মৃণালকান্তি দেবনাথ এবং স্বপন মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
এ বার দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে বারাসতের বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারকে তাঁর ‘পছন্দ’ নয়। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁকে এ বার ভোট না দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন বারাসতেরই গত বারের বিজেপি প্রার্থী মৃণালকান্তি দেবনাথ। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে পদ্মশিবির। মৃণালকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন স্বপন। তাঁর বক্তব্য, মৃণাল প্রার্থী হতে না পেরে ভেঙে পড়েছেন!
এ বারও বারাসতে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মৃণাল। কিন্তু দল তাঁকে টিকিট দেয়নি। বিজেপি প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করার পর থেকেই স্বপনকে নিশানা করেছেন ‘প্রাক্তন’ প্রার্থী। বর্তমান প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাদক কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। এমনকি দলেরই একাংশ যখন এ নিয়ে সরব, তখনই মৃণাল জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি স্বপনের হয়ে ভোট চাইতে যাবেন না। সেই আবহে শুক্রবার স্বপনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছেন বিজেপিরই দু’জন। তার পর শনিবারই বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মৃণাল বললেন, ‘‘স্বপন মজুমদার যদি বারাসতে বিজেপির প্রার্থী থাকে, তা হলে আমি ভোট দেব না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি আশা করেছিলাম, আমাকেই দল প্রার্থী করবে। কিন্তু তা যখন হল না, তখন ভেবেছিলাম, ভাল কাউকে প্রার্থী করা হবে। সেটাও হল না।’’
পাল্টা স্বপন বলেন, ‘‘দল টিকিট না দেওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন মৃণালকান্তি দেবনাথ। সেই কারণেই তিনি এই ধরনের কথা বলছেন।’’ বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণকান্তি ঘোষ মৃণালের মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘স্বপন গত বারের লোকসভার প্রার্থী ছিলেন বটে, কিন্তু তার পর থেকে দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ তিনি রাখেননি। স্বভাবতই দলের কোনও পদে নেই তিনি। সেই কারণে স্বপন অবাঞ্ছিত অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে আমরা আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা ভাবছি।’’
বিজেপির একটি সূত্রে খবর, দলের নেতা-কর্মীরা চেয়েছিলেন, স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করা হোক। স্বপন বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক। এলাকাটি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। তিনি বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা নন। তাঁর বিরুদ্ধে দলের নির্বাচনী কার্যালয় এবং জেলা পার্টি অফিসে পোস্টারও পড়েছে। প্রার্থী নিয়ে দলীয় কর্মীদের একাংশের ক্ষোভের একটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে এসেছে। সেটির সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। সেই ভিডিয়োয় এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের যিনি প্রার্থী হয়েছেন, সেই স্বপন মজুমদার মহাশয় এক জন ড্রাগ মাফিয়া। এ রকম এক জন প্রার্থীর হয়ে কী ভাবে আমরা ভোট প্রচারে যাব?’’ স্বপনের বিরুদ্ধে গত ভোটে কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ারও অভিযোগ তুললেন দলীয় নেতা-নেত্রীদের একাংশ। এ নিয়ে তাঁরা কমিশনেও নালিশ জানিয়েছেন। অশোকনগরের বিজেপি নেত্রী উৎপলা বিশ্বাস এবং বারাসতের বিজেপি নেতা সুভাষচন্দ্র রায় বৃহস্পতিবার কমিশনকে এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, হলফনামায় অসমে মাদক পাচার সংক্রান্ত একটি মামলা নিয়ে ‘মিথ্যা’ তথ্য দিয়েছিলেন স্বপন। ‘মিথ্যা’ তথ্য দিয়েছিলেন নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সম্পত্তি নিয়েও।
যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ স্বপন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গোটা বিষয়টি তৃণমূলের চক্রান্ত। আমাদের কাউকে কাউকে ভয় দেখিয়ে বা নেশা করিয়ে এ সব প্রচার করানো হয়েছিল। সকলে ভুল বুঝতে পেরেছেন।’’
প্রার্থী হিসাবে স্বপনের নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের পুরনো অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) স্বপনকে নিশানা করে লিখেছেন, ‘‘ইনিই কি বিজেপির এ বারের বারাসতের প্রার্থী? যদি হন, তা হলে তিনি মাদককাণ্ডে ঘোষিত অপরাধী। বিজেপি ব্যাখ্যা দিক।’’ কুণাল তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে একটি খবরের কাগজের কাটিং ও ২০২১-র বিধানসভা ভোটে মনোনয়নপত্রে স্বপনের উল্লেখ করা, মাদক আইনে মামলা থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল স্বপনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে সরব হয়েছিল। এ বারও তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালে মাদক পাচার করার সময় অসম পুলিশ স্বপনকে গ্রেফতার করে। তবে শুধু শাসকদলই নয়, তাঁর নিজের দলের একাংশও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন স্বপনকে নিয়ে। এ ব্যাপারে বিজেপির জেলা স্তরের এক নেতার কথায়, ‘‘বিরোধীরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার করবেই। কিন্তু দলের লোকেরাই যদি প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন, তা হলে বুঝতে হবে, কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে! এতে স্বাভাবিক ভাবেই দলের অস্বস্তিতে পড়ার কথা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy