অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তত চার লক্ষ ভোটে জিতবেন বলে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেকেই আগাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে ভোট চাইতে গিয়ে বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ (ববি) দাস সাংসদ অভিষেকের ‘মিথ্যাচারের’ কথা তুলে ধরছেন। দিচ্ছেন ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ পরিবেশ, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। আর সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উর রহমানের ভরসা, পদব্রজে জনসংযোগ। প্রশ্ন তুলছেন অভিষেক-কথিত ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ নিয়েও। সেই সঙ্গে, এই দুই প্রার্থীই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে দাবি করছেন, সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হলে হাওয়া ঘুরতেই পারে। তৃণমূল সন্ত্রাসের অভিযোগে আমল দেয়নি।
দীর্ঘ টালবাহানার পরে দলের একদা জেলা সভাপতি অভিজিৎকে বিজেপি এখান থেকে প্রার্থী করেছে। তার পরেই এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট এবং নানা সময়ে ‘অভিষেক-বাহিনীর’ হাতে অভিজিতের আক্রান্ত হওয়ার কথা। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই প্রার্থীর বক্তব্য, “এখান থেকে আগে শমীক লাহিড়ী, সোমেন মিত্রেরা সাংসদ ছিলেন। ডায়মন্ড হারবারে কখনও এমন ভয়ের পরিবেশ ছিল না। ২০১৪-য় অভিষেককে জেতাতে তৃণমূল ৪০০ বুথ লুট করেছিল। সেই ধারা এখনও চলছে।” অভিজিতের অভিযোগ, সভা করতে গেলে প্রশাসন দেরিতে অনুমতি দিচ্ছে। আবার অনুমতি পেলেও ডেকরেটরদের বারণ করে দিচ্ছে তৃণমূল। এই আবহে অভিজিতের বক্তব্য, “জিতলে সন্ত্রাসের এই সংস্কৃতি বন্ধ করব।”
পাশাপাশি, মানুষের কাছে সাংসদ অভিষেকের মিথ্যাচারের প্রসঙ্গও প্রচারে তুলছেন বিজেপি প্রার্থী। তাঁর দাবি, “সংসদে ওঁর উপস্থিতি, প্রশ্ন তোলা, আলোচনায় যোগ দেওয়া, সবই তলানিতে। উনি বলছেন, ডায়মন্ড হারবারের জন্য ৫,৬০০ কোটি টাকা এনেছেন। অথচ, গত পাঁচ বছরে সাংসদ হিসেবে তিনি পেয়েছেন ১৭ কোটি টাকা। বাকি টাকা কোথা থেকে আনলেন? এই মিথ্যাচারের কথা বলছি।” সেই সঙ্গে, তিনি জিতলে জোকা থেকে ডায়মন্ড হারবার মেট্রো সম্প্রসারণ, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন শিল্প, রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা, বস্ত্রশিল্পের হাব, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্মসংস্থান-সহ নানা বিষয়ে দেদার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন বিজেপির ‘ঘরের ছেলে’ অভিজিৎ।
অভিজিতের মতোই তৃণমূলের হাতে ‘আক্রান্ত’ হওয়ার অতীত রয়েছে সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উরেরও। ২০১০-এ ডায়মন্ড হারবার ফকিরচাঁদ কলেজে পড়ার সময়ে এসএফআই করার জন্য তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মেঠো ভাষায় বক্তৃতা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার জন্য গ্রামেগঞ্জে এবং সিপিএমের অন্দরেও ধীরে-ধীরে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন প্রতীক-উর। গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের ‘শূন্য-ফলের’ মধ্যেও সিপিএমের তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে সব থেকে বেশি ১৭.১৮% ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এ হেন প্রতীক-উর লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে পুঁজি করেছেন দু’বেলা হেঁটে প্রচারকেই। তাঁর কথায়, “প্রথম দিনেই ঠিক করেছিলাম, হেঁটে-হেঁটে প্রতিটা বিধানসভায় ঘুরব। সবার বাড়িতে পৌঁছে যাব। সেটাই করছি।” এই সূত্রেই ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “কিসের ডায়মন্ড হারবার মডেল? ফলতায়, বজবজে কেউ ভোট দেবে না? আমতলা, পৈলানে ভোট লুট হবে?” সেই সঙ্গে, প্রতীক-উরও পতাকা-পোস্টার-ফ্লেক্স নষ্ট, খড়ের গাদায় আগুন দেওয়ার মতো নানা সন্ত্রাসের অভিযোগ করছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, বিজেপির আক্রান্ত না হচ্ছে না দাবি করে শাণ দিচ্ছেন তৃণমূল-বিজেপি আঁতাঁতের তত্ত্বেও।
মেঠো প্রচারকে সঙ্গী করে প্রতীক-উর যেন ভরসা রাখছেন তাঁর রাজনৈতিক সতীর্থ যাদবপুরের প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের বক্তব্যেও। সম্প্রতি ভাঙড়ে গিয়ে সৃজন এক নতুন ‘তরমুজ-তত্ত্ব’ সামনে এনেছিলেন। বলেছিলেন, “উপরটা সবুজ। তৃণমূলের সাজে সজ্জিত। ভিতরে ভিতরে সবাই লাল। ইভিএমে বোতাম টেপা হলেই বোঝা যাবে।” প্রতীক-উরেরও বক্তব্য, “হাওয়া ঘুরছে। মানুষ তৃণমূলকে হারানোর জন্য তৈরি হয়ে আছে। এই মানুষগুলো ভয়-ভীতিতে হয়তো তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে যাচ্ছেন। কিন্তু এক বার সুযোগ পেলে, সবাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।”
যদিও তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার সন্ত্রাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেছেন, “এই সব নিশ্চিত পরাজয়ের আর্তনাদ! নিশ্চিত পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের অভিযোগের পাহাড় খাড়া করা ছাড়া আর মুখ লুকোনোর জায়াগা থাকে না। ডায়মন্ড হারবার তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy