—প্রতীকী চিত্র।
আরামবাগ কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে খানাকুল নিয়েই বেশি উদ্বেগে রয়েছে রাজ্যের শাসকদল। কিছু উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই। আবার তাঁদের বহু দাবি এখনও মেটেনি, এ কথাও বলছেন গ্রামবাসী। প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি এখানে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী। তার পরে বাম-কংগ্রেস রয়েছে। ফলে, সাতটি বিধানসভার মধ্যে এখানে লড়াই যে সবচেয়ে কঠিন মানছেন তৃণমূল নেতারা।
গত লোকসভা নির্বাচনে এই লোকসভা আসনে কোনও মতে মুখরক্ষা হয়েছিল তৃণমূলের। হাজারের কিছু বেশি ভোটে তারা জেতে। খানাকুল বিধানসভায় তৃণমূলের ‘লিড’ ছিল ১৪ হাজার ২২২ ভোটে। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি ১২ হাজার ৮৮৪ ভোটে জিতে যায়। খানাকুল ২ পঞ্চায়েত সমিতি এবং ওই বিধানসভা এলাকার ১০টি পঞ্চায়েতও বিজেপির দখলে রয়েছে।
এই অবস্থায় খানাকুলে, বিশেষ করে খানাকুল ২ ব্লক নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে শাসকদলের নেতাদের। দলের ‘ভোট ম্যানেজার’দের মধ্যে অন্যতম প্রবীণ নেতা ইলিয়াস চৌধুরী মানছেন, ‘‘দল এখনও পর্যন্ত বিশেষ ভাল জায়গায় নেই। খানাকুল ১ ব্লকের ৮টি অঞ্চল থেকে কিছু ভোট হয়তো বেশি পাব। কিন্তু খানাকুল ২ ব্লকের ১১টি অঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় বুথে দলের এজেন্ট বসানোর মতোও অবস্থা নেই।” ওই বিধানসভা এলাকার নেতা তথা দলের সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি হায়দার আলির বক্তব্য, “ভোটে জিততে আমরা ‘অতি খারাপ’ এবং ‘খারাপ বুথ’ চিহ্নিত করে বারবার যাচ্ছি। সংখ্যালঘু ভোট যাতে ভাগ না হয়, সে জন্য বিশেষ প্রচারও চালাচ্ছি। কিন্তু মানুষের রায় কোন দিকে যেতে চলেছে, বোঝা যাচ্ছে না।’’ উদ্বেগ এতটাই, খানাকুলের দু’টি ব্লকের সংখ্যালঘু পরিযায়ী শ্রমিকদেরও ভোট দিতে বাড়ি ফেরার বার্তা পাঠানো হচ্ছে বলে হায়দররা জানিয়েছেন। এই বিধানসভায় প্রায় ২২ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে।
তুলনায় বিজেপি যেন অনেকটাই নিশ্চিন্ত! বিজেপি প্রার্থী অরূপকান্তি দিগারের দাবি, ‘‘উন্নয়নের নিরিখে বিজেপির প্রতি মানুষের আস্থা উত্তরোত্তর বাড়ছে। নদ-নদী ঘেরা বিধানসভা এলাকায় একাধিক সেতুর দাবি, যোগযোগ ব্যবস্থা, পানীয় জল ইত্যাদি সমস্যা যে একমাত্র বিজেপিই সমাধান করতে পারে, তা মানুষ বুঝতে পারছেন। এখানে আমরা প্রায় ৪০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকব।”
খানাকুল বন্যাপ্রবণ এলাকা। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল এখানে নতিবপুরে মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপর সেতু, মাড়োখানায় রূপানারায়ণ নদের উপর সেতু, ময়ালে দ্বারকেশ্বর নদের উপর সেতু, পোল অঞ্চলে অরোরা খালের উপর সেতুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সে সব আজও হয়নি। মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপর কেদারপুর এবং ছত্রশালেও সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। বেশ কিছু রাস্তা হলেও সেগুলি বর্ষায় টিকছে না, এমন অভিযোগও রয়েছে বহু গ্রামে।
গ্রামবাসীদের মধ্যে পোল গ্রামের শেখ হারুন, ঠাকুরানিচকের বসন্ত মালিক, ধান্যগোড়ির শশাঙ্ক সামন্ত প্রাপ্তির পাশাপাশি অপ্রাপ্তি নিয়েও মুখ খুলছেন। মাড়োখানার বিমল মাইতি নামে এক ব্যবসায়ীর খেদ, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী এ সব প্রকল্পে সুরাহা খুবই হয়েছে। কিন্তু খানাকুলে এগুলোই তো সব নয়।’’
তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগ বলেন, ‘‘প্রচারে কিছু সেতুর কথা বলছেন মানুষ। তা হচ্ছেও। যেমন, মুচিঘাটায় সেতুর কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। মানুষ জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন। গত বিধানসভা বা পঞ্চায়েত ভোটে যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন।’’
সিপিএম প্রার্থী বিপ্লবকুমার মৈত্র প্রচারে তৃণমূলের ‘দুর্নীতি’ এবং খানাকুলের অপ্রাপ্তির কথাই বেশি বলছেন। তিনিও জয়ের আশা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল সাড়া পাচ্ছি। বিজেপির প্রতি যে ঢল ছিল, সেটা প্রায় সবটাই ফিরে আসছে আমাদের দিকে। এখানে বাম আমলে করা সেতু ও রাস্তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সেতু বা রাস্তা হয়নি। কিছুই হয়নি বলে মানুষ ফুঁসছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy