মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের মুখে জেলায় প্রশাসনিক সভা করলেন। সেই সভার ফাঁকে ‘ছোট্ট’ করে সাংগঠনিক বৈঠকও সোমবার সেরে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে তাঁর বার্তা একটাই— কাঁথি এবং তমলুক দু’টো আসনই চাই। তৃণমূল সূত্রের খবর, যেসব এলাকায় দলের ফল ভাল হবে না, সেখানকার নেতারা শাস্তির কোপেও পড়তে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে বৈঠকে। সেই সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় দলের নেতাদের কাছে এ দিন মমতার প্রশ্ন, ‘‘টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাবে না কি?’’
এ দিন নিমতৌড়িতে জেলা প্রশাসনিক অফিস চত্বরে সভা করেন মমতা। তার আগেই মঞ্চের পিছনে মাত্র মিনিট দশেকের জন্য পূর্ব মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, কারামন্ত্রী অখিল গিরি, মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদারা ছিলেন। দলীয় সূত্রের খবর, বৈঠকে জেলা নেতৃত্বদের সামনেই মন্ত্রী বিপ্লবের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জেলায় তৃণমূলের একাংশ নেতৃত্বের সঙ্গে ‘অধিকারী পরিবারে’র যোগ নিয়েও সরব হন তিনি। পরে সভাতেও তিনি বলেছেন, ‘‘অনেকের গদ্দারদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আমি সব খবর রাখি।’’
বস্তুত, এ দিন বিকেলে মেদিনীপুর শহরেও পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা। তাহলে কেন ঝাড়গ্রামের নেতৃত্বকে সেখানে না ডেকে অনেক দূরে তমলুকে ডাকা হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নন্দীগ্রামের জেলার পাশাপাশি জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামেও শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব রয়েছে। সেই অঙ্কেই এই তলব এবং ভোটের আগে হুঁশিয়ারি।
এ দিকে, তাঁর প্রতি দলনেত্রীর ক্ষোভের কথা অবশ্য মন্ত্রী বিপ্লব অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি নরম প্রকৃতির মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে কড়াভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর বেশি কিছু নয়।’’ সূত্রের খবর, গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ধমক দেন এ দিন। নেত্রীর অভিযোগ, অসিত শুধু গ্রুপবাজি করছেন। তাঁকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঝগড়া ছেড়ে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। ঠিকঠাক ভাবে সংগঠনের কাজ করার বার্তা অসিতকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অসিতও ধমকের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘দলনেত্রী কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যাতে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে লোকসভা নির্বাচনে আমরা লড়াই করতে পারি।’’
এ দিন প্রশাসনিক সভায় মমতা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে তাঁর হারের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, সভার আগে জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠকেও ওই প্রসঙ্গ আলোচনা করেন মমতা। বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা নন্দীগ্রামে তাঁর পরাজয়ের জন্য স্থানীয় এক নেতাকেই দায়ী করেন বলে অভিযোগ।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। এর ফলে নন্দীগ্রামের পাশের এলাকা খেজুরিতে আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি কেমন, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী খোঁজখবর নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। এদিন বৈঠকে মমতা খেজুরিতে দলের সংগঠনের প্রসঙ্গ তুলে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিককে জিজ্ঞাসা করেন খেজুরিতে পার্থ (প্রাক্তন জেলাপরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস) কী আর এখন আর দল করছেন না। উত্তম জানান, পার্থ আর দল করছেন না। সেখানে সংগঠন কে দেখছে মমতা জানতে চাইলে উত্তম জানান, আপাতত তিনিই সংগঠনের দেখাশোনা করছেন।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি আনন্দময় অধিকারী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা থেকেই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করেন। প্রশাসনিক সভা করতে এসে সেখানেই দলের বৈঠক করছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা ও রাজনৈতিক সভা আলাদা মুশকিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy