মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।
মমতা বলেন, ‘‘পরশু বালুরঘাটে একটা ঘটনা হয়েছে। সীমান্ত থেকে বিএসএফের লোক বেরিয়ে এসে গুলি চালিয়েছে। এফআইআরের কপি পড়েছি। যে গুলি খেয়েছে, হাসপাতালে আছে। আমাদের একটা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামে এসেছে বিএসএফ। বলেছে, বিজেপিকে ভোট দিন। গ্রামের লোক প্রতিবাদ করেছে। গুলি চালিয়েছে। একটি ছেলের গায়ে লেগেছে। তার বাবা, ভাই এফআইআর করেছে। আগে থেকে লিখিয়ে নিচ্ছে, ভোটে কারও মৃত্যু হলে বিএসএফ দায়ী হবে না। কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে মানুষ ভয় পায়নি। আমাদের ভোট দিয়েছে। মোদীবাবুরা ভয় পেয়েছেন। ভাবলেন গেল। ঘাবড়ে গেছেন। এখন উল্টোপাল্টা বকছেন।’’
কংগ্রেসের তিন ব্লক সভাপতি তৃণমূলে যোগদান করলেন। মমতার উপস্থিতিতে মঞ্চে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিলেন তাঁরা। মহম্মদ মোস্তাফা, হামিদুল রহমান, সাদিকুল ইসলাম যোগ দিলেন শাসকদলে।
মমতা জানান, দূরদর্শ থেকে স্টেশনের রং গেরুয়া করে দিয়েছে। সাধু-সন্ন্যাসীদের অপমান করেছে বিজেপি। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা টাকা দিয়েছেন, আর দেবেন না। ভোট দিন তৃণমূলকে।’’
মমতা দাবি করেন, বিজেপি জয়ী হলে আবার দাম বৃদ্ধি পাবে গ্যাসের। বিনা পয়সার চাল ফুটবে হাজার টাকার গ্যাসে। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি ইতিহাস-ভূগোল ভুলিয়ে দিয়েছে।’’
তিনি জানান, প্রথম দফায় ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি করে দেবেন। ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের কথাও জানিয়েছেন তিনি। ৫০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা দেবেন রাজ্যের মানুষকে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যা বলি, তা করি। বিজেপি যা বলে, করে না। ১৫ লক্ষ টাকা কি দেয়েছে?’’
উত্তরবঙ্গে নিজের সফর নিয়েও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার কোথায় সফর, সবই জানিয়েছেন। ২৬ এপ্রিল আবার মালদহে আসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মমতা মা-বোনেদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘খেলা হবে? লক্ষ্মীর ভান্ডার বিনামূল্যে পাবেন? রেশন পাবেন? তা হলে ভোট দিন।’’ তিনি জানান, আদিবাসীর অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। পঞ্চনন বর্মার মূর্তি করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর জন্মদিনে ছুটি দেন। ইদ, বকরি ইদের ছুটি দেন। তিনি নিজে ইফতার করেন। রেড রোডে প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন। ইফতার ভেঙে চাঁদ মোবারকও করেছেন। ইদের দিন কিছু পাড়ায় গিয়ে ইমামদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
রায়গঞ্জে কংগ্রেসের প্রার্থী আলি ইমরান রামজকে খোঁচা মমতার। নাম না করে তিনি জানান, এই কেন্দ্রে ভোট কাটার জন্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনিও ‘বিজেপির পাখির চোখ’। তিনি বলেন, ‘‘তাঁর নাকি টাকা নেই। দেব একটা লক্ষ্মীর ভান্ডার। ছেলেদের জন্য নেই। আমি আমার থেকে সাহায্য করতে পারি। লোকের থেকে আঁচল পেতে টাকা নিচ্ছেন। সব নিজের কাছে রাখবেন। উত্তর দিনাজপুরে আপনার প্রচার চলছে। কোথা থেকে আসছে টাকা?’’
মমতা বলেন, ‘‘বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হবে না তৃণমূলের। এখানে বিজেপিকে হটাতে আমরা একাই একশো। দিল্লিতে মোদীকে হটাতে জোট হতে পারে। ভোটদানের ক্ষেত্রে মনে রাখবেন না কৃষ্ণ হিন্দু না কি মুসলমান। সকল সম্প্রদায়ের লোককেই টিকিট দিতে হয়। মুর্শিদাবাদে কেউ কি জিজ্ঞেস করে ওই প্রার্থী হিন্দু না মুসলমান? এখানে কেন জিজ্ঞেস করেন? সেলিম মুর্শিদাবাদ ভোট কাটতে ঢুকেছেন। ও বিজেপির পাখির চোখ।’’
মমতা বলেন, ‘‘ওঁরা রামকৃষ্ণকে মানে না। বিশ্বাস করে না। তিনি সর্বধর্মসমন্বয় শিখিয়েছেন। ওঁরা বিবেকানন্দের হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস মানে না। বাইরে থেকে নিয়ে আসা, পচা শামুকে পা কাটা কিছু জনের কথা মানে, সেই রকম ধর্ম মানে। বলে মমতাদিদি দুর্গাপুজো করতে দেন না। সেই পুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। সব মানুষ একসঙ্গে করে।’’
মমতা বলেন, ‘‘বাংলার ভোট হলে আমরা কৈফিয়ত দেব। এটা মোদীর নির্বাচন। তাই তাঁকে জবাব দিতে হবে। কেন বেকার বেড়েছে? কেন ওষুধের দাম বেড়েছে? কেন এনআরসি, সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হয়েছে? আগামী দিনে মোদী এলে কোনও ধর্ম থাকবে না। ’’
মমতা আবার জানালেন, সিএএ-তে আবেদন না করবেন না। এ-ও জানান, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, রূপশ্রী, সবই দেবে রাজ্য সরকার।
মমতা বলেন, ‘‘যা পেয়েছিল আগের বার, সর্বোচ্চ পেয়েছিল। এ বার পাবে না। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে অর্ধেক চলে যাবে। তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা পাবে না। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশরা লড়াই করছে। আমাদেরও এক জন রয়েছে ওঁর সঙ্গে। বাংলায় পাবে না। কোথা থেকে পাবে ৪০০ আসন! নিজেকে বিশ্বাস করুন।’’
মমতা নাম না করে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘কার বাড়ি সিবিআই যাবে, আগেই বলছে। কী ভাবে? ওহে গদ্দার, রাজাকার, এ বার বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না। কাগজগুলোকে দিয়ে সমীক্ষা করাচ্ছে। মিথ্যা কথা। নিজেদের দল রয়েছে। পাঁচ লক্ষ লোক। টাকা দিয়ে পোষে। তাঁদের দিয়ে সমীক্ষা করে বলছে, টিভিতে দেখাও। বলছে বিজেপি ৫০০ আসন পাবে। নানা রকম বলছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘বলছে বোমা ফাটাবে। বোমা কী? ২৬ হাজার লোকের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। মানুষের জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার নাম বোমা। ধিক্কার জানাই। কোর্ট কী রায় দেবে, তুই আগে জানলি কী ভাবে? সোমবার রায় দেবে, শনিবার জানলি কী ভাবে? যদি রায় নিজেরা লিখে না দিস? রায় নিজেরা তৈরি করে না দিস?’’
মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মহিলারা খারাপ রয়েছে বলে কেঁদে বেড়াচ্ছেন। মোদীবাবুর চোখে কান্না। কুমীরের অশ্রু। ওঁকে জিজ্ঞেস করি, গুজরাতের নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন খুন হয়েছেন। হাথরসের ঘটনা হয়েছে। কী করেছ? কুস্তিগির সাক্ষীকে বিজেপির নেতা অপমান করেছে। সেই নিয়ে কী করেছ? সন্দেশখালির ঘটনা তোমাদের পরিকল্পিত রচনা।’’
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কটাক্ষ করলেন মমতা। জানালেন, যক্ষ্মার ওষুধ বন্ধ করেছে। ডায়াবিটিস, হৃদ্রোগের ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকেরা আন্দোলন করছিলেন, রাস্তা কেটে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে দিল্লিতে ক’জন মারা গিয়েছেন, জানেন? নালা লাল হয়ে গিয়েছে। কেউ জানে না, কত লোক মারা গিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশেও মারা গিয়েছে।’’
মমতা বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, ‘‘রাজবংশী, জনজাতি, সংখ্যালঘুদের জন্য কী করেছ? হিন্দুদের জন্য কী করেছ? কোন মন্দির গড়ে তুলেছ? মণিপুরে ২০০ গির্জা জ্বালিয়ে দিয়েছ। মসজিদে বোম মেরেছে। মন্দির নিজে ভেঙে বলে, এনআইএকে ডেকে আনো। এই তো রাজনৈতিক দল! ’’
মমতা বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি বিজেপি। মা-বোনদের সাম্মানিক দিল না। আজ বলছে, তিন মাস পর লক্ষ্মীর ভান্ডার তুলে দেব। এত বড় সাহস? আমার ইচ্ছা হলে অন্য ভাষায় আক্রমণ করতাম। তোমাদের মতো নই। তাকালে মনে হয় কেউটে সাপের আগুন বার হচ্ছে। এমন দল তোমরা। সারা দিন গালাগালি দাও।’’
কংগ্রেসকে খোঁচা দিলেন মমতা। বললেন, ‘‘নিজে জিতবে না ভাল করে জানে কংগ্রেস, বলছে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে। একটা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে। বলছে টাকা নেই। যদিও সমর্থন করি না অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করা। তোমাদের টাকার অভাব? তেলঙ্গানায় সোনার খনি। কর্নাটকে তোমরা ক্ষমতায়। হিমাচলে কাদের সরকার? তামিলনাড়ুতে যৌথ ভাবে সরকারে। আমরা একটা রাজ্যে। আমরা করি না বলে আমাদের বদনাম করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy