—প্রতীকী চিত্র।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রে চতুর্মুখী লড়াই হয়েছে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও আইএসএফের মধ্যে। এর মধ্যে কেবলমাত্র ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র, যেখানে আইএসএফের শক্ত ঘাঁটি, সেখানে তারা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কেবলমাত্র ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও সিপিএম ছিল দ্বিতীয় স্থানে। এ বার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-সিপিএমকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় সারিতে উঠে এল আইএসএফ।
যাদবপুর কেন্দ্রের মধ্যে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ পেয়েছেন ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৮৬ ভোট, বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় পেয়েছেন ২৯ হাজার ২১১ ভোট, আইএসএফ প্রার্থী নুর আলম খান পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৪টি ভোট এবং সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য পেয়েছেন ১০ হাজার ২৫৯ ভোট। অর্থাৎ, ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আইএসএফ প্রার্থী নুর আলম খানের থেকে তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ ৪১ হাজার ৪৮২ ভোট বেশি পেয়েছেন।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড়ে সিপিএমের সঙ্গে জোট করে আইএসএফ ও সিপিএম যেখানে প্রার্থী দিতে পেরেছিল, সেখানে তারা জিতেছিল। এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে আইএসএফ-সিপিএমের জোট ভেস্তে যায়। ভোটের আবহে আইএসএফের মিটিং-মিছিলেও তেমন ‘জোশ’ চোখে পড়ছিল না। দলের উপর তলার নেতাদের মনোভাব ঠিক কী, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা চলছিল। আবার সিপিএমের সঙ্গে জোট ভেস্তে গেলেও সিপিএম প্রার্থী সৃজনকে আইএসএফের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিতও চোখে পড়ে। মারধরে জখম আইএসএফ কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সৃজন। যদিও আইএসএফ নেতাদের ব্যাখ্যা ছিল, ‘সবই লোক দেখানো।’
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের মতো আদৌ কতটা টক্কর দিতে পারবে আইএসএফ, সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনৈতিক মহলে। যদিও ভোটের কিছু দিন আগে তৃণমূল-আইএসএফের মধ্যে বার কয়েক মারপিটের ঘটনায় আইএসএফের পুরনো ঝাঁঝ দেখতে পাচ্ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ভোটের ফল কী হয়, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল নানা মহলে। বাস্তবেও দেখা গেল, ভাঙড়ের ভোটে তৃণমূলের চোখে চোখ রেখে লড়ে গিয়েছে আইএসএফ।
বহু বছর পরে এ বার ভাঙড়ের ভোটে ছিলেন না সেখানকার ‘ভোট মেশিনারি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আরাবুল ইসলাম। তিনি কয়েক মাস হয়ে গেল জেলবন্দি। আরাবুল ঘনিষ্ঠ আরও এক নেতা জেলে। কাইজার আহমেদকে দল থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন সওকাত মোল্লা। তিনিই পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে ভাঙড়ে দলের হাল ধরেছিলেন। লোকসভা ভোটে ভাঙড়ের ফলাফল তাঁর কাছেও ছিল চ্যালেঞ্জ। ভাঙড়ে এক নম্বর হয়েছে তৃণমূল। যাদবপুর কেন্দ্রও জিতেছে। এক অর্থে, নিজের লড়াইয়ে সফল সওকাত। তবে এই পরিস্থিতিতেও ভাঙড়ে আইএসএফের ফলাফল হয়েছে নজরকাড়া। আইএসএফের নিচুতলার কর্মীরা অনেকেই এখন মনে করছেন, গত বিধানসভার মতো সিপিএমের সঙ্গে যদি জোট হত, তা হলে ভাঙড় থেকে আইএসএফ প্রথম হতে পারত।
এ বিষয়ে নওসাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ভোটের অনেক আগে থেকেই আমাদের কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের চক্রান্ত হয়েছে। ভোটের দিন আমাদের এজেন্টদের মেরে বুথ থেকে বের করে দিয়েছে। বুথ জ্যাম, ছাপ্পা দিয়ে, ভোট দিতে দেয়নি। অশান্তি করেছে। যেহেতু জোট হয়নি, তাই এ নিয়ে এখন চিন্তা করে লাভ
নেই। আমরা লড়াই করেছি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা আরও বেশি ভোট পেতাম।’’
সিপিএমের যাদবপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘বামপন্থীদের সঙ্গে আইএসএফের জোট না হওয়াটা তৃণমূলের সাফল্যের একটা কারণ। তবে ভাঙড় বিধানসভায় আইএসএফের একটা নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক আছে। যাদবপুর কেন্দ্রের অন্যান্য এলাকায় তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএমের লড়াই হয়েছে। ভাঙড়ে কেবলমাত্র আইএসএফ-তৃণমূলের লড়াই হয়েছে। আমরা এখানে মানুষের কাছে বিকল্প হিসেবে উঠে আসতে পারিনি।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুনীপ দাসের ব্যাখ্যা, ‘‘ভাঙড়ের মানুষ সিপিএমকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। আমরা আমাদের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রেখেছি। তবে আইএসএফ-সিপিএম জোট হলে ভাঙড়ে তৃণমূল হেরে যেত।’’
কী বলছেন সওকাত? তাঁর কথায়, ‘‘অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হয়েছিল আমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেউ সফল হতে পারেনি। কিছু অঞ্চলে আমাদের ফল খারাপ হয়েছে। মানুষ সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও আইএসএফের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে বেছে নিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy