পুরুলিয়া শহরে রোড-শোয় শুভেন্দু অধিকারী। (উপরে) পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লক মাঠের সভায়। ছবি: সুজিত মাহাতো ও রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
ভোট কাটাকুটিতে তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতেই ভোটে লড়ছেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো। একই ‘উদ্দেশ্য’ ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী নেপাল মাহাতোরও। রবিবার মানবাজার বিধানসভার পুঞ্চা ব্লক ময়দানে পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী জ্যোর্তিময় সিং মাহাতোর সভা থেকে এ ভাবেই তোপ দাগলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর হুঁশিয়ারি, “আপনি (অজিত) তৃণমূলের ‘বি টিম’ হিসাবে কাজ করে চোর তৃণমূলের সঙ্গে চুক্তি করে পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে জিতিয়েছেন। এ বার তা হতে দেব না।” নেপালের উদ্দেশেও তাঁর অভিযোগ, “আপনি ভোট কেটে চোর তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতে চাইছেন।”
পাল্টা অজিতের দাবি, “জাতিসত্তার আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন ওঁর (শুভেন্দু) জন্মই হয়নি। আজ সেই লড়াইয়ের উত্থান দেখে সকলেই ভয় পাচ্ছেন। আমরা কারও পক্ষেই নই। আর শুধু কুড়মি নয়, গোটা জঙ্গলমহলের জনজাতি গোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষার দাবিতেই আমাদের লড়াই। এর তাৎপর্য বোঝার ক্ষমতা শুভেন্দুবাবুদের নেই।” নেপালও বলেন, “এই সব মন্তব্য রাজনৈতিক অজ্ঞানতার ফল। বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। ওদের লড়াই এখন পুরুলিয়া কেন্দ্রে তৃতীয় স্থান পাওয়ার লক্ষ্যে।”
জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, পুরুলিয়ায় গত বার বিজেপির দু’লক্ষাধিক ভোটে জেতার পেছনে কাজ করেছে কুড়মি সমাজের একাংশের সমর্থন। এ বারে ছবিটা তবে আলাদা। অজিত প্রার্থী হওয়ায় পুরোদস্তুর নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়েছে কুড়মি সমাজ। পুরুলিয়া কেন্দ্রের ৩০ শতাংশের বেশি কুড়মি সমাজের ভোট তাঁদের দিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় বিজেপির নিচুতলার নেতা-কর্মীরাই। সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের প্রার্থী নেপাল বাম-কংগ্রেসের ভোট ঐক্যবদ্ধ ভাবে পেলে জেলার ভোট-সমীকরণ বদলাতে পারে। বিশেষত যেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরিসংখ্যানে সিপিএম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট পৌঁছেছে প্রায় আড়াই লক্ষে। গত লোকসভার তুলনায় যা এক লক্ষের কিছু বেশি। সেই সমীকরণ মাথায় রেখে ভোট কাটাকুটি আটকাতে পুরুলিয়া কেন্দ্রে এ বার লড়াই সরাসরি তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্যে, এ দিন এমনই বার্তা দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “লড়াই এ বার সিধা। এক দিকে চোর তৃণমূল আর অন্য দিকে রাষ্ট্রবাদী বিজেপি। মাঝে কারও স্থান নেই।”
কুড়মি ভোট রোখার সঙ্গে এ দিন আদিবাসী-ভোট নিয়েও মাথা ঘামাতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দুকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা, কুড়মি-ভোট হাতছাড়া হলে ১৮ শতাংশ আদিবাসীদের সমর্থন ভোট বৈতরণী পেরোতে অন্যতম ভরসা হতে পারে বিজেপির। আদিবাসী অধ্যুষিত মানবাজার বিধানসভার সভা থেকে এ দিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আদিবাসী বিরোধী’ বলে দাগিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কী ভাবে দেশ জুড়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন, তার তালিকা দেন। মনে করান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির বিধায়ক-সাংসদেরা আদিবাসী সমাজের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দিলেও মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূলের বিধায়কেরা তা করেননি। পাল্টা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “বিজেপি-শাসিত মণিপুর, মধ্যপ্রদেশে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপরে কী নির্মম আক্রমণ হচ্ছে, সকলেই জানেন। একমাত্র এ রাজ্যে আদিবাসীরা শান্তিতে আছেন। ভোট পেতেই আদিবাসী-দরদী সেজে সকলকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন উনি।”
জেলার উন্নয়নে জ্যোতির্ময়ের কোনও ভূমিকা নেই বলে বারবার দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তাঁকে পাশে রেখে শুভেন্দু বলেন, “পুরুলিয়ায় বন্দে ভারত থামিয়েছেন জ্যোতির্ময়। জাতীয় সড়কের কাজ হচ্ছে জেলায়। সংসদে নিয়ম করেই জ্যোতির্ময় পুরুলিয়ার জল, শিল্পের সমস্যা মিটিয়ে পুরুলিয়াকে আদর্শ জেলা করার দাবি ধারাবাহিক ভাবেই জানিয়েছেন।”
পুঞ্চার সভা সেরে এ দিন সন্ধ্যায় পুরুলিয়া স্টেশনের অদূরে সঙ্কটমোচন মন্দিরের সামনে থেকে ট্যাক্সিস্ট্যান্ড পর্যন্ত রোড-শোয় যোগ দেন শুভেন্দু। সঙ্গে ছিলেন প্রার্থী জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো, পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়, দলের জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা, রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী প্রমুখ। পুঞ্চার সভার মতো ভাল জমায়েত হয়েছিল রোড-শোতেও, দাবি বিজেপির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy