Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024 Result

মুকুটমণি বিজেপিতে নাকি ফের প্রার্থী? চর্চা তৃণমূলেই

দ্বিতীয় সম্ভাবনা অর্থাৎ তৃণমূলের সংসারে মিশে যাওয়ার চেষ্টা মুকুটের পক্ষে তুলনায় সহজ হলেও সেই পথও নিষ্কণ্টক নয়।

মুকুটমণি অধিকারী।

মুকুটমণি অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।

সুদেব দাস
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪ ০৯:৪৪
Share: Save:

ফুল বদল করে তিনি রানাঘাটের প্রার্থী হয়েছিলেন। যে ফুল গত বার দু’লাখ ৩৩ হাজার ভোটে জিতেছিল, সেই পদ্মকে ছেড়ে ঘাসফুলে যাওয়ায় যে বিরাট ঝুঁকি ছি, তাতে সন্দেহ নেই। তার জন্য নিজের বিধায়ক পদও ছেড়ে দেন মুকুটমণি অধিকারী। প্রায় এক লক্ষ ৮৮ হাজার ভো‌টে পরাজিত হওয়ার পরে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে তৃণমূল তাঁকেই ফের প্রার্থী করবে কি না, সেই চর্চাও শুরু হয়েছে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, মুকুটের সামনে আপাতত দু’টি রাস্তা খোলা। এক, তৃণমূলে থেকে বিশেষ সুবিধা হবে না ধরে নিয়ে বিজেপিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করা। দুই, দক্ষিণ নদিয়ায় তৃণমূলের কোন্দল-কণ্টকিত সংসারে নিরাপদ অবস্থান খোঁজা এবং সাংগঠনিক স্তরে নিজের জায়গা তৈরি করা।সে ক্ষেত্রে দল যদি তাঁকে উপনির্বাচনেও ফের প্রার্থী করে, সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়া।

প্রথম সম্ভাবনা অন্তত এখনও উড়িয়ে দিচ্ছেন মুকুটমণি। তাঁর দাবি, "বিজেপির কিছু লোকজন এবং আমাদের দলেরই একটা অংশ এই অপপ্রচার করেছে। আমি কখনও বিজেপিতে ফিরে যাওয়ার কথা বলিনি।" তবে মুকুট বিজেপিতে ফিরতে চাইলেও তা যে খুব সহজ হবে, এমনটাও নয়। একে তো সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকারের সঙ্গে তাঁর বিবাদ সর্বজনবিদিত। তার উপর জেলা নেতৃত্বও তাঁর সঙ্গে নেই। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "মুকুটমণি অধিকারীকে দলে ফেরানো নিয়ে বুথস্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত প্রত্যেকেরই তীব্র আপত্তি রয়েছে। বাকিটা রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত।"

দ্বিতীয় সম্ভাবনা অর্থাৎ তৃণমূলের সংসারে মিশে যাওয়ার চেষ্টা মুকুটের পক্ষে তুলনায় সহজ হলেও সেই পথও নিষ্কণ্টক নয়। বিজেপির ঘর ভাঙিয়ে ‘মতুয়া নেতা’ মুকুটমণিকে দলে টেনেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি তৃণমূল। তাঁর সমর্থনে একাদিক জনসভা করে গিয়েছেন মমতা ও অবিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও মুকুটের জাদুস্পর্শে ‘মতুয়া ম্যাজিক’-এর বদলে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। মুকুট অবশ্য তার জন্য ভোটপর্বে তৃণমূলের একাংশের ‘উদাসীনতা’কেই অ‌ংশত দায়ী করছেন। তাঁর কথায়, "মতুয়াদের একাংশের বিরাগ সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে ভালই উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং সমন্বয়ের অভাবই পরাজয়ের অন্যতম কারণ।"

দক্ষিণ নদিয়ায় বিজেপির মতোই তৃণমূলের সংসারও সতত কোন্দলপরায়ণ। গত বিধানসভা নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে মুকুটমণির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তৃণমূলের বর্ণালী দে। তাঁকেই প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার ভোটে হারিয়ে বিধা।ক হয়েছিলেম মুকুট। বর্ণালী বর্তমানে নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য। এ বার ভোটের আগে তাঁকেও দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে দেখা গিয়েছে। তার পরেও এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছে বিজেপি, গত বারের চেয়ে মাত্র আট হাজার কম। তৃণমূলেরই একা‌ংশের ধারণা, সবায়-মিছিলে লোক জড়ো করায় খামতি না থাকলেও সব ভোট শেষ পর্যন্ত ভোট ইভিএমে এসে পৌঁছয়নি। এই প্রসঙ্গে বর্ণালী অবশ্য বলেন, “শুধু এই শুধু বিধানসভা কেন্দ্রে তো নয়, শহরগুলোতেও আমাদের ‘লিড’ হয়নি। সাংগঠনিক ভাবে নিশ্চই এর পর্যালোচনা হবে।"

মতুয়া ভোট টানার আশা জাগিয়ে তৃণমূল শিবিরে আসা মুকুটমণি এত দিন প্রার্থী হিসাবে দলের নেতাকর্মীদের কাছে যে বাড়তি সম্ভ্রম পাচ্ছিলেন, তা আপাতত অন্তর্হিত। এ বার টিকে থাকতে গেলে তাঁকে নিজের জোরেই জায়গা করতে হবে। তার জন্য গোষ্ঠী সমীকরণের প্যাঁচঘোঁচও দ্রুত বুঝে নিতে হবে। যদিও তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “আমাদের দলে কোথাও কোনও অন্তর্কলহ নেই।" আর মুকুট বলছেন, "দলের প্রত্যেক স্তরের কর্মী, সব নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছি।" মুকুটকে কি স‌ংগঠনের নেতৃত্বে কোনও পদ দেবে তৃণমূল? দেবাশীষের দাবি, “আমাদের দলে নেতা বলে কেউ নেই। আমরা প্রত্যেকেই কর্মী। মুকুটমণি অধিকারীও তা-ই। যিনি দলের জন্য যত পরিশ্রম করবেন, তাঁর তত বৃদ্ধি হবে।”

এর পরে আসছে সেই মোক্ষম প্রশ্ন: আসন্ন উপনির্বাচনে এই কঠিন কেন্দ্রে লড়াই দেওয়ার জন্য প্রাক্চন বিধায়ক মুকুটমণিকেই আবার এগিয়ে দেবে তৃণমূল? এবং সে ক্ষেত্রে তিনি কি দলের নেতাকর্মীদের ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ পাবেন?

এ প্রসঙ্গে বর্ণালীর বক্তব্য, "উপনির্বাচনে ওঁর প্রার্থী হওয়া বা না হওয়া সবটাই দলের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমার কোনও মতামতের প্রশ্নই নেই।” দেবাশীষও বলছেন, “এই ফলাফলের পর উপনির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে আমাদের তরফে বলার কিছু নেই। প্রার্থী বাছাইয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।" আর মুকুটমণি বলেন, "ও সব নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। দল যেমন নির্দেশ দেবে, তা-ই মেনে চলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Ranaghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE