(বাঁ দিক থেকে) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌসম নুর, শাহনাওয়াজ আলি রায়হান
দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে টিকিট না মেলায় ‘অভিমান’ হয়েছিল তাঁর। দলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা হওয়ার পর কয়েক দিন অন্তরালেও ছিলেন। সেই অভিমানের কথাই প্রকাশ্যে আসে বৃহস্পতিবার সকালে। এর পর দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপেই বদলে গেল ‘আবহাওয়া’! আসন্ন লোকসভা ভোটে মালদহে তৃণমূলের দুই প্রার্থীর হয়ে প্রচারে কার্যত নেমেই পড়লেন মৌসম বেনজির নুর। বৃহস্পতিবার বিকালে একটি ভিডিয়োবার্তা রেকর্ড করে মালদহ জেলার দু’টি লোকসভা আসনের দলীয় প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। মৌসমের এই ‘বার্তা’য় আশ্বস্ত দলীয় নেতৃত্বও। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘মৌসম তো বলেই দিয়েছেন ভিডিয়োবার্তায় যে, উনি দলীয় প্রার্থীদের জন্য নামছেন। আমাদের আর এটা নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ দলীয় সূত্রের খবর, মৌসমের অভিমানের কথা জানাজানি হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে, তার পরেই বিকেলের ভিডিয়ো।
এ বার মালদহের দু’টি লোকসভা আসন— মালদহ উত্তর ও মালদহ দক্ষিণে যথাক্রমে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাহনাওয়াজ আলি রায়হানকে প্রার্থী করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, মালদহে উত্তরের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে ছিল মৌসমের। সেই মতো যথেষ্ট খেটেওছিলেন। প্রার্থী ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত ব্যস্ত থেকেছিলেন উত্তর মালদহের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে দলীয় কর্মসূচিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রাক্তন আইপিএস প্রসূনকে প্রার্থী করে দল। তার পর থেকেই দেখা যায়, জেলায় দলীয় কর্মসূচিতে গরহাজির মৌসম। জল্পনাও তৈরি হয় যে, তিনি দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। ঘটনাচক্রে, মৌসম জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তথা গনি পরিবারের সদস্য।
কিন্তু দিন দুয়েক আগে মৌসমই সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনাকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে তৃণমূলের নেত্রী জানান, ব্যক্তিগত কাজে দু’দিনের জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। তার পর অসুস্থতার কারণে কলকাতার বাড়িতে বিশ্রামে ছিলেন। যদিও টিকিট না পেয়ে তাঁর যে অভিমান হয়েছিল, তা গোপন করেননি রাজ্যসভার সাংসদ। জানান, এ বার লোকসভায় প্রার্থী হবেন বলে ভেবেছিলেন তিনি। প্রত্যাশা ছিল, তিনিই জিতবেন। কিন্ত তা না হওয়ায় তিনি যে খানিক রুষ্ট, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মৌসম। কিন্তু এর পরেই নিজেকে তৃণমূলের সৈনিক বলে জানিয়ে সাংসদের বক্তব্য, দল যে ভাবে তাঁকে প্রচার করতে বলবে, সে ভাবেই প্রচার করবেন তিনি।
মৌসমের অভিমানের কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই বৃহস্পতিবার সকালে জানা গেল, মালদহে দলের নির্বাচনী কমিটিতে রাখা হয়েছে সাংসদকে। ঘটনাচক্রে, এর পর থেকেই দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে নেমে গেলেন তিনি। ভিডিয়োবার্তায় মৌসম বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলের এক জন সৈনিক। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে মালদহের মানুষের কাছে আমার অনুরোধ, মালদহ উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মালদহ দক্ষিণের প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রায়হানকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।’’
২০০৮ সালে বিধায়ক এবং ২০০৯ ও ২০১৪ সালে কংগ্রেসের টিকিটে মালদহ উত্তরে জিতে হয়ে সাংসদ হয়েছিলেন গনির ভাগ্নি মৌসম। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে দলবদলে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়ে বিজেপির কাছে হারেন তিনি। পরে তিনি জেলা তৃণমূলের সভানেত্রীও হন। ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, মৌসমকে মালদহ উত্তরে যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের কর্মসূচিতে মালদহের উত্তরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়িয়েছিলেন মৌসম। ব্লক স্তরে তাঁর অনুগামীরাও আসরে নেমে পড়েছিলেন। গত ১০ মার্চ ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘জনগর্জন সভা’য় প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূল। মালদহ উত্তরে প্রসূনকে প্রার্থী করা হয়। এর পর মৌসম আর জেলায় না ফেরায় আলোচনা শুরু হয়। জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন গনি পরিবারের সদস্য ইশা খান চৌধুরী। তিনি বলেন, “মৌসম দু’বারের সাংসদ। তিনি কংগ্রেসে এলে, দল আরও শক্তিশালী হবে। মৌসমের জন্য কংগ্রেসের দরজা খোলা রয়েছে। তবে মৌসম দলবদল নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। দলে বড় কোনও নেতা-নেত্রী যোগদান করলে, তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করেন।”
এর পরেই মৌসম প্রকাশ্যে জানান, তিনি অন্য কোনও দলে যাচ্ছেন না। সেই জল্পনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে তিনি বলেন, ‘‘নিজের প্রত্যাশা থাকলেও দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাকে মেনেছি। সেটা মেনেই চলব। আমি অসুস্থ ছিলাম। ভাইরাল ফিভার হয়েছিল। খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। তাই কলকাতায় ছিলাম। একটা কাজে দিল্লিতেও যেতে হয়েছিল। এখন মালদহে ফিরে এসেছি। আমাদের প্রার্থীর জন্য, দলের জন্য অবশ্যই আমি নামব। আমি আশা করি, এ বার দুটো আসনই তৃণমূল পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy