছেন, পাকিস্তানের কাছে পরমাণু বোমা রয়েছে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে!” এর পরে জনসভাকে উদ্দেশ করে মোদী বলেন, “কংগ্রেস নেতার এই কথা শুনে আপনাদের হাসি পাচ্ছে কি না!”
ক্ষমতায় আসার প্রথম পর্বেই ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর হঠাৎই বিমান ঘুরিয়ে লাহোরে তৎকলীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের বাড়ির অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন মোদী। তার এক সপ্তাহের মধ্যে পঠানকোটে হামলা চালায় পাক মদতপ্রাপ্ত জঙ্গিরা। বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে মোদীর পাক-নীতির সমালোচনা করে এসেছে বিরোধী দলগুলি। কিন্তু তাতে লোকসভা ভোটে আঁচড়ও কাটতে পারেনি কংগ্রেস। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এর ফলে ক্রমশ আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন মোদী। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে আচমকা বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর যে লাইন তিনি নিয়েছিলেন তার পুনরাবৃত্তি করতে আর কখনও দেখা যায়নি মোদীকে। আজ তাঁর কথায়, “ইন্ডিয়া মঞ্চ পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলছে। আর আমরা পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে জঙ্গিদের মেরে আসছি।”
কংগ্রেসের ‘দেশ-বিরোধী’ তথা ‘জাতীয়তাবাদ-বিরোধী’ ভাষ্যের নিন্দা করে মোদীর বক্তব্য, “কংগ্রেসের সমস্যা হল ভারতের উপরে তাদের কোনও বিশ্বাস নেই। দেশের বাইরে তারা নাক কাটাতে ওস্তাদ। বাইরে গিয়ে বলে ভারত একটি মাত্র রাষ্ট্র নয়। আর তাই তারা ভারতের পরিচয় বদলাতে চায়। রামমন্দির নির্মাণের নিন্দা করে।”
শিখ এবং মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন করতে চেয়ে আজ মোদীর বক্তব্য, কংগ্রেস বরাবর ইতিহাস বইয়ে নিজের পরিবার এবং মোগল পরিবারকেই প্রাধান্য দিয়েছে। তারা গুরু গোবিন্দ সিংহ, সাহিবজাদা অজিত সিংহ, ফতেহ সিংহদের আত্মোৎসর্গকে অগ্রাহ্য করে এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy