মেজাজটাই তো আসল রাজা! প্রচারের ফাঁকে জেলা কংগ্রেস দফতরে মনোজ চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
পরনে চেনা পোশাক। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। হাতে ওআরএস-এর বোতল। পায়ে চটি। রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার অল্প দিনের মধ্যেই ‘ছেঁড়া চটির মতো’ মন্ত্রিত্ব ফেলে দিয়ে এসেছিলেন মহাকরণে! তার পর থেকে পাজামা-পাঞ্জাবি আর চটি পরা এই প্রাক্তন স্কুল শিক্ষকের চক্কর কাটা চলছে!
এ বার মনোজ চক্রবর্তীর দৌড় চলছে তাঁর বহরমপুর ‘পুনরুদ্ধারে’র জন্য। কুঠার চিহ্নে নির্দল দাঁড় করিয়ে বহরমপুর থেকে প্রথম বার মনোজকে জিতিয়ে এনেছিলেন অধীর চৌধুরী। তার পরে আরও দু’বার মনোজ ছিলেন কংগ্রেসের বিধায়ক। বিদ্রোহ করে মমতার মন্ত্রিসভা ছেড়ে তাঁর বেরিয়ে আসা এবং কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভেঙে যাওয়ার পরে বিধানসভার কক্ষ গমগম করত মনোজের হইচইয়ে! তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে সেই মনোজকেই বহরমপুর তৃতীয় স্থানে নামিয়ে দিয়েছে! বিধায়ক হয়েছেন বিজেপির সুব্রত (কাঞ্চন) মৈত্র। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে আবার ‘লিড’ দিতে ময়দানে নেমেছেন প্রাক্তন বিধায়ক।
পাঁচ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে অধীরের জয়ের ব্যবধান আগের চেয়ে নেমে এসেছিল। তার মধ্যেও বহরমপুর বিধানসভা তাঁকে প্রায় ৮৯ হাজার ভোটে ‘লিড’ দিয়েছিল। সে সব হিসেবই উল্টে গিয়েছে ২০২১ সালের বিধানসভায় এসে। এ বার আবার চাকা ঘোরাতে চলছে মনোজের লড়াই। বহরমপুর বিধানসভার মধ্যে পঞ্চায়েতে থাকা পাঁচ অঞ্চল হাতিনগর, মনীন্দ্রনগর, ভাতুড়ি-১, দৌলতাবাদ ও গুরুদাসপুরে গিয়ে গিয়ে বৈঠকী সভা বসাচ্ছেন প্রাক্তন বিধায়ক। বহরমপুর পুর-এলাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডেও চলছে পরিক্রমা। প্রার্থী অধীরের সঙ্গে বেশ কিছু রোড-শো’ও আছে। বহরমপুরে ছোট ছোট সভায় অধীরকেও বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘মনোজ চক্রবর্তীকে গত বার আপনারা হারিয়ে দিয়েছেন। তাতে কি ভাল কিছু পেয়েছেন?’’
মুর্শিদাবাদ জেলায় গত বিধানসভা নির্বাচন দেখেছিল তীব্র মেরুকরণের ভোট। বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদ, দুই বিধানসভা সবাইকে চমকে দিয়ে গিয়েছিল বিজেপির দখলে। বাকি সব তৃণমূলের। সে বার জিতে আসা কোনও বিধায়ক পরবর্তী কালে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের মুখে মোবাইল ছুড়ে জলে ফেলেছেন, দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছেন, কেউ দলেরই অন্য নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করেছেন। তবে মনোজের সাদা পাঞ্জাবিতে কাদা লাগেনি। তিনি নিজের মতো ঘুরছেন, মানুষের কথা শুনছেন। কংগ্রেস নেতারা বলেন, রাজ্যে তৃণমূলকে হারিয়ে বিজেপি সরকার গড়তে পারবে, এই ধারণা থেকে গত বার বহরমপুরে ভোট হয়েছিল। কেউ কেউ আবার বলেন, মনোজের সঙ্গে এলাকার সংযোগ কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। মনোজ অবশ্য তা মানেন না। ইতিমধ্যে তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) হয়েছেন। তবে বিধানসভার পাট চুকে যাওয়ার পরে তাঁকে কলকাতায় দেখা যায় কালে-ভদ্রে। প্রাক্তন বিধায়কের কথায়, ‘‘অনেক দিন আগেই সুব্রতদা’কে (প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়) বলেছিলাম, কলকাতায় বেশি সময় দিয়ে সংগঠনের অন্য কাজ করলে ‘না ঘর কা, না ঘাট কা’ হয়ে যেতে হবে। তার চেয়ে আমি শুধু ঘর কা হয়েই থাকতে চাই!’’
চাকা কি সত্যিই ঘোরানো যাবে? পিছিয়ে থাকা বহরমপুরে আবার এগোতে পারবেন অধীর? কাজ তো কঠিন! মনোজ বলছেন, ‘‘কেন হবে না? তৃণমূলের স্বরূপ লোকে বুঝে ফেলেছে। আর বিজেপিকে ভোট দিয়ে কী হয়েছে, সেটাও মানুষ দেখছেন। এই বহরমপুরেই গত লোকসভা নির্বাচনের সময়ে দিদির সৈনিক হয়ে ঘাঁটি গেড়ে থেকে যিনি ভোট করাতেন, কংগ্রেসের পুরসভা, পঞ্চায়েত, বিধায়ক ভাঙাতেন, সেই শুভেন্দু অধিকারী এখন বিরোধী দলনেতা হয়ে এসে বলছেন দিদিকে হারাও! বলছেন অধীর চৌধুরীকে হারাও! বহরমপুরের মানুষ জানেন, তাঁদের জন্য অধীরবাবুই নিরাপদ।’’
কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদককে শুধু বহরমপুরের বাইরে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন? লোকসভা কেন্দ্রে তো আরও বহু এলাকা রয়েছে। এই বিধানসভার চাপই কি এত প্রবল? জেলা কংগ্রেস দফতরে চেয়ার টেনে চটি জোড়া খুলে, জুত করে বসছেন মনোজ। তার পরে শোনাচ্ছেন পুরাণের গল্প। বিশ্বরূপ দেখার জন্য সেই যে কার্তিক ময়ূরে চেপে ব্রক্ষাণ্ড ঘুরতে বেরিয়েছিলেন আর গণেশ শুধু মায়ের চারপাশে ঘুরে দুর্গার কোলে বসে পড়েছিলেন, সেই গল্প! হাতা গুটিয়ে মনোজের সহাস্য ঘোষণা, ‘‘কার্তিক নয়। আমি গণেশ হয়েই থাকতে চাই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy