Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

ভোটের কাজে ডাক দৃষ্টিহীনদের, ক্ষোভ

প্রশাসন সূত্রের খবর, ভোটের আগে বিভিন্ন সরকারি দফতরের তরফে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মী-বিবরণী নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো হয়।

ভোটের দায়িত্ব বাতিলের দাবিতে বাবার সঙ্গে সরকারি দফতরে যাচ্ছেন অনির্বাণ।

ভোটের দায়িত্ব বাতিলের দাবিতে বাবার সঙ্গে সরকারি দফতরে যাচ্ছেন অনির্বাণ। ছবি: তাপস ঘোষ।

সুদীপ দাস
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩৩
Share: Save:

চুঁচুড়ার পার্বতী রায় গলির বাসিন্দা অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় দৃষ্টিহীন। তিনি পোলবার কাশ্বাড়া ইয়াসিন মণ্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। চোখে দৃষ্টি না থাকায় ভোটের ডিউটিতে তাঁর ডাক পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর কোনও না কোনও ভোটে কাজের জন্য তাঁর ডাক আসে! অনির্বাণ চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ২০০৬ সালে।

হুগলি স্টেশনের কাছে থাকেন রাজ্য সেচ দফতরে কর্মরত সুহাস ভট্টাচার্যের বছর দশেক আগে ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসা চলছে। ভোটে ডিউটির ডাক আসে তাঁর কাছেও!

যদিও ভোটের কাজে অনির্বাণ, সুহাসেরা অপারগ। অগত্যা, একটু-দু’টি প্রশিক্ষণ নেওয়া পরে ডিউটি বাতিলের আবেদন জানাতে হয়। এরপরে সরকারি হাসপাতালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে চিকিৎসকের শংসাপত্র তোলা, তা সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেওয়ার পালা। সব মিলিয়ে ভোট এলেই হয়রানির শিকার হওয়াই এখন দস্তুর বলে মনে করেন তাঁরা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ভোটের আগে বিভিন্ন সরকারি দফতরের তরফে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মী-বিবরণী নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো হয়। কমিশনের দেওয়া আবেদনপত্রে তা পাঠাতে হয়। কেউ শারীরিক ভাবে অক্ষম হলে আবেদনপত্রের নির্দিষ্ট জায়গায় তা লিখে দিতে হয়। অনির্বাণ জানান, প্রথম দিকে তিনি ভাবতেন, প্রধান শিক্ষকই হয় তো ওই জায়গাটি পূরণ করতেন না। পরে ভুল ভাঙে। অনির্বাণ বলেন, ‘‘শুধু আমি নই, হুগলিতে আমার চেনা প্রায় ২০ জন দৃষ্টিহীন শিক্ষকের একই হাল।’’ তাঁর হিসেবে, সারা রাজ্যে শতাধিক দৃষ্টিহীন শিক্ষক এ ভাবে হেনস্থার শিকার হন।

কমিশন সূত্রের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট অফিস যে ভাবে তথ্য দেয়, সে ভাবেই বিষয়গুলি কমিশনের কাছে আসে। কার কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, আগে থেকে বোঝা যায় না। সে কারণে এমন নিয়োগপত্র কারও কাছে চলে গেলে তিনি আবেদন করলে নথিপত্র দেখে বা মেডিক্যাল বোর্ডের শংসাপত্রের মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়।

অনির্বাণের বক্তব্য, ‘‘ডিউটি করতে আপত্তি নেই। কিন্তু দৃষ্টিহীন হয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব কী ভাবে পালন করব! ভোট এলেই এত হ্যাপা পোহাতে হয়, ভাবতে পারবেন না! কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা সত্যিই কর্মী-বিবরণী খতিয়ে দেখেন তো!’’

সুহাস বলেন, ‘‘অনেক বার ডিউটি করেছি। কিন্তু ২০১৪ সালে ক্যানসার ধরা পরার পরে বার বার শৌচাগারে যেতে হয়। তাই ভোটের দিন কাজ করতে সমস্যা হয়। প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি!’’

দিন কয়েক আগে হুগলি ব্রাঞ্চ গভর্নমেন্ট স্কুলে ছিল কর্মীদের প্রথম প্রশিক্ষণ। অনির্বাণ এসেছিলেন বাবা চুনিলালের সঙ্গে। চুনিলালের খেদ, ‘‘আমার ছেলেই শুধু দৃষ্টিহীন? যাঁদের ভুলে ওর মতো ছেলেরা ভোটের ডিউটিতে বার বার ডাক পেয়ে হয়রান হয়, তাঁরাও কি দৃষ্টিহীন নন!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy