শেখ আজমের বাড়ির ছাদে বোমা বিস্ফোরণের পর বাড়ি ঘিরে রেখেছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। দুবরাজপুরের খোয়াজ মহম্মদপুরে। নিজস্ব চিত্র।
প্রাক্তন তৃণমূল নেতার বাড়ির ছাদে বিস্ফোরণ ঘটল। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল দুবরাজপুরের খোয়াজ মহম্মদপুর গ্রাম। গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। গোলমালে জখম হয়েছেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ দু’জন। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে।শাসকদলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর লোকজনের সংঘাতেই এ দিন বড়সড় অশান্তি বাধে বলে গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ।
এলাকায় উত্তেজনা ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) রানা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ছিলেন ডেপুটি পুলিশ সুপার (ক্রাইম) প্রতীক রায়। ছিলেন দুবরাজপুর ছাড়াও খয়রাশোল, ইলামবাজার ও সদাইপুর থানার ওসিরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। উত্তেজনা থাকায় পুলিশি টহল চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন শেখ আজম নামে প্রাক্তন তৃণমূল নেতার বাড়ির ছাদে বিস্ফোরণ ঘটে। আজম এলাকায় এক সময়ের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা হলেও এখন ক্ষমতার বৃত্তে নেই। বরং তিনি এই নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে ভোট করিয়েছেন বলে তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ। সেটা নিয়েই চাপা উত্তেজনা ছিল গ্রামে। এ দিন দুপুরে বোমা ফাটার পরেই গোলমাল বাধে। আজম গোষ্ঠীর দাবি, বাইরে থেকে বোমা ছুড়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করে তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। আজমের সম্পর্কিত ভাই তথা সিভিক ভলান্টিয়ার শেখ রাজুকে মারধরও করা হয়। রাজুর বাবা শেখ আলি খানের দাবি, ‘‘আমার ছেলে কী হয়েছে সেটা দেখতে গিয়েছিল। ওকে মরধর করে বাইক পুকুরের জলে ফেলে দেওয়া হয়।’’
অন্য দিকে, আজমের বিপক্ষ গোষ্ঠীর দাবি, নিজের বাড়ির ছাদে মজুত বোমা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই বিপক্ষ গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে আজমের লোকজন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিস্ফোরণ কী ভাবে হয়েছে, তা তদন্ত সাপেক্ষে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শেখ আজম ও সিভিক ভলান্টিয়ারকে আটক করা হয়েছে। কোনও পক্ষের তরফেই লিখিত অভিযোগ হয়নি এখনও। তবে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পুলিশের তরফেই এলাকা অশান্ত করার ও বিস্ফোরণের জন্য স্বতঃপ্রণেোদিত মামলা রুজু করা হবে।’’
প্রসঙ্গত, গত বছর ডিসেম্বরেও তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর সংঘাতে তেতে উঠেছিল যশপুর পঞ্চায়েতের খোয়াজ মহম্মদপুর গ্রাম। বেশ কয়েকটি বাড়িতে তাণ্ডব চালানো, ভাঙচুর ও বোমাবাজি করার অভিযোগ ওঠে। এলাকা সূত্রে খবর, এক সময় এলাকার দাপুটে নেতা ছিলেন আজম। বছর দেড়েক আগে স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে তাঁর প্রভাব কমে। গ্রামবাসীদের একাংশ দাবি করেন, গ্রামে যাবতীয় ঝামেলার মূলে রয়েছে দু’টি পরিবারের সংঘাত। আজমের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শেখ সেলিমের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর থেকে গ্রামে সমস্যার সূত্রপাত। স্থানীয়দের দাবি, সেলিমের মেয়ের সঙ্গে আজমের ছেলের বিয়ে হয়েছিল। সে বিয়ে টেকেনি। তার পর থেকে এলাকায় নানা কারণে দু’পক্ষের অশান্তি লেগেই আছে। বৃহস্পতিবারও তেমনটাই ঘটেছে বলে অভিযোগ। সেলিম বর্তমানে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির গোষ্ঠীতে বলেই সূত্রের খবর।
গত ডিসেম্বরে বাড়িতে বোমাবাজির পরেই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন আজম ও তাঁর পরিবারের লোকজন। এ বার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদের হয়ে পোলিং এজেন্ট ছিলেন আজমের ছেলে। তার পর থেকেই সেলিম গোষ্ঠীর সঙ্গে আজমের বিবাদ আরও বাড়ে বলে সূত্রের খবর। ভোটের সময় এলাকায় অশান্তি এড়াতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। কিন্তু, ভোট মিটতে ফের সমস্যা শুরু।
জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ আজমের বাড়ির ছাদে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠে গ্রাম। শেখ সেলিমের পক্ষের লোকজনের দাবি, সেটা ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে আজমের লোকজন।সেলিম গোষ্ঠীর পক্ষে থাকা শেখ হাসিবউদ্দিনের দাবি, ‘‘বিস্ফোরণের শব্দে কৌতূহলী হয়ে সেখানে গেলে আজমের লোকজন আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। আমার ছেলে ওসমানকে গুলি করে। পায়ে গুলি লেগেছে।’’ গুলি চালানোর কথা পুলিশ স্বীকার করেনি। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’টি পরিবারের সংঘাত থেকেই ঘটনা। পুলিশ দেখুক। আমরা দলগত ভাবেও দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy