সন্দেশখালিতে সিপিএমের মিছিল। ফাইল চিত্র
ভোট এলেই দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধীরা অভিযোগ করতেন, তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের নেতৃত্বে সন্দেশখালিতে বিরোধীরা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে পারছে না। সেই সন্দেশখালিতে এ বার লোকসভা ভোটের আগে ভিন্ন চিত্র। শাহজাহান সহ শিবুপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দার, অজিত মাইতি, জিয়াউদ্দিন মোল্লা এবং সন্দেশখালির বেশ কয়েক জন তৃণমূলের দাপুটে নেতা ভোটের আগেই গ্রেফতার হয়েছেন। এই সুযোগে বিরোধীরা সন্দেশখালিতে ঘর গুছিয়ে নিতে জোরদার প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিশেষ করে বিজেপি।
অন্য দিকে, তৃণমূলের অন্দরে নেতৃত্বহীনতার চিত্র স্পষ্ট। বিশেষ করে সন্দেশখালি ২ ব্লকে এখনও রাজনৈতিক কর্মসূচিই শুরু করতে পারেনি তারা। সন্দেশখালিতে কবে যাবেন প্রচারে, তা জানতে চেয়ে বসিরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নুরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর মেলেনি,
সন্দেশখালির ১ ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শেখ শাহজাহান ও সন্দেশখালি ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরা গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন। নতুন কোনও ব্লক সভাপতি নিয়োগ হয়নি। সন্দেশখালির বিধানসভায় কোনও নির্বাচন কমিটি নেই এখনও পর্যন্ত। এ দিকে, বসিরহাট লোকসভার তৃণমূলের প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে।
কী ভাবে প্রচার শুরু হবে, কী ভাবেই বা এগোবে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ পাচ্ছে না বলে জানালেন পঞ্চায়েত স্তরের একাধিক তৃণমূল নেতা। সন্দেশখালি ২ ব্লকের মণিপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান প্রসেনজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায় দেওয়াল লিখন শুরু হয়নি। এখনও নির্বাচন কমিটি তৈরি হল না। ব্লক সভাপতি নেই। ফলে খানিকটা দিশেহারা পরিস্থিতি। বুঝতে পারছি না, কী ভাবে প্রচারপর্ব চলবে। এ দিকে, বিজেপি পাড়ায় পাড়ায় নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যা এত দিন পারেনি।"
বেড়মজুর ১ পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলের আহ্বায়ক হলধর আড়ির কথায়, ‘‘এই পঞ্চায়েতের ১০টি বুথের মধ্যে চারটি এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সেই পোলপাড়া, কাঠপোল বাজার, হালদারপাড়া, তেভাগা স্মৃতি এলাকার মানুষ এমন ক্ষিপ্ত, যে তাঁদের তৃণমূলে ফেরানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এত দিন তৃণমূলের যাঁদের হাতে এই এলাকার দায়িত্ব ছিল, তাঁদের উপরে মানুষের ক্ষোভ আছে। তাঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিলেও মানুষের যা ক্ষতি হয়েছে, সে জন্য ক্ষোভ কমাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে অন্য বুথে তেমন সমস্যা নেই।’’
কোৱাকাটি পঞ্চায়েতের প্রধান মণিকা রায় জানান, শেখ শাহজাহান যখন ছিলেন, তখন অনেক দ্রুত বিভিন্ন নির্দেশ আসত, সেই মতো কর্মসূচি নেওয়া হত। এখন উনি নেই। বিধায়ক যেমন নির্দেশ দেবেন, তেমন চলা হবে। তবে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। দেওয়াল লেখা শুরুই হয়নি পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে।’’ তাঁর আশা, সামনের সপ্তাহ থেকে শুরু দেওয়াল লেখা সহ বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করা যাবে। এই পরিস্থিতিতে সন্দেশখালি বিধানসভার কিছু পঞ্চায়েত এলাকায় অবশ্য স্থানীয় স্তরের তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্যোগে দেওয়াল লেখা শুরু হয়েছে। যেমন, খুলনা পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় দেওয়াল লেখা দেখা গেল। কিন্তু যে সন্দেশখালি পঞ্চায়েত এলাকায় এত আন্দোলন হল, সেই পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতাদের কথায় স্পষ্ট, এখনও এলাকায় তৃণমূল নেতৃত্ব লোকসভা ভোটের প্রচারপর্ব শুরু করতে পারেননি।
এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের কেমন অবস্থা? বিজেপির বসিরহাট লোকসভার আহ্বায়ক বিকাশ সিংহ বলেন, "আমাদের সংগঠন সন্দেশখালিতে শক্তিশালী হচ্ছে। দেওয়াল লিখন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু হবে প্রার্থী ঘোষণার পরে। তৃণমূল এ বার সন্দেশখালির সব বুথে হারবে।" কিছু দিন আগে সন্দেশখালির একটি দলীয় কার্যালয় তৃণমূলের হাত থেকে ‘পুনর্দখল’ নিয়েছে সিপিএম। এলাকায় ছোটখাট মিছিল হয়েছে। এখানকার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের কথায়, ‘‘আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা আগে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বেরোতে পারতেন না। এখন ভয়মুক্ত হয়ে দল করতে পারছেন। তবে ভোটে কী ফল হবে, এখনও বুঝতে পারছি না।"
কী বলছেন তৃণমূলের বিধায়ক সুকুমার মাহাতো? অনেকেই মনে করেছিলেন, শাহজাহানের এক সময়ের ‘হাতের পুতুল’ হয়ে থাকা সুকুমারকে এ বার হয় তো দলের লাগাম শক্ত হাতে ধরতে দেখা যাবে এলাকায়। তবে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। সুকুমারের কথায়, ‘‘দ্রুত সন্দেশখালি বিধানসভায় নির্বাচন কমিটি তৈরি হবে। তখন আমাদের দলীয় কর্মসূচি নিতে সুবিধা হবে। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। তবে চারদিকে এত অপপ্রচার হচ্ছে, সন্দেশখালি নিয়ে দলের অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy