মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে অরণ্যশহরে তৃণমূলের বিপর্যয় নিয়ে দায় এড়াছেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা!
তৃণমূলের একাংশ এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। ওই মহলের দাবি, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফলে শহরে ১০টি ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল। সেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে এ বার ঝাড়গ্রাম শহরে তিনটি দলীয় প্রচার কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই তিনটি কমিটির মাথায় প্রধান পর্যবেক্ষক ছিলেন মন্ত্রী। এ ছাড়াও বাকি তিন পর্যবেক্ষক ছিলেন জেলা তৃণমূলের তিন জন সহ-সভাপতি প্রশান্ত রায়, দুর্গেশ মল্লদেব এবং প্রসূন ষড়ঙ্গী। লোকসভা ভোটে এ বার ১ লক্ষ ৭৪ হাজারের বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেন। অথচ এ বার ঝাড়গ্রাম শহরের ১১টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। মাত্র ছ’টি ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে। একটি ওয়ার্ডে তৃণমূল ও বিজেপির প্রাপ্তভোট সমান-সমান। বিরবাহা শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সেখানেও তৃণমূল পিছিয়ে।
শহরে শাসকদলের ভোট বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। শহর তৃণমূলের সভাপতি নবু গোয়ালা মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ। নবু নিজে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি। তাঁর ওয়ার্ডে অবশ্য তৃণমূল এগিয়ে। কিন্তু পুর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডেই তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি। কেবল ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি ছবি দাস সিপিআইয়ের। কার্যত নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ তৃণমূলের পুরবোর্ড। লোকসভার গ্রামীণ এলাকায় যেখানে তৃণমূলের ঝুলিতে ৫০-৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে, সেখানে শহরের চিত্রটা হতাশাজনক। তবে বিরবাহার দাবি, শহরে নির্বাচনী কমিটির বিষয়ে তাঁর কিছুই জানা নেই। কেউ তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করেননি। প্রসূন ষড়ঙ্গীও বলছেন, ‘‘শহরে প্রচার কমিটিতে যে আমাকে পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল, সেটাই আমার জানা ছিল না। দায়িত্ব দিলে ষোলো আনা পালন করতাম।’’ আর শহর তৃণমূলের সভাপতি নবু গোয়ালা ভোটের আগে প্রচার কমিটি গঠনের কথা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন। ফল প্রকাশের পর এ বিষয়ে নবু নিরুত্তর। তবে জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানাচ্ছেন, ‘‘শহরের জন্য তিনটি প্রচার কমিটি গড়া হলেও আলাদা করে তার কোনও বৈঠক হয়নি। এখন ফল খারাপ হওয়ায় সকলেই দায় এড়াতে চাইছেন। কারণ, ঝাড়গ্রামে নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে গিয়েছিলেন, যাঁর এলাকার ভাল ফল হবে, তিনি পুরস্কার পাবেন। খারাপ ফল হলে পদ হারাতে হতে পারে।’’ তবে শহর তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘খারাপ ফলের দায় সকলেরই। এ জন্য চুলচেরা বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কারণ, ২০২৬-এ বিধানসভা ভোট। শহরে কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি।’’
তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, পুরপ্রতিনিধিরা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি তথা পুরপ্রতিনিধি প্রশান্ত রায় আবার ঝাড়গ্রাম আদালতের সরকারি আইনজীবী। দক্ষ সংগঠক হলেও পেশাগত কারণে তিনিও ওয়ার্ডে পূর্ণ সময় দিতে পারেননি। আবার মন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক বিরবাহাও প্রথম থেকেই অন্য জেলা ও ভিন রাজ্যে প্রচারে সময় দিয়েছিলেন। ঝাড়গ্রাম বিধানসভার মধ্যেই ঝাড়গ্রাম শহর। ২০২২ সালের ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ৩৮,২৪০। এ বার লোকসভা ভোটে বিধানসভায় সেই ব্যবধান কমে হয়েছে ১৪,১০১। এমন খারাপ ফলের জন্য অবশ্য মন্ত্রী বিরবাহা কার্যত দলের একাংশকেই দায়ী করেছেন। মন্ত্রী বলছেন, ‘‘আমার বিধানসভার অন্তর্গত লালগড়ের নেতাই গ্রামের মত সেনসেটিভ জায়গায় প্রার্থীকে নিয়ে গিয়ে প্রচার করা হয়নি। অথচ বার বার আমি এ বিষয়ে দলের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছিলাম যাতে প্রার্থী নেতাইয়ে প্রচারে যান। আমাকেও প্রচারে ব্যবহার করা হয়নি।’’ তৃণমূলের একাংশ কর্মী অবশ্য জানাচ্ছেন, প্রার্থীর প্রচারের যাবতীয় দায়িত্বে ছিল পরামর্শদাতা সংস্থা ‘আই প্যাক’। নেতাইয়ে প্রচারের বিষয়টি পরামর্শদাতা সংস্থাকে জানানো হলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের কোনও ভূমিকা ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy