—প্রতীকী চিত্র।
এক দিকে তৃণমূলের ‘ভোট মেশিনারি’, অন্য দিকে ‘চোরা’ গেরুয়া হাওয়া—দুই নিয়ে মশগুল জঙ্গলমহলের রাইপুর। লালগড় আন্দোলন-পর্বে মাওবাদী সন্ত্রাসের আবহ এলাকায় আর নেই। জঙ্গলঘেঁষা রাইপুরের ঢেকো, বক্সি, মণ্ডলকুলি, বিক্রমপুরের মতো পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রামগুলির মোড়ে সন্ধ্যা, রাতেও চলে নিশ্চিন্ত আড্ডা। ভোটযুদ্ধে কে, কার চেয়ে এগিয়ে—সেখানে চলছে তারই চুলচেরা বিশ্লেষণ। আলোচনায় থাকছে কুড়মি-ভোটের অঙ্কও।
ভোটের হিসেবে রাইপুর কেন্দ্রে অঙ্কের ওঠাপড়া অবাক করে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিজেপি, তৃণমূলের চেয়ে ৩,৩৫১ ভোটে এগিয়েছিল। বিধানসভায় তবে তৃণমূল এগিয়ে যায় ১৯,২৯৮ ভোটে। অথচ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে রাইপুর কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও সিপিএমের যৌথ ভাবে কেবল ৬,৫৫৪টি ভোট কমেছিল। ‘নোটা’-য় পড়া ভোটও লোকসভার চেয়ে বিধানসভা ভোটে দ্বিগুণ হয়েছিল। তার পরেও বিধানসভায় তৃণমূলের এত বড় ‘লিড’ কী ভাবে, চলেছে চর্চা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, রাজনৈতিক পালাবদলের পরে এই তল্লাটে তৃণমূল শক্ত সংগঠন গড়ে তোলে। তার দৌলতেই এই ফল।
রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো তবে বলছেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে একই দিনে রাইপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সভা হয়। সে দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল উপচে পড়লেও যোগীর সভাস্থল ছিল ফাঁকা। দুই সভার চিত্রই রাইপুরের মানুষের রায় ভোটের আগে জানিয়ে দিয়েছিল।” তাঁর সংযোজন, “এলাকায় শান্তি ফেরানো, প্রত্যন্ত গ্রামে উন্নয়নের জোয়ারে দিদির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। এ বারের নির্বাচনেও তার প্রমাণ মানুষ পাবেন।”
এ বারে ভোট-প্রচারে রাইপুরে বিশেষ নজর দিতে দেখা যাচ্ছে বাঁকুড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারকে। তাঁর বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভাল জমায়েত হচ্ছে। সম্প্রতি রাইপুরে শুভেন্দু অধিকারীর রোড-শোতেও উপচে পড়ে ভিড়। সুভাষ বলছেন, “রাইপুরের মানুষের কাছ থেকে যে ভাবে অভ্যর্থনা পাচ্ছি, অভাবনীয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এলাকার মানুষ আস্থাশীল। তেমন তৃণমূল সরকারের বঞ্চনায় ক্ষোভও রয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক প্রকল্প কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে জঙ্গলমহলে চালু করতে দেয়নি রাজ্য সরকার। রাইপুরের একাংশে পানীয় জলের সমস্যা, গ্রামীণ রাস্তাঘাটের পরিকাঠামোর অভাব, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে দুর্নীতির মতো নানা বিষয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ। এ বারের ভোটে তার প্রভাব পড়বে। বাঁকুড়ার তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, “একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র দিল না। মুখ্যমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে মজুরি দিয়েছেন। আবাস যোজনার টাকাও কেন্দ্র আটকে রেখেছে। আর সুভাষবাবুরা বলছেন, কেন্দ্র উন্নয়ন করেছে! এই মিথ্যা ও বঞ্চনার জবাব রাইপুরের মানুষ দিতে মুখিয়ে রয়েছেন।” এ দিকে, গত লোকসভা নির্বাচন থেকে রাইপুরে জমি হারানো শুরু হতে হতে কার্যত তলানিতে ঠেকেছে সিপিএমের ভোট ব্যাঙ্ক। সিপিএম প্রার্থী নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত বলছেন, “বিজেপি-তৃণমূল দু’টি দলের বিরুদ্ধেই মানুষ ক্ষুব্ধ। রাইপুরে তাদের প্রত্যাখ্যান করে চমক দেবেন মানুষ।”
তবে ভোটে ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে কুড়মি-ভোট, মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে কয়েকটি আসনও তারা জেতে। কুড়মি-ভোট রাইপুরে কম নেই। তার বড় অংশ কুড়মি সমাজের নির্দল প্রার্থী সুরজিৎ সিং কুড়মালির দিকে যেতে পারে, অনুমান অনেকের। তাতে বদলে যেতে পারে ভোট-সমীকরণ। সুরজিৎ বলেন, “কেবল কুড়মি সমাজই নয়, আরও অনেকে আমাদের পাশে রয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy