কীর্তি আজাদকে নিয়ে পদযাত্রায় মমতা। ছবি: উদিত সিংহ।
নিরাপত্তারক্ষীদের সরিয়ে দিয়ে বার বার রাস্তায় দাঁড়ানো মানুষের কাছে গেলেন। হাত মেলালেন। দাঁড়িয়ে থাকা দলের পুরনো সাথীদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করলেন। ভোটের আগে শেষ রবিবার বর্ধমান শহরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোড-শোয়ে তৈরি হল এমনই নানা মুহূর্ত।
বিকেল ৪টে ৪০ মিনিট নাগাদ স্পন্দন কমপ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামে। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। পৌনে ৫টা নাগাদ পুরভবনের সামনে থেকে হাঁটতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমেই রেল উড়ালপুলে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে হাত মেলান। উড়ালপুলের উপরে, নীচে উপচে পড়ছিল ভিড়। আদিবাসী নাচ, বাজনার তালে হাঁটছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরো রাস্তা জুড়ে বেজেছে– ‘জনগণের গর্জন/বিরোধীদের বিসর্জন’। স্পন্দন স্টেডিয়ামের সামনে থেকে পুলিশ লাইন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা হাঁটেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্য অরূপ বিশ্বাস ও বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূলের প্রার্থী কীর্তি আজাদ। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, ভিন্ জেলা থেকে লোক এনে রাস্তা ভরিয়েছে তৃণমূল। তাতেও দু’ধারে অনেক জায়গা ফাঁকা পড়েছিল।
২০১৬, ২০১৯ ও ২০২১ সালেও বর্ধমান শহরে পদযাত্রা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের দাবি, এ দিন শহরবাসীর উৎসাহ দেখা যায়নি। কার্জন গেট পেরনোর পরে মিছিল ছেড়ে অনেকেই বেরিয়ে যায়। দলীয় সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী এটি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। যদিও মিছিলের দায়িত্বে থাকা বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাসের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর জন্য শহরে জনজোয়ার হয়েছিল। দলের বাইরে প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়েছিলেন। যা দেখে মুখ্যমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। আমার সঙ্গে কথাও বলে গিয়েছেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রার জন্যে বিকেল ৩টে থেকেই জিটি রোডকে সুরক্ষা বলয়ে ঘিরে ফেলে পুলিশ। বিভিন্ন রাস্তার মোড় ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সকাল থেকেই ওই রাস্তার উপরে থাকা অস্থায়ী দোকানগুলিও বন্ধ ছিল। মিছিল প্রথম থামে জিটি রোডের উপরে গুরুদ্বারের সামনে। অপেক্ষমান শিখ ধর্মাবলম্বীরা মমতাকে অভ্যর্থনা জানান। কার্জন গেট পর্যন্ত দু’ধারে প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন। রাস্তার ধারে বাড়ি থেকে মহিলারা হাত নাড়েন। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে দেখা যায় অনেককে। কালীবাজার মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলের পুরনো নেতা উত্তম সেনগুপ্ত, জেলা তৃণমূলের মহিলা সভানেত্রী শিখা দত্ত সেনগুপ্ত। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। উত্তমের দাবি, “দিদি আমার খোঁজ নিল। কেমন আছিস, জানতে চাইল। রাজনৈতিক জীবনে এর চেয়ে বড় পাওনা আর কী আছে? আমি ও আমার পরিবার আপ্লুত।” জিটি রোডের ছিন্নমস্তা কালীবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে প্রণাম করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সময় মিছিল কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। গাড়িও চলে আসে। কিন্তু রাস্তায় লোক দাঁড়িয়ে আছে দেখে ফের হাঁটা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ লাইনে এসে গাড়িতে ওঠার সময় কয়েক জন হিন্দিভাষীকে আসতে দেখে মমতা বলেন, “আপনারা কীর্তি আজাদের পরিবারের লোক। এলাকায় ভাল ফল করতে হবে। কীর্তি আজাদ ভাল প্রার্থী, তিনবার সাংসদ ছিলেন। জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিলেন।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “বাইরের লোক আর প্রশাসন মিলে মিছিল করাল। আদর্শ আচরণবিধি মানা হয়নি।” বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “গত বিধানসভার চেয়েও লোক কম হয়েছে। উৎসাহও ছিল না।” তৃণমূল প্রার্থীর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর এই জনপ্রিয়তায় জিততে সাহায্য করবে।” যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এর পরে হেলিকপ্টার উঠতে অসুবিধা হবে। কথা বলতে
পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy