বর্ধমানের সাই কমপ্লেক্সের মাঠে মোদী। ছবি: উদিত সিংহ
ধানের গোলার মতো উপচে পড়ুক বর্ধমান, দুর্গাপুরের শিল্পাঞ্চলের পরিচিতি ছড়াক বিশ্বে— এমনটাই তিনি চান বলে জানিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও ধানে লাভ বাড়াতে বা শিল্পাঞ্চলের ধুঁকে চলা কারখানা, শ্রমিক-অসন্তোষের মোকাবিলা কী ভাবে হবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। শুক্রবার সকালে বর্ধমানের তালিতের সাই কমপ্লেক্সের মাঠে সভা করেন মোদী। প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্যে ‘বিকশিত ভারতের’ স্বপ্ন ফেরি করেন তিনি। যদিও তৃণমূলের দাবি, সবটাই ভাঁওতা।
পৌনে ১১টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর চপার-কনভয় সাইয়ের মাঠে নামে। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থী দিলীপ ঘোষ, বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী অসীম সরকার। তাঁর হাতে দুর্গার ছবি তুলে দেওয়া হয়। নিজের ছবিও উপহার পান। বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থীর সঙ্গে তিনি একান্তে কথাও বলেন। মোদী বলেন, “‘ভারত বিকশিত হলে তার লাভ দেশের প্রতিটি নাগরিকের। প্রত্যেক ভারতীয়ের আয় বাড়বে। বাংলার মানুষেরও আয় বাড়বে।” তাঁর সংযোজন, “দুর্গাপুরের মানুষের আয় বাড়বে। আর দিলীপজি এত পরিশ্রম করছেন, বর্ধমানের মানুষের আয় তো আরও বেশি বাড়বে।”
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূলের নেতারা। এ দিনই সভা শুরুর আগে ‘এক্স’ হ্যান্ডেল-এ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তোলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানা নিয়ে বিজেপি সরকারের পরিকল্পনা কী আছে? বিরোধীদের দাবি, মোদী সরকারের আমলে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল শুকিয়ে যাচ্ছে। অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের (এএসপি) বিলগ্নিকরণ নিয়ে শ্রমিক আন্দোলন চলছে। ডিএসপি-ও বিলগ্নিকরণের তালিকায় চলে এসেছে। বিজেপির আমলেই দুর্গাপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা-সহ তিনটি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে চা-চক্রে তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন দিলীপও। সিপিএম নেতা পঙ্কজ সরকারের কটাক্ষ, “দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল বিজেপির হাত ধরে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। গত বার লোকসভা ভোটে আসানসোলে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে’। বাবুল মিলতেই সরকারি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। আবার উনি এসেছেন।”
কেন্দ্রের নীতির জন্য ‘ধানের গোলা’ও শুকিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি বিরোধীদের। বর্ধমানের গোবিন্দভোগ চাল বিদেশের মাটিতে নিয়মিত যায়। সাধারণ আমন ও বোরো ধানও সারা বছর ভিন্ রাজ্যে পাঠান চালকল মালিকেরা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চাল ব্যবসায় যেন খরা চলছে। কেন্দ্রের নীতিতে অতিরিক্ত শুল্কের কারণে গোবিন্দভোগ ‘সোজা পথে’ বিদেশে যাচ্ছে না। কৃষকেরা ধান উৎপাদন করেও ঠিকঠাক দাম পাচ্ছেন না। কৃষকের গোলায় ধান জমছে। তৃণমূলের কিসান ও খেতমজুর সংগঠনের জেলার সভাপতি, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের দাবি, “কেন্দ্রের নীতিতে কৃষকদের সঙ্গে খেতমজুরেরাও মার খাচ্ছেন। চাষের কাজে উৎসাহ হারাচ্ছেন মজুররা।” যদিও দিলীপের দাবি, কেন্দ্রের নীতির জন্যই এ বছর সহায়ক মূল্যের চেয়েও খোলা বাজারে চাষিরা বেশি দামে ধান বিক্রি করেছেন। মোদী এ দিন বলেন, ‘‘বর্ধমানের আলু চাষিরা পিএম কিসাননিধি যোজনায় লাভ পেয়েছেন। ৫০০ কোটি টাকা বর্ধমানের উন্নয়নে দিয়েছি।’’
এ দিন প্রধানমন্ত্রীর সভায় কত লোক হয়েছিল তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিজেপির দাবি, লক্ষাধিক লোক হয়েছিল সভায়। লোকের চাপে যানজটও হয়। পাল্টা তৃণমূলের দাবি, মাঠের বেশির ভাগ জায়গা ফাঁকা ছিল। ভিন্ জেলা থেকেও লোক এনে ২৫ হাজার টপকাতে পারেনি। পুলিশের অনুমান, ৪০ থেকে ৫০ হাজার লোক হয়েছিল সভায়। ভিড়ের ৩০ শতাংশ ছিলেন মহিলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy