হেমতপুরের রাজবাড়ি। দুবরাজপুর। নিজস্ব চিত্র।
বীরভূম কেন্দ্র থেকে শাসকদলের প্রার্থী শতাব্দী রায় জয়ী হয়েছেন। প্রতিটি বিধানসভা এলাকা থেকেই তিনি লিড পেয়েছেন। ব্যবধানও অনেকটাই বাড়িয়েছেন। তবে এর মধ্যে ‘অবাক’ করেছে দুবরাজপুর বিধানসভা। কারণ, গত লোকসভা ও বিধানসভায় এখানে পিছিয়ে থাকলেও এ বার সেই ঘাটতি মিটিয়ে ১৮ হাজারের বেশি লিড পেয়েছেন শতাব্দী। কোন ‘জাদু বলে’ সেটা সম্ভব হল, তাই চর্চার বিষয়।
দুবরাজপুর বিধানসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে গোটা খয়রাশোল ব্লক, দুবরাজপুর ব্লকের ছ’টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা এবং পুরসভা। গত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় খারাপ ফলের জন্য দায়ী ছিল খয়রাশোল ব্লকই। ব্লকের ১০টি অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র বড়রা ছাড়া বাকি সব ক’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির এগিয়ে থাকে। তাই ব্লকে সাড়ে ১৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে যান শতাব্দী। দুবরাজপুরের ব্লকে সামান্য এগিয়ে থাকলেও, সাড়ে ১৪ হাজারের ঘাটতি পূরণ করা যায়নি। ব্যবধান কমাতে পারলেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গিয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনেও।
জেলার বাকি ১০টি বিধানসভায় শাসকদলের প্রার্থীরা জয়ী হলেও, দুবরাজপুর বিধানসভা শাসকদলের থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। সে বারও বিজেপির কাছে হারের অন্যতম কারণ ছিল খয়রাশোল। লোকসভার থেকে ব্যবধান কমাতে পারলেও বিধানসভায় ৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল শাসকদল। দুবরাজপুর ব্লকের অংশ থেকে দু’হাজারের কিছু বেশি লিড পেলেও বিজেপি প্রার্থী অনুপ সাহার জয় রুখতে পারেনি তৃণমূল। তাই লোকসভা নির্বাচন নিয়ে ‘চাপা উৎকন্ঠা’ ছিল শাসকদলের অন্দরেই। সেখানেই এ বার উত্তীর্ণ দুবরাজপুর বিধানসভা এবং ওই বিধানসভা অঙ্গ খয়রাশোল।
কী ভাবে সেটা সম্ভব হল?
শাসকদলের নেতাদের মতে, খয়রাশোলে এমন অবস্থার নেপথ্যে ছিল গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি, বোমা-বারুদের রাজনীতি, এবং জনসংযোগ না থাকা। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে লাগাতার সে দিকগুলি ঠিক করার চেষ্টা চলেছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে খয়রাশোল শাসকদল তুলনায় ভাল ফল করলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লাগাম পরাতে ‘ব্যর্থ’ হয়। মূল সংঘাত ছিল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী এবং তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে। জেলার নেতারা ‘ব্যর্থ’ ছিলেন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে।
জানুয়ারিতে পদক্ষেপ করা হয় রাজ্য থেকেই। কাঞ্চন ও তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত চার সদস্যকে মিলিয়ে মোট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিকে ব্লক সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া। প্রথম দিকে কাঞ্চন নিজেকে খানিকটা ‘গুটিয়ে’ নেওয়ার দোষারপের পালা সরিয়ে সকলে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রায় একই পদক্ষেপ করা হয় দুবরাজপুরেও।
দুবরাজপুর ব্লকের সভাপতি ভোলানাথ মিত্রকে সরিয়ে ১৫ সদস্যের কমিটিকে দিয়ে গত পঞ্চায়েত নির্বাচন পার করেছিল শাসকদল। আশাতীত ফল করলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিস্তর ‘মতানৈক্য’ তৈরি হয়েছিল বলে চর্চা। নতুন দু’জনকে আহ্বায়ক করে ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। খারাপ ফল হলে দায় নিতে হবে, জেলার মাটি থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তার পরে নিজেদের মধ্যে ‘বিরোধ’ আড়াল করে সকলেই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে সূত্রের খবর। নেতাদের মধ্যে যাঁরা ‘বেসুরো’ ছিলেন তাঁদেরকে কার্যত ‘গুরুত্বহীন’ করে দেওয়া হয়। বাকি কাজটা করেছে লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্প, বিজেপির সাংগঠনিক খামতি, প্রার্থী নিয়ে টালবাহানা, শেষ বেলায় প্রার্থী বদলের মতো বিষয়গুলি।
তৃণমূলের দাবি, খয়রাশোলে অভিষেকের সভা ও সংখ্যালঘু ভোট ভাগ রুখতে খয়রাশোলে ও দুবরাজপুরে ফিরহাদ হাকিমের সভা এই লিডের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহাও মানছেন সে কথা। তিনি বলেন, ‘‘শাসকদলের লক্ষ্মীর ভান্ডার ছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিমদের যে বড় সভা হয়েছে তার পাল্টা আমাদের কোনও প্রচার ছিল না। প্রার্থী বদল, প্রচারে ঘাটতি, সাংগঠনিক দুর্বলতার মতো কারণও রয়েছে।’’
তবে তৃণমূলের ভাল ফলের পরেও খয়রাশোলের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এগিয়ে বিজেপি। দুবরাজপুরের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এগিয়ে বিজেপি। এমনকি, দুবরাজপুর পুরশহরের ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে১০টি এগিয়ে বিজেপি। তাই অনুপের দাবি, ‘‘আমি মনে করি এখনও মানুষ বিজেপির সঙ্গে আছেন।’’
অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি নিয়ে যে মোহ ছিল সেটা তিন বছর বিজেপি বিধায়ককে দেখে কেটে গিয়েছে। আমাদের ভুলত্রুটি ও বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী সংখ্যালঘু ভোট কাটবেন কি না সেটা নিয়ে চিন্তা ছিল। সেটা ঘটেনি। পাশাপাশি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পের জন্যও ঢেলে ভোট দিয়েছেন মহিলারা। তাই এই
ফল হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy