দমদমে প্রচারে সোনামণি টুডু। নিজস্ব চিত্র।
শুরুতে অখ্যাত সোনামণিই শেষ পর্বে 'তারকা' প্রচারক!
বিগত কয়েকটি নির্বাচনেই দেখা গিয়েছে, বামেরা বিশেষ করে সিপিএম তরুণ প্রজন্মকে সামনে এনে লড়ছে। এতদিন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, এমনকি বিধানসভার ভোটে সেই কৌশল দেখা গিয়েছিল। এ বার লোকসভার মতো বড় মঞ্চের ভোটেও দেখা গেল তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদেরই প্রাধান্য দিয়েছে সিপিএম। ঝাড়গ্রাম এসটি সংরক্ষিত কেন্দ্রে বামেদের বাজি ছিল অখ্যাত সোনামণি মুর্মু টুডু। সেই সোনামণিই এখন বামেদের 'তারকা' প্রচারকের সম্মান পাচ্ছেন। জানা গিয়েছে, বুধ ও বৃহস্পতিবার সোনামণি মুর্মু টুডু বারাসত, দমদম লোকসভা কেন্দ্রে ও বরাহনগর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রচার করেছেন। সোনামণি বলছেন, "এটা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।"
অথচ যখন ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে হেভিওয়েটদের সরিয়ে সোনামণির নাম বামেদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন দলেরই অনেকে তাঁর নাম জানতেন না। সিপিএমের তাবড় 'কমরেড'রা তাঁকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। ভোটপর্বের প্রথম দিকে তাঁর প্রচারে ঢিলেঢালা ভাবও লক্ষ্য করা গিয়েছিল। প্রথম দিকে তাঁর কেন্দ্রে দলের বা বামেদের তরফ থেকে 'তারকা' প্রচারক আসেননি। পরবর্তীতে সোনামণির প্রচারে ঝাড়গ্রাম জেলায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, দলের রাজ্য কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, তাপস সিনহা, সোমনাথ ভট্টাচার্যরা আসেন। লোকসভা এলাকার বান্দোয়ানে প্রচারে এসেছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সদস্য পার্থ যাদব জানাচ্ছেন, ঝাড়গ্রাম জেলার সব এলাকাতেই প্রার্থীর সমর্থনে দলীয় প্রচার কর্মসূচি হয়েছে। তবে এত বিশাল লোকসভা এলাকা হওয়ার কারণে প্রার্থী নিজে সব জায়গায় পৌঁছতে পারেননি।
সোনামণি বলছেন, ‘‘শূন্য থেকে আমরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমার রাজনীতি এতদিন পঞ্চায়েতস্তরে সীমাবদ্ধ ছিল। দল আমাকে বৃহত্তর আঙিনায় নামিয়েছে। ভাল ভোট পাব আশা করছি। দলের সহযোগিতা অবশ্যই পেয়েছি। দমদমের দলীয় প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী ও উত্তর কলকাতার কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যের নির্বাচনী ক্ষেত্রে প্রচারে ডাক পেয়ে প্রচার করেছি।’’ পার্থ যাদব জানাচ্ছেন, দলের তরফে আমন্ত্রণ পেয়ে সোনামণি বুধ ও বৃহস্পতিবার বারাসত কেন্দ্রের ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, দমদম কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী ও বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী তন্ময় তন্ময় ভট্টাচার্যের হয়ে ওই কেন্দ্র গুলিতে প্রচার করেছেন।
গড়বেতায় প্রচারে এসে দলীয় প্রার্থী সোনামণি মুর্মুকে পাশে রেখে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছিলেন 'ও খুব ভালো মেয়ে, ভাল বক্তব্য রাখে'। গোপীবল্লভপুরে একসঙ্গে তিন ভাষায় বক্তব্য রেখে মহম্মদ সেলিমের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন সোনামণি। সে দিন সেলিম বলেছিলেন, "সোনামণি খুব ভালো বক্তৃতা দিতে পারেন, সে লক্ষ্মী মেয়ে, তাই সোনামণিকে স্টার ক্যাম্পেন করা হয়েছে।" শালবনিতে প্রচার কাজে এসে বৃন্দা কারাতও সোনামণির বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
সেই 'ভালো মেয়ে', 'লক্ষ্মী মেয়ে'কে ঝাড়গ্রাম থেকে জেতাতে বামেরা এ বার চেষ্টার কসুর করেনি। নেমেছিল সঙ্গী কংগ্রেসও। ভোট শেষে তরুণ বাম কর্মী সমর্থকেরা বলছেন, "প্রচারটা যদি আরও জাঁকে হত তাহলে লড়াইটা জমে যেত।" তবুও এই ভোটে তাঁরা আগের তুলনায় অনেকটাই শক্তি প্রদর্শন করতে পেরেছে বলে বামেদের দাবি। বামেরা বলছে, পঞ্চায়েত ভোটে সংগঠনকে আরও ঢেলে সাজানো হয়েছে। জেলায় সিপিএমের ছাত্র সংগঠন অনেকটাই মজবুত হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৌতম মাহাতো বলেন, ‘‘সংগঠন অনেকটাই মজুবত। পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় অনেক বুথে এজেন্ট বসাতে পেরেছি। বিভিন্ন এলাকায় মিছিল-মিটিং ও দলীয় কর্মসূচি করা গিয়েছে। আমাদের তরুণ প্রার্থী রাজনীতি বোঝেন। ছবি তোলার জন্য প্রার্থী হননি।’’ সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলছেন, "শহরের প্রচার আর মফস্বলের প্রচার তো এক নয়। খানিকটা আলাদা হবেই। তবুও সোনামণি মুর্মুর প্রচারে গ্রামের মানুষের সাড়া ছিল। প্রার্থী নিজেও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আমাদের জেলায়, ঝাড়গ্রাম জেলায় বা বান্দোয়ানে ভালোই প্রচার হয়েছে। প্রথমসারির নেতৃত্বরা প্রচারে ছিলেন।"
মীনাক্ষী, সৃজন, দীপ্সিতাদের মতো বামেদের 'তরুণ' তালিকায় এবার জঙ্গলমহলের 'অখ্যাত' সোনামণিও 'তারকা'।
(তথ্য সহায়তা: কিংশুক গুপ্ত, রঞ্জন পাল, বরুণ দে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy