শুনশান: ফাঁকা পোস্তা এলাকা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
এমন নিস্তরঙ্গ ভোট আগে দেখেনি বড়বাজার। এর আগে ভোটের দিন ছোটখাটো গন্ডগোল বা বচসার ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে বড়বাজারে। কিন্তু এ বার সে সবের বালাই নেই। তবে, বড়বাজার ও পোস্তার বিভিন্ন বুথের সামনে জড়ো হওয়া ভোটারদের অনেকের মুখেই উঠে এল, আট বছর আগের দগদগে স্মৃতির কথা।
২০১৬ সালের ৩১ মার্চ। বড়বাজার ও পোস্তা এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এখনও ওই দিনটা ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্নের মতো, যার ঘা এখনও শুকোয়নি। সে দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গণেশ টকিজ়ের কাছে নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। শনিবার লোকসভা নির্বাচনের দিন বড়বাজার ও পোস্তা এলাকার বিভিন্ন বুথে ভোটারেরা আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘বিবেকানন্দ উড়ালপুল নির্মাণের কাজ এত দিনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই কাজ শেষ হলে উত্তর কলকাতার যানজটের ছবিটা হয়তো বদলাত। কিন্তু ২০১৬ সালের ৩১ মার্চের দুর্ঘটনাই সব কিছু ওলটপালট করে দিল।’’
সেই দুর্ঘটনার পরে হাওড়া থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল ওই নির্মীয়মাণ উড়ালপুলটি এখন পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। গণেশ টকিজ়ের কাছে যেখানে উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়েছিল, ঠিক তার পাশেই ভোটের দিন ফুটপাতে তেল, সাবান, বিস্কুট, ধূপকাঠির পসরা সাজিয়ে বসে ছিলেন বিকাশ মালি। উড়ালপুল দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন বিকাশের বাবা গুলাব মালি (৬৫)। তিনিও ফুটপাতে ধূপকাঠি বিক্রি করতেন। বাবার কথা উঠতেই চোখে জল বিকাশের। বললেন, ‘‘২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের কার্ড বিলি করছিলাম। হঠাৎ ফোন পেয়ে ছুটে গণেশ টকিজ়ের কাছে এসে দেখি, বাবা ভাঙা উড়ালপুলের নীচে আটকে রয়েছেন। আমরা কয়েক জন মিলে বাবা এবং আরও দু’জনকে টেনে বার করেছিলাম। দু’জন বেঁচে ফিরলেও বাবাকে বাঁচাতে পারিনি।’’
এ দিন ভোটের কথা উঠতেই ফোঁস করে উঠলেন বিকাশ। তাঁর কথায়, ‘‘কিসের ভোট? মানুষ তো উন্নয়নের আশায় ভোট দেয়। এই তার নমুনা? বড়বাজার, পোস্তা তথা উত্তর কলকাতাবাসীর কাছে বিবেকানন্দ উড়ালপুল একটা আবেগের জায়গা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই আস্ত উড়ালপুল ভেঙে পড়ল।’’ কথা বলতে বলতে চোখ চিকচিক করে উঠল বিকাশের। আঙুলে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পরে অস্থায়ী সরকারি চাকরি পেয়েছি। কিন্তু এত অল্প টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। তাই ছুটির দিন এবং অন্যান্য দিন অফিস থেকে ফিরেই ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসি। দুপুরে দোকান বন্ধ করে ভোট দিয়ে আসব।’’
বড়বাজারের ব্যবসায়ী মহলে বিজেপি-র প্রভাব বরাবরই বেশি। বিজেপির পুরপ্রতিনিধি মীনাদেবী পুরোহিত, বিজয় ওঝারাও বিবেকানন্দ উড়ালপুল নিয়ে আক্ষেপ করছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের গাফিলতিতেই নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়েছিল। এটা প্রমাণিত হয়েছে।’’ যা শুনে বড়বাজারের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি মহেশ শর্মার জবাব, ‘‘স্রেফ রাজনীতি করার জন্যই বিজেপি কাদা ছোড়াছুড়ির খেলায় নেমেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy