ঝাড়খণ্ডের দুমকায় প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
লোকসভার প্রচারে হিন্দু-মুসলমান নিয়ে বিভাজনের রাজনীতির পরে এ বার খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরিতে নামার অভিযোগ উঠল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। বিরোধীদের মতে, হার নিশ্চিত জেনেই এ হল প্রধানমন্ত্রীর শেষ পর্বের ভোটে ভেসে থাকার মরিয়া চেষ্টা।
আজ কলকাতায় যাওয়ার আগে ঝাড়খণ্ডের দুমকায় প্রচার করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারে খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরির অভিযোগ ওঠে। দুমকার ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ঝাড়খণ্ডের একটি জেলায় চিরাচরিত ছুটির দিন রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবারকে ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘লাভ জেহাদে’র প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মোদী। ঝাড়খণ্ডে ‘সংখ্যাবৃদ্ধির’ জন্য শাসক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাকে দায়ী করে মোদী বলেন, অনুপ্রবেশকারী (মুসলিম)-দের কারণে জনজাতি সমাজের মেয়েরা ‘লাভ জেহাদে’র শিকার হচ্ছেন। মোদীর অভিযোগ, ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে সেই সব অনুপ্রবেশকারীদের পিছন থেকে সমর্থন দিয়ে চলেছে রাজ্যের শাসক দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)।
বিরোধীদের মতে, এ হল মেরুকরণের নির্লজ্জ উদাহরণ। এ যাবৎ হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে মেরুকরণ করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যেহেতু ঝাড়খণ্ডের জনজাতি সমাজের বড় অংশ খ্রিস্টান, সেই কারণে সেই সমাজের ভোট পেতে এ বার খ্রিস্টান-মুসলিমে বিভাজন তৈরির কৌশল নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে জানিয়েছিল, তাঁর দলের তারকা প্রচারকেরা যেন ধর্মভিত্তিক প্রচার না চালান। কিন্তু আজ দুমকায় মোদী বুঝিয়ে দিয়েছেন শেষ দফা ভোটেও ধর্মভিত্তিক প্রচারেই ভরসা রাখতে চান তিনি।
আজ দুমকার প্রচারে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘রবিবার কোনও দিন হিন্দুদের ছুটির দিন ছিল না। বরং রবিবার দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে পালন করা খ্রিস্টান প্রথা। খ্রিস্টানরা যখন এ দেশে শাসন করত, তখন থেকে ওই প্রথা শুরু হয়। যা প্রায় দু’শো-তিনশো বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু এখন হঠাৎ এ রাজ্যের একটি জেলায় রবিবারের পরিবর্তে ছুটির দিন শুক্রবার করার কথা বলা হয়েছে। এখন খ্রিস্টানদের সঙ্গেও লড়াই শুরু হয়েছে। এ সব কী হচ্ছে।’’
সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের একটি জেলা প্রশাসন স্থানীয়দের চাপে প্রায় ৪৩টি সরকারি স্কুলে রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবার ছুটির দিন বলে ঘোষণা করেছিল। রাজ্য জুড়ে সমালোচনার কারণে প্রশাসন সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। ভোটের মুখে আজ মোদী সেই ঘটনার কথা মনে করান। পাশাপাশি তিনি সরব হয়েছেন তথাকথিত ‘লাভ জেহাদ’ নিয়েও। বিজেপির অভিযোগ, হিন্দু মেয়েদের পরে এখন জনজাতি সমাজের মেয়েদের ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করছেন মুসলিম যুবকেরা। তারপরে তাঁদের ধর্ম পরিবর্তন করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনায় অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন ওই জনজাতি মেয়েরা এবং একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও সামনে এসেছে বলে বিজেপির দাবি।
আজ মুসলিম বিরোধিতার তাস খেলতে গিয়ে মোদী দাবি করেন, ‘‘এ রাজ্যে লাভ জেহাদ শুরু হয়ে গিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের ঘরের মেয়েদের জন্য বিপদ।’’ শাসক দল কোন স্বার্থে ওই সব অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করতে ব্যস্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি জেএমএম যে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক দল, তারা ক্ষমতায় এলে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলমানদের সংরক্ষণ দেবে বলেও দাবি মোদীর। তিনি বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের বলছি, যত দিন আমি বেঁচে রয়েছি, বিরোধীরা কোনও ভাবেই জনজাতি, দলিত, ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে, যারা ভোট জেহাদ করে তাদের দিতে পারবে না।’’ কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, বার্তা স্পষ্ট। হিন্দু-মুসলমানের পরে এ বারে খ্রিস্টান-মুসলমানে বিভাজন তৈরিতে নেমে পড়েছেন মোদী। কিন্তু মানুষ বোকা নয়। দেশের মানুষ মেরুকরণের ফাঁদে পা দেবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy